- বাংলাদেশ
- নিয়মিত বিরতিতেই নিতে হবে করোনার টিকা
নিয়মিত বিরতিতেই নিতে হবে করোনার টিকা

করোনার ছোবলে ক্ষতবিক্ষত মানুষ আবার কবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে- সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা। গত বছরের শেষ দিকে বিশ্বজুড়ে করোনার সংক্রমণ অনেকটাই কমে এসেছিল। টিকা কার্যক্রমেও পড়েছিল ধুম। এতে সবার ধারণা ছিল, বৈশ্বিক মহামারির বিদায় ঘণ্টা বাজতে যাচ্ছে। সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করে নতুন করে আসে করোনার আফ্রিকা ধরন ওমিক্রন। বিশ্বজুড়ে ঝড়োবেগে আবারও এই মহামারি জাল বিছায়। সময়ের হাত ধরে ওমিক্রনের দাপট এখন কিছুটা কম।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ধারণা ছিল, ওমিক্রন সংক্রমণপ্রবণ হলেও গুরুতর হবে না। হাসপাতালে পা মাড়াতে হবে না অধিকাংশ সংক্রমিত ব্যক্তিকে। ওমিক্রন দ্রুতবেগে ছড়িয়ে সবার শরীরে ইমিউনিটি তৈরি করবে। ফলে নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট এলেও তা তেমন গুরুতর হবে না। ওমিক্রনের মাধ্যমেই মহামারির শেষ দেখবে মানুষ। ওমিক্রনের দাপট শেষ না হতেই করোনার আরেকটি ধরন 'নিওকোভ' মাথাচাড়া দিয়েছে। চীন থেকে সৃষ্ট এই ধরনটি এরই মধ্যে বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশে ছড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে 'কনসার্ন অব ভ্যারিয়েন্ট' বলেছে। এ রকম প্রেক্ষাপটে সবার এক প্রশ্ন, করোনা পরিস্থিতির শেষ কোথায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, করোনা মহামারি খুব সহসা পৃথিবী ছাড়ছে না। সম্প্রতি জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. টেড্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস বলেছেন, করোনা পৃথিবী থেকে দ্রুত বিদায় নেওয়ার মতো অবস্থানে নেই। নতুন ধরনগুলোকে হালকাভাবে যেন নেওয়া না হয়।
অনেকে মনে করেন, করোনা কোনো না কোনোভাবে থেকে যাবে। তখন এটি নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বিরতিতে টিকার প্রয়োজন হতে পারে। টিকাকে সঙ্গী করে চালিয়ে যেতে হবে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই।
সরকারের জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএমএম আলমগীর সমকালকে বলেন, খুব শিগগির করোনা শেষ হবে- এটা বলা যাবে না। ১০০ বছরের শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন ভাইরাসের মহামারি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সেই সব মহামারি এক থেকে তিন বছর স্থায়ী ছিল। সেই বিবেচনায় হয়তো অনেকে মনে করেন, এ বছরই করোনা বিদায় নেবে। এখানে অন্য প্রশ্ন আছে। ওমিক্রনের যত মিউটেশন হচ্ছে, সেটি ততই সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। যখনই ভাইরাস ব্যাপক ট্রান্সমিশনে থাকে, তখন সেটির বেশি মিউটেশনের সুযোগ তৈরি হয়। ভাইরাসটি তখন দুর্বল কিংবা শক্তিশালী, যে কোনোটাই হতে পারে। এ কারণে মহামারি
শেষ হচ্ছে কিনা, সেটি বলার এখনও সময় আসেনি।
করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের 'অস্ত্র' টিকা :বিজ্ঞানীরা মনে করেন, পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে ইবোলা ভাইরাসের যে দশা হয়েছিল, সেভাবেই করোনা পুরোপুরি নির্মূল হয়ে যেতে পারে; কিংবা এটি দুর্বল হয়ে মানুষের শরীরে সর্দি, কাশি, এইচআইভি, হাম, ম্যালেরিয়া ও যক্ষ্ণার মতো থাকতে পারে। আবার অনেকে বলেছেন, 'এন্ডেমিন রোগ' সব সময় দুর্বল হয় না। বিবিসির এক প্রতিবেদনে লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের মহামারি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আজরা গানির উদ্ৃব্দতি দিয়ে বলা হয়, কিছু এন্ডেমিন রোগ আছে যেগুলোতে আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়। স্মলপক্স কয়েক হাজার বছর ধরে এন্ডেমিক রোগ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এতে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে।
