- বাংলাদেশ
- দেশে তথ্যের অন্ধত্ব চলছে: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
দেশে তথ্যের অন্ধত্ব চলছে: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

ড. দ্রেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দ্রেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, দেশে তথ্যের অন্ধত্ব বিরাজ করছে। তথ্য যে সহায়ক শক্তি হতে পারে, তা সরকার বা সংশ্লিষ্টরা উপলদ্ধি করছেন না। স্বল্প সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারে তথ্যের কার্যকারিতার আধুনিক মনোভাব দেখা যাচ্ছে না, যা উদার বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এমনকি বাংলাদেশের উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষা অর্থাৎ করোনা অতিমারির প্রভাব থেকে পুনরুদ্ধার, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির লক্ষ্য অর্জন এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে রূপান্তরের লক্ষ্যের সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
মঙ্গলবার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা উন্নয়নে আর্থিক তথ্য ও তথ্য অধিকারের ব্যবহার নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) এ সদস্য এ কথা বলেন। এশিয়া ফাউন্ডেশন, সিপিডি ও অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) যৌথভাবে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। রাজধানীর পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।
ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সিরাজুল ইসলাম কাদির।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পথে রয়েছে। এই উত্তরণের পরে দেশ কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে সাহায্য পেতে হলে এ ধরনের দেশের ট্রিগার ইন্ডিকেটর থাকতে হবে। ফলে এলডিসি থেকে উত্তরণ হওয়ার পরিস্থিতি বাংলাদেশের আর্থিক তথ্যের চাহিদা শতগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এ বিষয়টি মৌখিকভাবে স্বীকার করলেও কার্যকরণে তা দেখা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পরে প্রয়োজনীয় তথ্য সময়মত এবং পরিপূর্ণভাবে সরবরাহ করতে না পারলে সহযোগিতা মিলবে না। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।
তিনি আরও বলেন, গবেষকরা সময়মত হালনাগাদ তথ্য পাচ্ছেন না। জনপ্রতিনিধিরা তথ্যেও ঘাটতিতে থাকছেন। যে কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতের কার্যক্রমে গুণগত মান মূল্যায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য তথ্যের চাহিদা সৃষ্টি করতে হবে। এক্ষেত্রে গবেষক, জনপ্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীদের ভূমিকা রয়েছে। এ শ্রেণিই তথ্যের অন্ধত্ব থেকে দেশকে দৃষ্টি ফিরিয়ে দিতে পারে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, বাজেটের আয়, ব্যয় ও ঘাটতি অর্থায়নের তথ্য সরকারি দপ্তরগুলো থেকে যেভাবে পাওয়ার কথা, সেইভাবে পাওয়া যায় না। ফলে ওপেন বাজেট ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান দিনদিন পেছনে পড়ছে। ২০১৫ সালে এ সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ৫৬ থাকলেও ২০১৯ এ তা কমে ৩৬ হয়েছে। সর্বশেষ সামগ্রিকভাবে এই স্কোর দাঁড়িয়েছে ৪২। এককথায় তথ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান খারাপ হয়েছে। বাজেটে কোত্থেকে কত আয় হচ্ছে, কোথায় কত ব্যয় হচ্ছে, কাদের জন্য কত ব্যয় হচ্ছে, এসব তথ্য অর্থ বিভাগ থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। তথ্যের বিভ্রাটও আছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যে রাজস্ব আয় দেখাচ্ছে, অর্থবিভাগ দেখাচ্ছে তার চেয়ে অনেক কম। আগের তুলনায় এ ব্যবধান অনেক বেড়েছে।
তিনি বলেন, সরকার কর ছাড়ের মাধ্যমে কত প্রণোদনা দিচ্ছে, তার কোনো হিসাব নেই। কিন্তু অন্যান্য দেশে বাজেটের আগেই এ হিসাব করা হয়। সামাজিক নিরাপত্তার প্রকৃত খরচ কত, তাও সরকার প্রকাশ করে না। কিন্তু সরকার যা ব্যয় করে, তার পুরোটাই জনগণের অর্থ। জনগণের অর্থেও হিসাব আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে থাকা উচিত।
সিপিডি দেশে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা উন্নয়নে আর্থিক তথ্য ও তথ্য অধিকারের ব্যবহার নিয়ে একটি গবেষণা করছে। গবেষক, নাগরিক সমাজ, জনপ্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হবে।
মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য পেতে কী ধরনের প্রতিবন্ধকতায় পড়েন, তাও তুলে ধরেন উপস্থিত সাংবাদিকরা।
মন্তব্য করুন