- বাংলাদেশ
- গ্রামের সঙ্গে ঢাকার তাপমাত্রার পার্থক্য দ্বিগুণ
গ্রামের সঙ্গে ঢাকার তাপমাত্রার পার্থক্য দ্বিগুণ

রাজধানীর সড়কে আগুন পোহাচ্ছেন লাবিব নামের এক তরুণ- সমকাল
দেশের উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র শীত। সোমবার শৈত্যপ্রবাহ বইছিল ১০ জেলায়; মঙ্গলবার তা নেমে এসেছে তিন জেলায়। রাজধানী ঢাকায়ও শীতের তীব্রতা কম নয়। বিশেষ করে ভোরে ও সন্ধ্যায় শীত অনুভূত হচ্ছে বেশি। কিন্তু তারপরও গ্রামের সঙ্গে ঢাকার তাপমাত্রার পার্থক্য প্রায় দ্বিগুণ। ঢাকার তাপমাত্রা এখনো ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতেও ঢাকায় তাপমাত্রা বেশি হওয়ার মূল কারণ আবহাওয়া বা জলবায়ুর পরিবর্তন নয়- বরং অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও সবুজ ভূমি এবং জলাশয় কমে যাওয়া। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত দুদিনে সারাদেশে যে তাপমাত্রা, তা গত ৩০ বছরের একই সময়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রার গড়ের চেয়ে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। গত দুদিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রা রাতে গড়ে ৯ থেকে ১৫ ডিগ্রি এবং দিনের বেলায় ২২ থেকে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মঙ্গলবার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন ঢাকায় সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ১৫ ডিগ্রি এবং ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমনকি ঢাকার কাছের জেলাগুলোর সঙ্গেও রাজধানীর তাপমাত্রার পার্থক্য অনেক। টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।
পাঁচ বছরে মাত্র একটি শৈত্যপ্রবাহ: চলতি বছর প্রকাশিত ঢাকা শহরের জলবায়ু ও আবহাওয়াসংক্রান্ত বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার গড় তাপমাত্রা দেশের অন্য যেকোনো গ্রামীণ এলাকার চেয়ে পৌনে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, রাজধানীতে ঘনবসতি, প্রয়োজনের তুলনায় কম গাছগাছালি এবং যান্ত্রিক যানবাহনের কার্বন ডাই অপাইড পরিবেশকে উষ্ণ করছে। এ কারণে দেশের অন্যান্য স্থানের চেয়ে ঢাকায় উষ্ণতা সব সময়ই বেশি থাকে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় শেষ কনকনে শীতের দেখা মিলেছিল ২০১৩ সালে। ওই বছরের ৯ জানুয়ারি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি। এরপর ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি সারাদেশে হাড়কাঁপানো শীত পড়লেও ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে শীতকালে, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে সেটিকে শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। সে হিসাবে, ২০১৮ সালের পর ঢাকায় আর একবারও শৈত্যপ্রবাহ আসেনি। দেশের বেশির ভাগ এলাকায় শীতকালে ৬ থেকে ১০টি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেলেও গত পাঁচ বছরে ঢাকায় মাত্র একবার শৈত্যপ্রবাহ বয়েছে। শীতকালে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ থেকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের মনিটরিংয়ে দেখা যায়, গত ১০০ বছরে দেশের তাপমাত্রা ০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বাড়লেও ঢাকায় বেড়েছে ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।
ঢাকার তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ মূলত মানবসৃষ্ট: পরিবেশগত বিপর্যয়ের চেয়ে বরং মানবসৃষ্ট কারণগুলোই ঢাকার তাপমাত্রাকে বেশি করে তোলার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে-এমন অভিমত দিয়েছেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার। তিনি বলেন, অত্যধিক কংক্রিটের স্থাপনা এবং সবুজায়ন ও জলাশয় কম থাকার বিষয়টি তো আছেই; এর আরেকটি আরেকটি বড় কারণ, ঢাকার রাস্তায় ১৫ লাখেরও বেশি গাড়ি চলাচল করে। এসব গাড়ি গ্রিনহাউজ গ্যাসের পরিমাণ বাড়িয়ে চলেছে। এছাড়া ঢাকায় বাসাবাড়ি ও অফিসে কয়েক লাখ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এসি চলে। দু-এক টনের একটি এসি একশ বর্গফুট আবদ্ধ এলাকাকে ঠান্ডা করার বিনিময়ে বাইরের অন্তত ৪০০ থেকে ৫০০ বর্গফুট খোলা জায়গার উষ্ণতা বাড়িয়ে তুলছে।
বৃষ্টির মতো কুয়াশা উত্তরে: তবে ঢাকায় শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও উত্তরের জেলায় শীতের তীব্রতা এতটাই বেশি যে রাতের বেলায় আকাশ থেকে ঝরছে বৃষ্টির মতো কুয়াশা। দিনের বেলায়ও কুয়াশার রেশ কাটছে না। এর সঙ্গে উত্তর দিক থেকে আসছে কনকনে ঠান্ডা বাতাস। চুয়াডাঙ্গায় শীতে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ। তীব্র ঠান্ডায় দেখা দিচ্ছে শীতজনিত নানা রোগ। গত তিন দিনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫৬ শিশু। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন ৮৩ জন রোগী। এরমধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ১০ জন।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মলিল্গক বলেন, বুধবার থেকে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়বে, কিন্তু শীতল বাতাসের কারণে দেশজুড়ে শীতের অনুভূতি বেশিই থাকবে।
মন্তব্য করুন