বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইরোলজি বিভাগের এক গবেষণা বলছে, দেশে সমকামী পুরুষ ও ট্রান্সজেন্ডার (তৃতীয় লিঙ্গ) জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমণের হার বাড়ছে। 

২০১৭ সালে পুরুষ সমকামীদের এইচআইভিতে আক্রান্ত হওয়ার হার ছিল শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ১ শতাংশ। একই সঙ্গে ট্রান্সজেন্ডারদের মধ্যে ২০১৭ সালে এইচআইভি আক্রান্তের হার ছিল শুন্য দশমিক ৯ শতাংশ। ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ২ শতাংশে। 

সোমবার বিএসএমএমইউয়ের এ ব্লক মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এ গবেষণার ফল প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ১২ জেলায় নারী যৌনকর্মী, পুরুষ সমকামী, ট্রান্সজেন্ডার এবং ইনজেকশনের মাধ্যমে শিরায় মাদক গ্রহণকারী- এই চার শ্রেণির ৯ হাজার মানুষের ওপর গবেষণা চালানো হয়। তাদের মধ্যে ইনজেকশনের মাধ্যমে শিরায় মাদক নেওয়া জনগোষ্ঠী ৩ হাজার ৮০ জন, নারী যৌনকর্মী ৩ হাজার ১১ জন, পুরুষ সমকামী ২ হাজার ৭৮ জন ও ট্রান্সজেন্ডার ১ হাজার ৭২ জন। তাদের বয়সসীমা ১৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। এই চার জনগোষ্ঠীর মধ্যে আগের তুলনায় সক্রিয় সিফিলিস বেড়েছে। গত ২০১৭ সালে এ হার ৪ দশমিক ৮ শতাংশ থাকলেও ২০২০ সালে তা বেড়ে ১১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবে নারী যৌনকর্মী ও শিরায় মাদক গ্রহণকারীদের মধ্যে এইচআইভি আক্রান্তের হার কমেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

গবেষক দলের প্রধান ছিলেন বিএসএমএমইউয়ের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সি। তিনি বলেন, 'আগের গবেষণায় দেখেছি, ইনজেকশনের মাধ্যমে শিরায় মাদক গ্রহণকারীদের মধ্যে এইচআইভিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি ছিল। তবে এই জরিপে বিপরীত প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। এইচআইভি ছাড়াও হেপাটাইটিস-বি ও হেপাটাইটিস-সি রোগের ওপরেও জরিপ করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, ইনজেকশনের মাধ্যমে রক্তের শিরায় মাদক গ্রহণকারীদের মধ্যে এখনও হেপাটাইটিস-বি ও হেপাটাইটিস-সি ভাইরাস বেশি লক্ষ্য করা গেছে।' এইচআইভি ভাইরাস রুখতে চলমান কর্মসূচি আরও শক্তিশালী করার পরামর্শ দেন এই গবেষক।

অনুষ্ঠানে বিএসএমএমইউয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, 'শিরায় মাদক গ্রহণকারী, নারী যৌনকর্মী, সমকামী অথবা পুরুষ যৌনকর্মী এবং ট্রান্সজেন্ডার এই চার ধরনের জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি/এইডসের ঝুঁকি বা যারা আক্রান্ত হচ্ছে তাদের মধ্যে এই রোগ সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। এটি নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে। স্বাভাবিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই রোগ যাতে না ছড়ায়, সেদিকে এখন থেকে নজর দিতে হবে।'