- বাংলাদেশ
- লাইসেন্স নেই জেনেও রাসেলকে গাড়ি চালাতে দেন হারুন
আদালতে জবানবন্দি
লাইসেন্স নেই জেনেও রাসেলকে গাড়ি চালাতে দেন হারুন

নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈমকে ধাক্কা দেওয়া ডিএসসিসির ময়লাবাহী গাড়িটির মূল চালক মো. হারুন
নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসানকে গাড়ির ধাক্কা দিয়ে হত্যা করা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়িটির মূল চালক মো. হারুন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
তিনি জানিয়েছেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই জেনেও সেদিন পরিচ্ছন্নতাকর্মী রাসেল খানকে গাড়ি চালানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। পরে সেই গাড়ির ধাক্কাতেই ওই শিক্ষার্থী প্রাণ হারান।
মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম শহিদুল ইসলাম তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এর আগে রাসেলও আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
পল্টন থানার ওসি সালাহউদ্দিন মিয়া সমকালকে বলেন, দুর্ঘটনায় দায়ী গাড়িটি সিটি করপোরেশনের গাড়িচালক ইরান মিয়ার নামে বরাদ্দ ছিল। গ্রেপ্তার হারুন কীভাবে তার কাছ থেকে গাড়ি চালানোর দায়িত্ব পেলেন, সেটা সংশ্লিষ্টরা তদন্ত করে দেখবেন। তবে গাড়িটি হারুনই চালাতেন। তিনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ ও আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে সে কথা উল্লেখ করেছেন। সেদিন তিনি গাড়িটি চালানোর জন্য সহকারী রাসেলকে চাবি দিয়েছিলেন।
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, ঘটনার সময় হারুন গাড়িতে ছিলেন না। তবে এই মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় তিনি কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারেন না। লাইসেন্সবিহীন চালকের হাতে গাড়ি তুলে দেওয়াও অপরাধ। তাছাড়া সড়ক পরিবহন আইনের ৯৯ ধারায় ষড়যন্ত্রে সহায়তার একটি বিষয় আছে। তদন্তে তেমন কোনো প্রমাণ পেলে সেটিও যুক্ত করা হবে। এর আগে ২৯ নভেম্বর রাসেল আদালতে জবানবন্দি দেন। তিনিও নিজের অপরাধ স্বীকার করে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। দু'জনের বক্তব্যে ঘটনার ধারাবাহিকতা রয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গাড়িচালক মো. হারুনকে ২৬ নভেম্বর ভোরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরদিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন থানার এসআই আনিছুর রহমান।
তদন্ত কর্মকর্তা জানান, আসামি স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করা হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে র্যাব জানিয়েছিল, হারুন ও রাসেলের কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। দু'জনই অবৈধভাবে গাড়ি চালাতেন। ২০২০ সাল থেকে ময়লাবাহী গাড়িটি নিয়মিত চালিয়ে আসছিলেন হারুন। ঘটনার দিন তিনি অনুপস্থিত থাকায় রাসেল গাড়ি চালান।
২৪ নভেম্বর রাজধানীর গুলিস্তানে সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারান নটর ডেম কলেজের মানবিক বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র নাঈম। তিনি পরিবারের সঙ্গে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের জাউলাহাটি চৌরাস্তা এলাকায় থাকতেন। তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক শাহ আলম দেওয়ান নীলক্ষেতে বইয়ের ব্যবসা করেন। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে পল্টন থানায় মামলা করেন।
ঘটনার পর ২৫ নভেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জানায়, অবৈধভাবে গাড়ি বরাদ্দ নিয়ে তা চালানোয় পরিচ্ছন্নতাকর্মী হারুন মিয়া এবং এ কাজে সহযোগিতা করায় আরেক পরিচ্ছন্নতাকর্মী আবদুর রাজ্জাককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সেইসঙ্গে বরাদ্দ গাড়ি নিজে না চালিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে অন্যকে চালাতে দেওয়ায় মূল চালক ইরান মিয়ার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু ও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এদিকে নাঈমের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ীদের বিচার চেয়ে ঘটনার দিন থেকেই রাজধানীতে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
মন্তব্য করুন