মালয়েশিয়ায় সর্বনিম্ন মজুরি এক হাজার ২০০ রিঙ্গিত। যার বাংলাদেশের ২৪ হাজার ৪২০ টাকার সমপরিমাণ। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ সমকালকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে কর্মী যেতে পারলে, তাদের জন্য মালয়েশিয়ার মজুরি কাঠামো প্রযোজ্য হবে। তাই বেতন এক হাজার ২০০ রিঙ্গিতের কম হবে না।

তিন বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য খুলতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ দিতে মালয়েশিয়ার সরকার দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়কে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইয়ের অনুমতি দিয়েছে। 

শুক্রবার মালয়েশিয়ার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমতি দেওয়া হয় বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে দেশটির মানব সম্পদ মন্ত্রণালয় জানায়।

প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ সমকালকে বলেন, এখনও মালয়েশিয়ার কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাননি। চিঠি পাওয়ার পর বলতে পারবেন- কবে সমঝোতা স্মারক সই হবে। তবে তিনি আশাবাদী এ মাসেই এমওইউ হতে পারে।

নানা অভিযোগ তুলে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া। পরের পাঁচ বছরে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীদের কর্মসংস্থান একেবারেই সীমিত ছিল। বিএমইটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে দেশটিতে ৭০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী যান। বহুল আলোচিত জিটুজি প্লাস চুক্তি সইয়ের পর, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে প্রায় পৌনে এক লাখ কর্মীর কর্মসংস্থান হয় দেশটিতে। মালয়েশিয়া সরকারের পছন্দ করা বাংলাদেশের ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি এই কর্মীদের পাঠায়। এই ১০ এজেন্সি সিন্ডিকেট নামে পরিচিতি পেয়েছিল।

২০১৮ সালে মালয়েশিয়ার ক্ষমতায় ফেরেন মাহথির মুহাম্মদ। এরপর নাজিব রাজাকের সরকারের আমলে সই হওয়া জিটুজি প্লাসে কর্মী নিয়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে মালয়েশিয়া। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ রয়েছে দেশটির দুয়ার।

দেশে লাইসেন্সধারী রিক্রুটিং এজেন্সির সংখ্যা প্রায় এক হাজার ৮০০টি। এর মধ্যে এক হাজার ৩০০ জনশক্তি ব্যবসায় রয়েছে। বাকিদের লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল হয়েছে। এবারও নির্দিষ্ট সংখ্যক এজেন্সি কর্মী পাঠাবে কিনা- জানতে চাইলে ইমরান আহমদ সমকালকে বলেন, তিনি আশা করছেন সব এজেন্সিই কর্মী পাঠানোর সুযোগ পাবে। তবে এমওইউ সই হলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। মালয়েশিয়া যেতে কর্মীপ্রতি কত খরচ হবে- তাও ঠিক হবে এমওইউয়ে।

এ বছরের ফেব্রুয়ারিতেও কর্মী নিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের আলোচনা হয়েছিল। তখন মালয়েশিয়ার প্রস্তাব ছিল সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৫০টি এজেন্সি কর্মী পাঠাবে। বাংলাদেশের প্রস্তাব ছিল কমপক্ষে আড়াই থেকে তিনশ' এজেন্সিকে যুক্ত করার।

অতীতে বাংলাদেশ থেকে খাতভিত্তিক কর্মী নিয়েছে মালয়েশিয়া। কৃষি ও প্লান্টেশন খাতে কর্মীদের কম মজুরিতে মানবেতর পরিবেশে বেশি কাজ করানোর অভিযোগ রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ সংক্রান্ত প্রমাণও দিয়েছে। ইমরান আহমদ বলেন, এবার মালয়েশিয়ার সব খাতই বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে।

আগে মালয়েশিয়ায় এফডব্লিউসিএমএস পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগ করা হতো। এর নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদা অনুযায়ী কর্মী পাঠাত বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। ইমরান আহমদ বলেন, আগামীতে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোই কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র আনবে। সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না। কর্মীরা যেনো প্রতারিত বা নির্যাতিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে সরকার নরজদারি করবে।