আজরা গানি আরও বলেন, করোনা হয়তো এন্ডেমিক পর্যায়ে চলে যাবে। একটু সময় লাগছে। কারণ এক বছর আগে টিকা কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এই টিকার ফলে মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি স্বাধীন জীবনযাপন করতে পারছে। তবে এই পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে যদি আবারও নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট আসে। এজন্য মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রধান অস্ত্র হবে টিকা।
করোনা কোনো না কোনো আদলে আজীবন থাকতে পারে বলে সতর্ক করেছেন ব্রিটিশ সরকারের জরুরি পরিস্থিতিতে বৈজ্ঞানিক পরামর্শক কমিটির সদস্য স্যার মার্ক ওয়ালপোর্ট। তিনি বলেছেন, এমন ক্ষেত্রে নিয়মিত বিরতিতে টিকা নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে স্যার মার্কের উদ্ৃব্দতি দিয়ে বলা হয়, মহামারি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে বিশ্বের সব মানুষের জন্য টিকার ব্যবস্থা করতে হবে। করোনা স্মলপক্সের মতো কোনো রোগ নয় যে টিকা নিলেই চলে যাবে। এটি এমন একটি ভাইরাস যা কোনো না কোনো আদলে মানুষের সঙ্গে থেকে যাবে। তাই ফ্লুর মতো মানুষকে নিয়মিত বিরতিতে টিকা নিতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হবে। ওমিক্রন ধরন ডেলটার অ্যান্টিবডিকে শতভাগ নিষ্ফ্ক্রিয় করতে পারছে না। এর কারণ হলো, ডেলটা ধরন যে অ্যান্টিবডি তৈরি করেছিল, এর বিপরীতে ওমিক্রন অ্যান্টিবডি তৈরি করেছে।
টিকা করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হাতিয়ার হতে পারে উল্লেখ করে ডা. নজরুল আরও বলেন, বিশ্বের সব দেশে সমানভাবে টিকা দেওয়া যায়নি। টিকা সরবরাহের ক্ষেত্রে এক ধরনের বৈষম্য চলছে। এই বৈষম্য দূর করে সব মানুষকে টিকার আওতায় আনতে আরও কতদিন লাগবে তা অজানা। এজন্য ভাইরাস নির্মূলের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হতে পারে। কারণ স্বাভাবিক সময়ে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়, সেটি বেশি দিন স্থায়ী হয় না। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের অনেক দেশ দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পর বুস্টার বা তৃতীয় ডোজও শেষ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশের মানুষ এখনও দুই ডোজ টিকা পায়নি। এমনকি এক ডোজও পায়নি এমন মানুষও আছে। বিশ্বের সব মানুষকে টিকার আওতায় আনা গেলে অন্যরকম ফল হতে পারত।
বিনামূল্যে টিকা সরবরাহ চ্যালেঞ্জ হতে পারে :প্রতি ছয় মাসে এক ডোজ করে টিকা নেওয়ার প্রয়োজন হলে বছরে দুই ডোজ করে টিকা লাগবে। এ ক্ষেত্রে টিকা লাগবে বছরে ২৫ থেকে ২৬ কোটি ডোজ। বর্তমানে ভারত থেকে তিন কোটি ডোজ, চীন থেকে সাড়ে সাত কোটি ডোজ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে ১০ কোটি ডোজ টিকা কিনেছে বাংলাদেশ। এই টিকা কেনার খরচ নিয়ে এতদিন সবাই অন্ধকারে ছিল। টিকার দর নিয়ে এমন লুকোচুরির ঘটনার বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে থাকে। এরই প্রেক্ষাপটে গত সোমবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সুনির্দিষ্ট দর সম্পর্কে না জানালেও এ পর্যন্ত টিকা কিনতে ২০ হাজার কোটি টাকা খরচের কথা জানান।
সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দেশের প্রাপ্তবয়স্ক সব নাগরিককে দুই ডোজ করে টিকা বিনামূল্যে সরবরাহ করবে। এর মধ্যে বুস্টার ডোজও চালু হয়েছে। শুরুতে নিজ খরচে বুস্টার ডোজ নিতে হবে- এমন আলোচনা চললেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি খরচে বুস্টার ডোজ দেওয়ার নির্দেশ দেন।
