
একে একে খসে পড়ছে গণমাধ্যম আকাশের উজ্জ্বল সব তারা। তৈরি হচ্ছে শূন্যতা। প্রথিতযশা সাংবাদিকদের অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্ব গণমাধ্যমকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারত বহুদূর। সেই আশাজাগানিয়া সম্ভাবনার টুঁটি চেপে ধরেছে মহামারি করোনা।
সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা জেনেভাভিত্তিক সংগঠন প্রেস এমব্লেম ক্যাম্পেইন (পিইসি) জানিয়েছে, করোনায় সাংবাদিক মৃত্যুর দিক থেকে ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
'করোনাভাইরাস মহামারির ছোবলে আমরা অনেক সৎ, সাহসী ও পেশাদার সাংবাদিককে হারিয়েছি। তাদের চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা হয়তো পূরণ হওয়ার নয়। বর্তমান সময়ে পেশাদার সাংবাদিকের বড়ই অভাব।' গতকাল রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে প্রয়াত সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে এভাবেই বলছিলেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম।
মাঠপর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে যেমন সংবাদকর্মীরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, একইভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন সংবাদ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতরাও। ২০২০ সালের মতো এই বছরও ছিল গণমাধ্যম কর্মীদের হারানো বছর। সর্বশেষ গত শনিবার সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদসহ দেশে করোনায় আক্রান্ত ও করোনা-পরবর্তী জটিলতায় এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৬১ জন সাংবাদিক। আর করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও ১৬ জন। মোট আক্রান্ত হয়েছন এক হাজার ৫০০, সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৪৫০ জন। সাংবাদিকদের ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ 'আমাদের গণমাধ্যম, আমাদের অধিকার' এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে খোঁজ নিয়ে একই তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানান এই গ্রুপের প্রধান সমন্বয়ক ও নিউএজ পত্রিকার সাংবাদিক আহম্মদ ফয়েজ।
বিশিষ্টজন বলছেন, সাংবাদিকতায় যারা ছিলেন মহিরুহ, তাদের একের পর এক মৃত্যুতে দেশের গণমাধ্যমে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। বিশিষ্ট সাংবাদিকের প্রয়াণে খসে পড়ছে সম্ভাবনার দেয়ালের পলেস্তারা। তাদের অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্ব দিয়ে গণমাধ্যমকে এগিয়ে নিতে পারতেন বহুদূর। তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ। একসঙ্গে এত গুণী মানুষের প্রস্থান বিভিন্ন ক্ষেত্রে শূন্যতার সৃষ্টি করবে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, 'প্রতিটি মৃত্যু আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। জাতীয় জীবনে তারা যে অবদান রাখতেন, তা থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। যারা চলে গেছেন, তাদের অবদান কোনোদিনও ভোলার নয়। তাদের স্মৃতি আমাদের হৃদয়ে চিরদিন বেঁচে থাকবে।'
বিশিষ্ট সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, 'যারা চলে গেছেন, তাদের হারিয়ে গণমাধ্যম সেক্টরের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।'
যাদের হারিয়েছি: ২০২০ সালের ২৮ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম সময়ের আলোর নগর সম্পাদক ও প্রধান প্রতিবেদক হুমায়ুন কবির খোকন মারা যান। এরপর মৃত্যু থেমে থাকেনি। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়াদের তালিকায় আছেন প্রবীণ সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি হাসান শাহরিয়ার, সাপ্তাহিক আজকের সূর্যোদয় পত্রিকার সম্পাদক খন্দকার মোজাম্মেল হোসেন (গেদু চাচা), প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান, এনটিভির যুগ্ম প্রধান বার্তা সম্পাদক আবদুস শহীদ, এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান মোস্তফা কামাল সৈয়দ, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের বার্তা সম্পাদক আব্দুল্লাহ এম হাসান, ইনকিলাবের সাবেক চিফ রিপোর্টার প্রবীণ সাংবাদিক মো. নূর উদ্দিন ভূঁইয়া, প্রবীণ সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ শাজাহান, বার্তা সংস্থা বাসসের সাবেক সিনিয়র সাব-এডিটর মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস (রুহুল কুদ্দুস মনি), ইনকিলাবের সিনিয়র রিপোর্টার মো. আব্দুর রহিম, নয়া দিগন্তের সাবেক অতিরিক্ত বার্তা সম্পাদক হুমায়ুন সাদেক চৌধুরীসহ অনেক প্রথিতযশা সাংবাদিক।
করোনায় আক্রান্ত, করোনা-পরবর্তী জটিলতা ও করোনা উপসর্গে গতকাল রোববার পর্যন্ত আরও যারা মারা গেছেন তারা হলেন শেখ বারিউজ্জামান, আব্দুল মোনায়েম খান, মোজাম্মেল হক, গোলাম মোস্তফা, বেলাল হোসেন, সাইদুজ্জামান, খন্দকার ইকরামুল হক, আহসান হাবীব, এম ওমর আলী, হাফিজুর রহমান, রেবেকা ইয়াসমীন, শ্যামল বিশ্বাস, আবদুল আলীম হিমু, আমানুল্লাহ মাসুদ হাসান, আজিজ আহমদ সেলিম, এইউএম ফখরুদ্দিন, ফিরোজা মান্না, হান্নান খান, সুকান্ত সেন, খোন্দকার আতাউল হক, আসলাম হোসেন, আফজাল মোহাম্মদ, জগদীশ চন্দ্র ঘোষ, মো. রোমান শাহ আলম, রিফাত সুলতানা, শফিউজ্জামান খান লোদী, নজরুল ইসলাম বকসী, শহীদুজ্জামান খান, সদরুল কাদির শাওন, সৈয়দ অয়ন, মুশফিকুর রহমান ঝান্ডা, আব্দুর রাজ্জাক, মামুন হোসেন, আবুল মনসুর চৌধুরী, আরিফুল ইসলাম ডালিম, দিদারুল আলম, আবু জাফর সাবু, অরুন বসু, মাহমুদুল হাকিম অপু, আসলাম রহমান, আলোকচিত্রী মিজানুর রহমান খান, ওয়াসিউর রহমান রতন, লিটন দাস, সুমন মাহমুদ, আবুল হাসনাত, তবিবুর রহমান মাসুম, নূরুল করিম মজুমদার, মহসিন হোসেন, ওয়াদুদুর রহমান পান্না, তোফাজ্জল হোসেন, মাহমুদা নাসরিন ও সামসুল আলম দিপ্তী।
মন্তব্য করুন