ঢাকা শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

বিমানে উড়ে এসে ইয়াবার কারবার

বিমানে উড়ে এসে ইয়াবার কারবার

হাবিবা আক্তার।

ইন্দ্রজিৎ সরকার

প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ | ০০:১৩

প্রতি সপ্তাহেই একবার ঢাকায় আসেন ১৯ বছরের হাবিবা আক্তার। বিমানে উড়ে আসেন; কাজ সেরে আবার কক্সবাজারে ফিরে যান। এটুকু শুনে তাঁকে ব্যস্ত ব্যবসায়ী বলে মনে হতেই পারে। আসলে তিনি ইয়াবার কারবার করেন। প্রতি সপ্তাহে তিন থেকে পাঁচ হাজার পিস ইয়াবার চালান ঢাকায় পৌঁছে দেন। প্রতি হাজার ইয়াবার জন্য তিনি পান ১০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে তাঁর মাসিক আয় লাখ টাকার বেশি।

সম্প্রতি এমন একটি চালান সরবরাহ করতে এসে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় ধরা পড়েন হাবিবা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) ওই অভিযানে তাঁর কাছে তিন হাজার পিস ইয়াবা পাওয়া যায়। পরে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এ কারবার তিনি বেশ কিছুদিন ধরেই চালিয়ে আসছিলেন। সবশেষ গত ডিসেম্বরে তিনি ৩ হাজার ৮০০ পিস ইয়াবার চালান পৌঁছে দিয়ে নির্বিঘ্নে ফিরে গিয়েছিলেন।

ডিএনসি ঢাকা মহানগর উত্তরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান সমকালকে বলেন, কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হাজমপাড়ার বাসিন্দা হাবিবা আক্তার। তিনি টেকনাফকেন্দ্রিক ইয়াবা কারবারিদের নির্ভরযোগ্য বাহক হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। অর্থাৎ, টাকার বিনিময়ে টেকনাফ থেকে ইয়াবা এনে ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন মাদক কারবারির কাছে পৌঁছে দিতেন।

ডিএনসি সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে ধুলা দিতে মাদক কারবারিরা সড়কপথের বদলে আকাশপথ ব্যবহার করে আসছিল। এ ক্ষেত্রে মূল কারবারিরাই বিমান টিকিটের খরচ বহন করেন। এ ছাড়া ইয়াবা বহন বাবদ টাকাও তারাই দেন। ফলে ওই অঞ্চলের অনেকে সহজেই এ কাজে রাজি হয়ে যান। আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে সাধারণত বাহকরাই ধরা পড়েন। তাদের কাছ থেকে মূল কারবারিদের বিষয়ে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না। কারণ, তারা কৌশলে আড়াল থেকেই কলকাঠি নাড়েন। তাই তারা থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে।

তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, বছরখানেক ধরে ইয়াবা পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে আসছিলেন হাবিবা। তিনি বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে উত্তরা, টঙ্গী ও গাজীপুর এলাকায় ইয়াবা সরবরাহ করতেন। এরপর কখনও আকাশপথে আবার কখনও সড়কপথে ফিরে যেতেন। এবার গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ডিএনসি রমনা সার্কেলের একটি দল শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ বহির্গমন গেটের পাশের দর্শনার্থী বিশ্রামাগারের সামনে অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে হাবিবাকে আটকে ডিএনসির নারী সদস্যদের দিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। তখন তাঁর পেটের সঙ্গে বিশেষ কায়দায় স্কচটেপ দিয়ে আটকানো তিনটি জিপারযুক্ত পলিপ্যাক পাওয়া যায়। সেগুলোর প্রতিটিতে ১ হাজার করে মোট ৩ হাজার পিস ইয়াবা ছিল। এরপর তাঁকে গ্রেপ্তার এবং বিমানবন্দর থানায় মামলা করা হয়। জব্দ ইয়াবার আনুমানিক দাম ৯ লাখ টাকা। এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন ডিএনসি রমনা সার্কেলের পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়া।

ডিএনসির এক কর্মকর্তা জানান, হাবিবাকে জিজ্ঞাসাবাদে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ইয়াবা চালানের প্রেরক ও প্রাপকদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। তাদের আইনের আওতায় আনা গেলে পুরো চক্রটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।

আরও পড়ুন

×