- বাংলাদেশ
- উত্তপ্ত কুয়েট, দ্বিতীয় দিনের মতো ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন শিক্ষকদের
উত্তপ্ত কুয়েট, দ্বিতীয় দিনের মতো ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন শিক্ষকদের

ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের লাঞ্ছনা ও অপদস্থের শিকার হওয়ার পর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস।
বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো ক্লাস-পরীক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জন করেছেন শিক্ষকরা। শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে অবস্থান কর্মসূচি, কালোব্যাজ ধারণ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়েছে। পাল্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে সিন্ডিকেটের জরুরি সভা আহ্বান করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন কুয়েটে গিয়ে দেখা গেছে, ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। শিক্ষার্থীদের কোনো কর্মসূচি এদিন ছিল না। কিন্তু শিক্ষক এবং ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। কুয়েট শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করা হয়। এ সময় শিক্ষকরা কালোব্যাজ ধারণ করেন। তারা সেখানে বেলা সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন।
শিক্ষকদের এই কর্মসূচি চলাকালে সকাল সোয়া দশটার দিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের সামনে দিয়ে প্রশাসনিক ভবনের ভেতরের ফাঁকা অংশে গিয়ে অবস্থান শুরু করেন। দুপুর দুইটা পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান নেন।
অবস্থান কর্মসূচি শেষে বেলা সাড়ে ১১টায় শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য দুর্বার বাংলা চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের শিক্ষকরা বলেন, ড. সেলিম হোসেনের মৃত্যু কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, তাকে মানসিকভাবে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সমাবেশে সহকারী অধ্যাপক আলমগীর হোসেন মঙ্গলবারের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ঘটনার বিবরণ দেন।
সমাবেশে অধ্যাপক ড. পিন্টু চন্দ্র শীল বলেন, আমরা শিক্ষকরা এখন সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তিনি সবাইকে সতর্কভাবে চলাফেরার পরামর্শ দেন।
সমাবেশে অধ্যাপক ড. সাইফুর রহমান ক্যাম্পাসের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি জানান।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. প্রতীক চন্দ্র বিশ্বাস সমকালকে বলেন, ড. সেলিমের মৃত্যুর ঘটনার জন্য দায়ী ছাত্রদের স্থায়ীভাবে ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কার ও শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এছাড়া আগামী রোববার বিকালে শোক সভা করা হবে।
শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক তামান্না কামাল এক প্রশ্নের জবাবে জানান, এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ মামলা করবেন কিনা সে বিষয়ে তারা পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলবেন। এছাড়া তারা নিজেরাও আইনগত প্রক্রিয়া নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন।
দুপুর দুইটার দিকে কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান প্রশাসনিক ভবনের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, তারা তাদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে সেলিম স্যারের সঙ্গে কথা বলেন। তারা কোনো দুর্ব্যবহার বা মানসিক চাপ দেননি। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। শিক্ষক সমিতির আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি পক্ষ ষড়যন্ত্র করছে বলে দাবি করেন তিনি। এছাড়া ওই পক্ষটি ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে চায়।
কুয়েট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ড. সেলিমের মৃত্যুর পর মঙ্গলবার ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার দুপুরে তদন্ত কমিটির প্রধান মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আরিফুল ইসলাম মৌখিকভাবে তদন্ত কমিটির দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করেন। এছাড়া তদন্ত কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. কল্যাণ কুমার হালদার লিখিতভাবে তদন্ত কমিটিতে থাকতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য বিকাল চারটায় জরুরি সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করেন।
তদন্ত কমিটি থেকে পদত্যাগ করা দুই শিক্ষককে বারবার ফোন করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান কুয়েটের ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও লালন শাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেন। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টায় ক্যাম্পাসের ভেতরে শিক্ষকের গতিরোধ করেন ছাত্রলীগ নেতারা। তারা শিক্ষককের সঙ্গে বিতর্ক করতে থাকেন এবং তড়িৎ প্রকৌশল ভবনে শিক্ষকের ব্যক্তিগত কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে প্রায় আধা ঘণ্টা ড. সেলিম হোসেনের সঙ্গে অবস্থান করেন ছাত্রলীগ নেতারা। এরপর বাড়ি ফিরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন ড. সেলিম হোসেন।
মন্তব্য করুন