- বাংলাদেশ
- বিদেশে ভুল বোঝানো হচ্ছে, সজাগ থাকতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
বিদেশে ভুল বোঝানো হচ্ছে, সজাগ থাকতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছবি: ফোকাস বাংলা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এটা অনেকেরই সহ্য হচ্ছে না। তাই বাংলাদেশ বিরোধী শক্তি, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি দেশ ও বিদেশে বসে নানা ষড়যন্ত্র করছে; এই অগ্রযাত্রাকে রুখে দেওয়ার জন্য। মিথ্যা-বানোয়াট-কাল্পনিক তথ্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এমনকি বিদেশেও আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এসময় কেউ যাতে দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদের তৃতীয় বর্ষপূর্তি ও চতুর্থবর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে এ ভাষণ দেন তিনি। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতার বাংলাদেশসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিও স্টেশন প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে কোনোভাবেই ব্যাহত হতে দেওয়া যাবে না। জনগণই ক্ষমতার উৎস। আমরা জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করি। তাই জনগণের সঙ্গেই আমাদের অবস্থান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’- জাতির পিতা প্রণীত বৈদেশিক নীতির এই মূলমন্ত্রকে পাথেয় করে আমরা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছি। জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনসহ আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব বহুলাংশে বেড়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে এই মুহূর্তে শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে।
দুর্নীতি-সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তার সরকারের কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছি। দুর্নীতিবাজ যে দলেরই হোক আর যত শক্তিশালীই হোক, তাদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে না এবং হবে না। এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে। তবে এ ব্যাধি দূর করতে সামাজিক সচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন।
এসময় দৃঢ়কণ্ঠে তিনি বলেন, আমরা কঠোর হস্তে জঙ্গিবাদের উত্থান প্রতিহত করেছি। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ পারস্পরিক সহনশীলতা বজায় রেখে বসবাস করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।
দেশে ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং ২০২০-২১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপনের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, করোনার কারণে এই উদযাপন কিছুটা সীমিত হলেও মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার কমতি ছিল না। দেশবাসী মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে নতুন করে দেশ গড়ার শপথ নিয়েছে।
২৭ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডের ভাষণের শুরুতে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে তার সরকার গঠনের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। সেইসঙ্গে তিনি ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান।
করোনাভাইরাস মোকাবিলা করে গত অর্থবছরে দেশের জিডিপি ৫.৪৩ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, জিডিপির প্রবৃদ্ধির হারে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২১-এ মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলারে। দ্য ইকোনমিস্ট ২০২০ সালের প্রতিবেদনে বলেছে, ৬৬টি উদীয়মান সবল অর্থনীতির দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান নবম। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।
করোনাভাইরাস সংকট সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতির গতি সচল রাখতে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস মহামারি বিশ্ব অর্থনীতিতে এক গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। অনেক দেশের অর্থনীতিতে ধস নেমেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিও ক্ষতির মুখে পড়েছে। নেমে এসেছিল স্থবিরতা। তবে দেশবাসীর সহায়তায় সরকার তা অনেকটা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। বিভিন্ন নীতি-সহায়তা এবং বিভিন্ন উদার-নৈতিক আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়ার মাধ্যমে সরকার অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
করোনার প্রকোপ থেকে সুরক্ষায় সবাইকে সতর্ক থাকার পাশাপাশি টিকা নেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এক গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে ২০২০ ও ২০২১ সাল অতিক্রম করতে হয়েছে। সেই সংকট এখনও কাটেনি। এরমধ্যেই আবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন করে নতুন নতুন ধরন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। আমাদের এখনই সাবধান হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যারা টিকা নেননি তাদের দ্রুত টিকা নিতে অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী।
দেশের জনগণের করোনার টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিতে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, এখন পুরোদমে কভিড-১৯ টিকাকরণের কাজ চলছে। চলতি মাস থেকে গণটিকা দেওয়ার মাধ্যমে প্রতিমাসে এক কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১২ কোটি ৯৫ লাখ ৮০ হাজার ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে প্রথম ডোজ পেয়েছেন প্রায় সাত কোটি ৫৮ লাখ মানুষ আর দুই ডোজ পেয়েছেন পাঁচ কোটি ৩৫ লাখ ৮২ হাজার। গত মাস থেকে বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। বর্তমানে আমাদের হাতে সাড়ে নয় কোটিরও বেশি ডোজ টিকা মজুদ আছে।
তিনি বলেন, ২০২১ সাল ছিল আমাদের উন্নয়ন অভিযাত্রার এক অভূতপূর্ব স্বীকৃতির বছর। গতবছর আমরা উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত যোগ্যতা অর্জন করেছি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষে এই অর্জন বাঙালি জাতির জন্য অত্যন্ত আনন্দের এবং গর্বের।
মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অন্য বৃহৎ প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি তুলে ধরে তিনি বলেন, জনগণের সরকার হিসেবে মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করা আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য বলেই আমি মনে করি। গত ১৩ বছরে আমরা আপনাদের জন্য কী কী করেছি, তা আপনারাই মূল্যায়ন করবেন। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, আমরা যেসব ওয়াদা দিয়েছিলাম, আমরা তা সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।
এ প্রসঙ্গে বর্তমান মেয়াদের তিন বছরসহ তিন মেয়াদের ১৩ বছরে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজের সরকারের সাফল্যের বিবরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত ১৩ বছরে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। দারিদ্র্য দূরীকরণ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন, মাতৃমৃত্যু-শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষার হার বৃদ্ধিসহ নানা আর্থ-সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ আজ দক্ষিণ এশিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। এটা সম্ভব হয়েছে আওয়ামী লীগের ওপর জনগণের আস্থা রাখার ফলে। পরপর তিনবার রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ দিয়ে দেশবাসী উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সহায়তা করেছে।
দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে আমরা একটি কল্যাণকামী, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। যাতে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলোর কাতারে সামিল হতে পারে। এ জন্য অতীতে যেমন আপনারা আমাদের সঙ্গে ছিলেন, ভবিষ্যতে আমাদের সঙ্গে থাকবেন, এ আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের নতুন ঢেউ থেকে মহান আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে রক্ষা করুন- এই প্রার্থনা করি। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
>> জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
>> জনগণের সঙ্গেই আমাদের অবস্থান: প্রধানমন্ত্রী
>> দুর্নীতিবাজ যে দলেরই হোক, ছাড় পাবে না: প্রধানমন্ত্রী
>> ‘২০৩০ সালে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ’
মন্তব্য করুন