এদিকে সরকার যে টিকা কিনেছে তা বৈদেশিক ঋণের টাকায়। প্রতিবছর এত বড় অঙ্কের টাকা টিকার পেছনে খরচের সামর্থ্য সরকারের কতটুকু রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। উৎপাদনে যেতে না পারলে টিকা কেনার এই খরচ বহন করা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন অনেকে। সে ক্ষেত্রে ব্যক্তি পর্যায়ে টাকা খরচ করে টিকা নিতে হবে। তখন মোট জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ টিকার বাইরে থেকে যাবে।
ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস চীনের টিকা দেশে তৈরির একটি চুক্তি হলেও তা এখন থমকে আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইনসেপ্টার এক কর্মকর্তা জানান, চীনের কাছ থেকে লিকুইড এনে বোতলজাত করার একটি সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তাতে যে পরিমাণ টিকা উৎপাদন এবং খরচ হবে তা হিসাব করলে লোকসানে পড়তে হবে। কারণ দেশের প্রয়োজনীয় টিকা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পাওয়া গেছে। ভবিষ্যতে টিকা লাগবে কিনা তা অনুমান করা যাচ্ছে না। আবার বিদেশে রপ্তানিরও সুযোগ নেই। এসব কারণে শেষমেশ টিকা উৎপাদনে আগ্রহ দেখায়নি প্রতিষ্ঠানটি।
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পনি লিমিটেড গোপালগঞ্জে টিকা উৎপাদনে একটি কারখানা নির্মাণ করতে চায়। এজন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. ইহসানুল করিম বলেন, দ্রুততম সময়ে কারখানাটি নির্মাণের চেষ্টা চলছে। উৎপাদনে যেতে আরও দেড় থেকে দুই বছর লাগতে পারে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, এ পর্যন্ত ১০ কোটি মানুষের প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। দেশের ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া শেষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ৮২ শতাংশকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এই বছরের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বুস্টার ডোজসহ সবাইকে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে। এরপর অবস্থা বুঝে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ধারণা ছিল, ওমিক্রন সংক্রমণপ্রবণ হলেও গুরুতর হবে না। হাসপাতালে পা মাড়াতে হবে না অধিকাংশ সংক্রমিত ব্যক্তিকে। ওমিক্রন দ্রুতবেগে ছড়িয়ে সবার শরীরে ইমিউনিটি তৈরি করবে। ফলে নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট এলেও তা তেমন গুরুতর হবে না। ওমিক্রনের মাধ্যমেই মহামারির শেষ দেখবে মানুষ। ওমিক্রনের দাপট শেষ না হতেই করোনার আরেকটি ধরন 'নিওকোভ' মাথাচাড়া দিয়েছে। চীন থেকে সৃষ্ট এই ধরনটি এরই মধ্যে বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশে ছড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে 'কনসার্ন অব ভ্যারিয়েন্ট' বলেছে। এ রকম প্রেক্ষাপটে সবার এক প্রশ্ন, করোনা পরিস্থিতির শেষ কোথায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, করোনা মহামারি খুব সহসা পৃথিবী ছাড়ছে না। সম্প্রতি জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. টেড্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস বলেছেন, করোনা পৃথিবী থেকে দ্রুত বিদায় নেওয়ার মতো অবস্থানে নেই। নতুন ধরনগুলোকে হালকাভাবে যেন নেওয়া না হয়।
অনেকে মনে করেন, করোনা কোনো না কোনোভাবে থেকে যাবে। তখন এটি নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বিরতিতে টিকার প্রয়োজন হতে পারে। টিকাকে সঙ্গী করে চালিয়ে যেতে হবে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই।
