ঢাকা মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫

২১ জেলায় ঠান্ডা হাওয়া, রেকর্ড শীত ঢাকায়

২১ জেলায় ঠান্ডা হাওয়া, রেকর্ড  শীত ঢাকায়

.

 সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ | ০০:৫৪

‘মাঘের শীতে বাঘ পালায়’ প্রবাদের অর্থ হাড়ে হাড়ে টের পাইয়ে দিচ্ছে এবারের ঠান্ডা। টানা প্রায় ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও দম নিচ্ছে না কনকনে শীত। এতে জনজীবন অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বিপদে আছে নিম্ন আয়ের মানুষ। গতকাল সোমবার থেকে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলার পাশাপাশি টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়ায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। রাজধানীতে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল গতকাল। শীতজনিত রোগবালাইয়ের বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন বয়স্ক ও শিশুরা। এমন পটভূমিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদানের সময়সূচিতে বদল আনা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল ১০টায় ক্লাস শুরু হবে। শীতের কারণে কিছু এলাকায় স্কুল বন্ধ থাকলেও অধিকাংশ জেলাতেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলছে। 

মাঘের অষ্টম দিনে দুপুর গড়িয়ে গেলেও তেমনভাবে সূর্যের দেখা মেলেনি রাজধানীতে; দেশের বেশির ভাগ এলাকা ছিল কুয়াশায় ঢাকা। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গতকাল দিনাজপুর ও নওগাঁর বদলগাছীতে দেশের সর্বনিম্ন ৮.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছিল ১২ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এবার শীতে এটাই ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে ২৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কয়েকটি জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এর মধ্যেই আবার বৃষ্টির পূর্বাভাস দিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। 

আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক জানিয়েছেন, রাতের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি কমে শীত আরও বাড়তে পারে। আগামীকাল বুধবার আবার বৃষ্টি নামতে পারে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে। এই বৃষ্টি মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত চলে আসতে পারে। তবে এ দফায় খুব বেশি বৃষ্টি হবে না।

গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হয়। তবে দক্ষিণ অঞ্চলেই বৃষ্টি ছিল বেশি। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনপদ যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় যথাক্রমে ২২ ও ২০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে আজ মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে। সর্বোচ্চ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে খুলনা বিভাগে। এর পর বরিশাল ও ঢাকা বিভাগে বৃষ্টির মাত্রা বেশি থাকতে পারে।

গতকাল ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় শীতের তীব্রতা আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে। তাপমাত্রা আজ আরও কমতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক। তবে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে তাপমাত্রা একটু করে বাড়তে শুরু করবে।

কুয়াশার কারণে সড়ক, নৌ ও আকাশপথে যান চলাচল বিঘ্নিত হওয়ার খবরও মিলছে প্রায় প্রতিদিন। শীতের দাপটে ঠান্ডাজনিত অসুখবিসুখে ভুগছে শিশু ও বয়স্করা। 

তাপমাত্রা কমে যাওয়ার পাশাপাশি উত্তর থেকে আসা হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশায় নওগাঁয় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। শীতের কারণে আজ স্কুলের পাঠদান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা কিছুটা স্বস্তি পেলেও নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছে বিপাকে। 

এদিকে শীতের তীব্রতা বাড়লেও পাবনার ঈশ্বরদীতে বসবাসকারী প্রায় দুই হাজার আদিবাসীর ভাগ্যে এখনও জোটেনি শীতবস্ত্র। 

ঠান্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরের সীমান্তবর্তী শীতের জেলা কুড়িগ্রাম। চিলমারী নৌবন্দরের মাঝি ভবেশ চন্দ্র বলেন, ‘নদীর মাঝত কুয়াশার কারণে কিছু দেখা যায় না।’ জেলা শহরের কালীবাড়ি এলাকার ঘোড়ার গাড়ি চালক মোজ্জামেল হোসেন বলেন, ‘বাহে জারতে কাজকাম করা না যায়, ঠান্ডাতে বাইরত বেড়া খুব মুশকিল হয়া গেইছে। কামত না বেড়ালে পেট চলবে কেমন করি!’
পঞ্চগড়ে সপ্তাহজুড়েই ঠিকমতো সূর্যের দেখা মেলেনি। মাঝেমধ্যে রোদের দেখা মিললেও তাপ ছড়ানোর আগেই সূর্য আবার ঘন কুয়াশা আর মেঘের আড়ালে ঢেকে যায়। 

বগুড়ায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাওয়ায় জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান গতকাল এক দিন বন্ধ রাখা হয়। তবে আগে থেকে বিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণাটি জানতেন না শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা। আজ মঙ্গলবার বিদ্যালয়ে পাঠদান হবে কিনা তা নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে অভিভাবকদের মধ্যে। 

জয়পুরহাটে ঘন কুয়াশার সঙ্গে ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। রংপুর অঞ্চলে শীতের দাপট থেকে বাঁচাতে অনেক খামারি গরম কাপড় বা চটের বস্তা দিয়ে গবাদি পশুর শরীর ঢেকে রাখছেন। শীতের কারণে হাঁস-মুরগির খাদ্য গ্রহণের ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ফলে ডিম উৎপাদন কমে যাওয়ার শঙ্কাসহ পরিমিত খাদ্য গ্রহণ করতে না পারায় গরুর খামারগুলোতে দুগ্ধ উৎপাদন কমারও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। 
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় দুই-তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে আসে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু তীব্র শীতের মধ্যেও এখানে স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি। চার-পাঁচ দিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। 

দিনাজপুরে গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হলেও অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চলেছে পাঠদান। 

লালমনিরহাটে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে চলছে। কনকনে বাতাস ও হাঁড় কাঁপানো ঠান্ডায় কাহিল হয়ে পড়েছে  মানুষ। সন্ধ্যা নামতেই বৃষ্টির ফোঁটার মতো কুয়াশা ঝরে।
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যুরো, অফিস ও প্রতিনিধিরা)


 

আরও পড়ুন

×