বুধবার থেকে ফের ৪৮ ঘণ্টা অবরোধ
বিস্ফোরণ আগুন ভাঙচুর অব্যাহত পুড়ল ১১ গাড়ি
ফেনী শহরের শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কের গ্রিন টাওয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দুটি সিএনজি অটোরিকশায় আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩ | ০১:১০ | আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩ | ০১:১২
সরকারের পদত্যাগসহ এক দফা দাবিতে ফের দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আজ মঙ্গলবার এক দিনের বিরতি দিয়ে আগামীকাল বুধবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার একই সময় পর্যন্ত এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে দলটি। মাঝখানে শুক্র ও শনিবার বিরতি দিয়ে আগামী রোববার বিএনপি সারাদেশে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে গুম, খুন, গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার বিএনপি নেতাকর্মী ও নাগরিকদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকাসহ প্রতিটি জেলা সদরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল সোমবার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ কর্মসূচি শেষে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
একই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণঅধিকার পরিষদ, বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য, গণফোরাম, পিপলস পার্টিসহ সমমনা দল ও জোট। বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে না থাকলেও জামায়াতে ইসলামী একই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকে বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো এখন পর্যন্ত দুই দফায় সারাদেশে চার দিন হরতাল এবং ৯ দফায় পর্যায়ক্রমে ১৮ দিন অবরোধ পালন করেছে।
গতকাল ছিল বিএনপি ও সমমনাদের ডাকা নবম দফা অবরোধের শেষ দিন। এদিন উত্তরায় রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে মিছিল ও পিকেটিং হয়েছে। এ ছাড়া দিনের বিভিন্ন সময়ে শান্তিনগর, মালিবাগ মোড়, ফকিরাপুল, পল্টন, পান্থপথ, বিজয়নগর, খিলগাঁও, আসাদগেট, তালতলায় বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। প্রেস ক্লাব, কাকরাইল ও বিজয়নগর এলাকায় মিছিল করে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি ও ১২ দলীয় জোট। বিজয়নগরে বিজয়-৭১ চত্বরে কর্মসূচি পালন করে এবি পার্টি। এ ছাড়া এদিন বিক্ষোভ মিছিল বের করে গণফোরাম (মন্টু), গণঅধিকার পরিষদের দুই অংশ। মিরপুর-১, বাড্ডা-রামপুরা, শেওড়াপাড়া, মতিঝিল, সবুজবাগ, লালবাগ, হাজারীবাগ, ডেমরা, শনির আখড়াসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির দাবি, গতকাল দুপুর পর্যন্ত তাদের সাত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গতকাল দুপুরে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে তানজিল পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। রাজধানীর বাইরেও বিভিন্ন জেলায় এদিন অবরোধের সমর্থনে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো মিছিল করেছে। আগের রাত থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত আগুন দেওয়া হয়েছে ১০ গাড়িতে। ঘটেছে ককটেল বিস্ফোরণ, ভাঙচুরের ঘটনাও। ব্যুরো, নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা জানান, গতকাল ভোরে গাজীপুরের কালিয়াকৈর চন্দ্রার ত্রিমোড় এলাকায় খড়ভর্তি ট্রাক ও জিরানী বাজার এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। আগের রাতে দিনাজপুরে পৃথক ঘটনায় একটি ট্রাকে ও তিনটি ধানের গাদায় আগুন দেওয়া হয়। একই রাতে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ পাঞ্জাবি লেনের এ কে খান এলাকা, নাটোরের হরিশপুর এলাকায় তিনটি বাস এবং সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার নবগ্রাম এলাকায় বিএনপির মিছিল থেকে আগুন দেওয়া হয় একটি কাভার্ডভ্যানে। সকালে বগুড়ার বনানী দ্বিতীয় তলা বাইপাস এলাকায় একটি ট্রাকে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
রোববার রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে পুঁতে রাখা ককটেল বিস্ফোরণে সাজিদ আলী নামে এক শিশু আহত হয়। গতকাল রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনেসহ কয়েক জায়গায় অন্তত চারটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। ফেনীতে গতকাল বিভিন্ন এলাকায় ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত পিকেটাররা অন্তত শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর ও দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা পুড়িয়ে দেয়। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ জেলার প্রবেশ পথসহ অলিগলিতে অভিযান চালিয়ে পেট্রোল বোমা বানানোর সরঞ্জামসহ ছাত্রদল ও যুবদলের দুই নেতাকে আটক করে বলে দাবি করেছে। রোববার রাতে ময়মনসিংহ নগরী থেকেও পেট্রোল বোমাসহ ছাত্রদলের তিন নেতাকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয় বলে দাবি পুলিশের। এ ছাড়া নাশকতার অভিযোগে বিভিন্ন জেলায় বিএনপি, জামায়াতের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার অব্যাহত আছে। চট্টগ্রামে গতকাল পাঁচ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি বিএনপির।
ভাড়াটে লোক এনে আগুন দেওয়ার চেষ্টা
ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, যারা অবরোধ ডেকেছে, তাদের কেউ মাঠে থাকে না। ভাড়া করে কিছু লোক এনে আগুন লাগানোর চেষ্টা করে। গোয়েন্দা পুলিশ কাজ করছে। নাশকতাকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
গতকাল রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। নির্বাচন সামনে রেখে বড় কোনো নাশকতার পরিকল্পনার খবর আছে কিনা– এমন প্রশ্নে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা পুলিশ নির্বাচন কমিশনের দিকনির্দেশনায় কাজ করছে। আমরা মনে করি, সুষ্ঠু নির্বাচন যারা বাধাগ্রস্ত করবে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করবে, বিচ্ছিন্ন কিছু স্থানে আগুন লাগিয়ে মানুষকে আতঙ্কিত করার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ মাঠে আছে।’