- বাংলাদেশ
- হারিছ চৌধুরী মারা গেছেন কিনা নিশ্চিত নয় পুলিশ
হারিছ চৌধুরী মারা গেছেন কিনা নিশ্চিত নয় পুলিশ
ঝুলছে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হারিছ চৌধুরী মারা গেছেন বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। তার মেয়েকে উদ্ৃব্দত করে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাবেক এই রাজনৈতিক উপদেষ্টা গত বছরের সেপ্টেম্বরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান। তাকে ঢাকার কাছে একটি গোরস্তানে দাফন করা হয়েছে। তবে হারিছ চৌধুরীকে ধরিয়ে দিতে এখনও আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে তার নামে রেড নোটিশ ঝুলছে। আর ঢাকার পুলিশ বলছে, তিনি মারা গেছেন কিনা তা তারা নিশ্চিত নন। বিষয়টি সিআইডি খতিয়ে দেখছে।
২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতাসীন হলে আত্মগোপনে চলে যান হারিছ চৌধুরী। এরপর থেকে তাকে ধরিয়ে দিতে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি করা হয়। ১৪ বছর ধরে এই নোটিশ ঝুললেও তার অবস্থানের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না বা তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
বিএনপির সাবেক এই নেতার মৃত্যুর খবর দিয়ে তার স্বজনরা দাবি করছেন, তিনি দেশেই আত্মগোপন করেছিলেন এবং ঢাকাতেই মারা গেছেন। এমন দাবির পর ইন্টারপোলের রেড নোটিশের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পাশাপাশি 'এই মোস্ট ওয়ান্টেড' আসামিকে এত বছরেও গ্রেপ্তার করতে না পারায় দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
হারিছ চৌধুরী 'দেশেই ছিলেন'- পরিবারের এমন দাবির বিষয়ে জানতে পুলিশের নানা স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কেউ আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কথা বলতে রাজি হননি। পুলিশের চারজন কর্মকর্তা বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।
বাংলাদেশ পুলিশের হয়ে ইন্টারপোলের সঙ্গে সার্বিক বিষয়ে কার্যক্রম চালায় পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) শাখা। হারিছ চৌধুরীকে ধরিয়ে দিতে এখনও ইন্টারপোলে রেড নোটিশ থাকার বিষয়ে ব্যুরোর সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মহিউল ইসলাম সমকালকে বলেন, আমরা নিশ্চিত নই ওই আসামি মারা গেছেন কিনা। তবে গণমাধ্যমে এই ধরনের খবর আমাদের নজরে এসেছে। এসব খবর আমলে নিয়ে এরই মধ্যে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) চিঠি দেওয়া হয়েছে।'
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাটি তদন্ত করেছিল সিআইডি। ওই সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হারিছ চৌধুরীসহ ওই মামলার পলাতক কয়েক আসামির বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির আবেদন করা হয় ইন্টারপোলে। আন্তর্জাতিক সংস্থাটি যাচাই-বাছাই শেষে এই নোটিশ তাদের ওয়েবসাইটে দেয়। এখন তদন্ত সংস্থা সিআইডি যদি ওই আসামির মৃত্যু হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে তাহলে ওই নোটিশ সরানোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অবশ্য সিআইডির এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, এর আগেও হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর বেরিয়েছিল। এবারও তার পরিবারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে দুই ধরনের বক্তব্য এসেছে। তার চাচাতো ভাই দাবি করেছেন, হারিছ চৌধুরী যুক্তরাজ্যে মারা গেছেন। আবার তার মেয়ে দাবি করেছেন, ঢাকাতেই মারা গেছেন। এখন তিনি যে মারা গেছেন, তা তার পরিবারকেই নিশ্চিত করতে হবে এবং রেড নোটিশ সরাতে তদন্ত সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। সিআইডি শুধু পুরো বিষয়টির ওপর নজরদারি করছে।
গতকাল রোববার ইন্টারপোল ওয়েবসাইটের ব্যাংলাদেশ চ্যাপ্টারে রেড নোটিশ কর্নার যাচাই করে দেখা যায়, বিভিন্ন অপরাধে পলাতক বাংলাদেশের রেড নোটিশধারী ৫৮ জনের মধ্যে হারিছ চৌধুরীর নাম ও ছবি ১৩ নম্বরে রয়েছে। সেখানে তার নাম চৌধুরী আবুল হারিছ লেখা রয়েছে। এতে তার জন্ম তারিখ থেকে শুরু করে জন্মস্থান, জাতীয়তা, উচ্চতা, ওজন, চুল ও চোখের রংসহ দৈহিক বিবরণ রয়েছে। রেড নোটিশে তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ রয়েছে।
বেশ কিছুদিন ধরে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে তার চাচাতো ভাই আশিক চৌধুরী ফেসবুকে স্ট্যাটাসে ইঙ্গিত দিলেও সরাসরি কিছু বলেননি। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, হারিছ চৌধুরী লন্ডনে মারা গেছেন। এরই মধ্যে হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামীরা তানজীন চৌধুরী (মুন্নু) জানান, তার বাবা গত সেপ্টেম্বর মাসের তিন তারিখে ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান। তিনি হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু, দাফন ও ঢাকায় আত্মগোপনে থাকাসহ নানা বিষয় তুলে ধরেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় অন্তত ২৪ জন নিহত হন। এতে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অনেক নেতাকর্মী আহত হন। ওই হামলার ঘটনায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর আদালত ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৯ জনকে যাবজ্জীবন এবং ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দেন। দণ্ড পাওয়া এ আসামিদের মধ্যে হারিছ চৌধুরীসহ ১৮ জন ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে আত্মগোপনে চলে যায়। তবে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ইকবাল হোসেনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছিল র্যাব।
মন্তব্য করুন