‘পাখিশূন্য’ জাহাঙ্গীরনগরে পাখিমেলা
জাহাঙ্গীরনগরে পাখিমেলা। ছবি-সংগৃহীত
জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ | ২২:৫০
প্রতিবছর শীত মৌসুমে বাড়তি উষ্ণতার খোঁজে বিভিন্ন দেশ থেকে নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি)। ঘন ও উঁচু গাছপালা ও বেশ কয়েকটি বড় লেক থাকায় শীতে জাবি ক্যাম্পাস হয়ে ওঠে পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নানা কারণে এই ক্যাম্পাসে উল্লেখযোগ্য হারে কমছে অতিথি পাখির আগমন। তবু প্রতিবছরের মতো এবারও পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘পাখপাখালি দেশের রত্ন, আসুন সবাই করি যত্ন’ স্লোগানে শুক্রবার জাবি ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হলো পাখি মেলা। বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে সকাল সাড়ে ৯টায় মেলার উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম।
মেলার বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যে ছিল আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি দেখা ও চেনা প্রতিযোগিতা, পাখিবিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, শিশু-কিশোরদের জন্য পাখির ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, বাইনোকুলার দিয়ে পাখি পর্যবেক্ষণ এবং সবার জন্য উন্মুক্ত পাখিবিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা।
পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০১ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে পাখিমেলার আয়োজন করছে জাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগ। কিন্তু শীতের অতিথি পাখি ঘিরে যে মেলার আয়োজন করা হচ্ছে, সে পাখিরাই যেন আর এমুখো হচ্ছে না। ১৯৮৬ সালে প্রথম জাবিতে অতিথি বা পরিযায়ী পাখি আসে। সেবার চার হাজারের মতো পাখির দেখা মেলে। গতবছর এই সময়ে দেশি-বিদেশি প্রায় আড়াই হাজার পরিযায়ী বা অতিথি পাখি আসে। ২০২১ সালে সাড়ে চার হাজার অতিথি পাখির আগমন ঘটে। ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি অতিথি পাখি আসে ২০২০ সালের কারোনাকালীন। সেবার আট হাজারের বেশি অতিথি পাখি এসেছিল জাবির লেকগুলোয়। ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে আসা পাখির সংখ্যা ৬ হাজার ৭৮০, ৪ হাজার ৭৩১, ৪ হাজার ৯৭৫ ও ৪ হাজার ৭০৯টি ছিল বলে জানিয়েছে প্রাণিবিদ্যা বিভাগ।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মতে, প্রতিবছর পাখি সংরক্ষণে সচেতনতামূলক নানা ব্যানার লাগানো হলেও দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে। মূলত ক্যাম্পাসে পাখি সংরক্ষণে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না থাকা এবং যত্রতত্র উঁচু উঁচু ভবন তৈরি করে পাখির ফ্লাইং জোন ধ্বংস করা হচ্ছে। এ ছাড়া নিয়মিত বহুতল ভবন তৈরির শব্দ, লেকের আশপাশে জনসমাগম বৃদ্ধি, লেকের পানির গুণগত মান নষ্ট হওয়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও সচেতনতামূলক উদ্যোগ নিতে প্রশাসনের গাফিলতিই পাখি চলে যাওয়ার জন্য দায়ী। পাখিমেলার আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘গত দু-তিন বছর ক্যাম্পাসে পাখি কম আসছে। এর প্রধান কারণ জলাশয়ের পাড়ে জনসমাগম। মানুষের ভিড়ে পাখিরা বিরক্ত হয়। ফলে তারা সেখানে বসতে আগ্রহ দেখায় না।’
ক্যাম্পাসে পাখির অনূকুল পরিবেশ নিশ্চিতের আশাবাদ ব্যক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও আমরা যে জলাশয়গুলোতে পাখি দেখতাম, এখন আর সেখানে পাখি দেখতে পাচ্ছি না। কারণ দর্শনার্থীরা পাখিকে উত্ত্যক্ত করে। ফলে তারা চলে যায়। এখন শুধু ক্যাম্পাসের ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের জলাশয়ে পাখি রয়েছে। কারণ সেখানে আছে পাখির উপযুক্ত পরিবেশ। সেখানে আমরা সর্বসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রেখেছি। আমরা চেষ্টা করছি ক্যাম্পাসের সব জলাশয়েই পাখির জন্য এমন অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে।’
মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখির বসবাস উপযোগী পরিবেশ ধরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ জন্য কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। পাখির অভয়ারণ্য নিশ্চিতের স্বার্থে আরোপিত বিধিনিষেধ মানতে হবে।’