সরকারের জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএমএম আলমগীর সমকালকে বলেন, খুব শিগগির করোনা শেষ হবে- এটা বলা যাবে না। ১০০ বছরের শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন ভাইরাসের মহামারি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সেই সব মহামারি এক থেকে তিন বছর স্থায়ী ছিল। সেই বিবেচনায় হয়তো অনেকে মনে করেন, এ বছরই করোনা বিদায় নেবে। এখানে অন্য প্রশ্ন আছে। ওমিক্রনের যত মিউটেশন হচ্ছে, সেটি ততই সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। যখনই ভাইরাস ব্যাপক ট্রান্সমিশনে থাকে, তখন সেটির বেশি মিউটেশনের সুযোগ তৈরি হয়। ভাইরাসটি তখন দুর্বল কিংবা শক্তিশালী, যে কোনোটাই হতে পারে। এ কারণে মহামারি
শেষ হচ্ছে কিনা, সেটি বলার এখনও সময় আসেনি।
করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের 'অস্ত্র' টিকা :বিজ্ঞানীরা মনে করেন, পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে ইবোলা ভাইরাসের যে দশা হয়েছিল, সেভাবেই করোনা পুরোপুরি নির্মূল হয়ে যেতে পারে; কিংবা এটি দুর্বল হয়ে মানুষের শরীরে সর্দি, কাশি, এইচআইভি, হাম, ম্যালেরিয়া ও যক্ষ্ণার মতো থাকতে পারে। আবার অনেকে বলেছেন, 'এন্ডেমিন রোগ' সব সময় দুর্বল হয় না। বিবিসির এক প্রতিবেদনে লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের মহামারি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আজরা গানির উদ্ৃব্দতি দিয়ে বলা হয়, কিছু এন্ডেমিন রোগ আছে যেগুলোতে আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়। স্মলপক্স কয়েক হাজার বছর ধরে এন্ডেমিক রোগ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এতে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে।
আজরা গানি আরও বলেন, করোনা হয়তো এন্ডেমিক পর্যায়ে চলে যাবে। একটু সময় লাগছে। কারণ এক বছর আগে টিকা কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এই টিকার ফলে মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি স্বাধীন জীবনযাপন করতে পারছে। তবে এই পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে যদি আবারও নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট আসে। এজন্য মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রধান অস্ত্র হবে টিকা।
করোনা কোনো না কোনো আদলে আজীবন থাকতে পারে বলে সতর্ক করেছেন ব্রিটিশ সরকারের জরুরি পরিস্থিতিতে বৈজ্ঞানিক পরামর্শক কমিটির সদস্য স্যার মার্ক ওয়ালপোর্ট। তিনি বলেছেন, এমন ক্ষেত্রে নিয়মিত বিরতিতে টিকা নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে স্যার মার্কের উদ্ৃব্দতি দিয়ে বলা হয়, মহামারি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে বিশ্বের সব মানুষের জন্য টিকার ব্যবস্থা করতে হবে। করোনা স্মলপক্সের মতো কোনো রোগ নয় যে টিকা নিলেই চলে যাবে। এটি এমন একটি ভাইরাস যা কোনো না কোনো আদলে মানুষের সঙ্গে থেকে যাবে। তাই ফ্লুর মতো মানুষকে নিয়মিত বিরতিতে টিকা নিতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হবে। ওমিক্রন ধরন ডেলটার অ্যান্টিবডিকে শতভাগ নিষ্ফ্ক্রিয় করতে পারছে না। এর কারণ হলো, ডেলটা ধরন যে অ্যান্টিবডি তৈরি করেছিল, এর বিপরীতে ওমিক্রন অ্যান্টিবডি তৈরি করেছে।
টিকা করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হাতিয়ার হতে পারে উল্লেখ করে ডা. নজরুল আরও বলেন, বিশ্বের সব দেশে সমানভাবে টিকা দেওয়া যায়নি। টিকা সরবরাহের ক্ষেত্রে এক ধরনের বৈষম্য চলছে। এই বৈষম্য দূর করে সব মানুষকে টিকার আওতায় আনতে আরও কতদিন লাগবে তা অজানা। এজন্য ভাইরাস নির্মূলের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হতে পারে। কারণ স্বাভাবিক সময়ে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়, সেটি বেশি দিন স্থায়ী হয় না। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের অনেক দেশ দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পর বুস্টার বা তৃতীয় ডোজও শেষ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশের মানুষ এখনও দুই ডোজ টিকা পায়নি। এমনকি এক ডোজও পায়নি এমন মানুষও আছে। বিশ্বের সব মানুষকে টিকার আওতায় আনা গেলে অন্যরকম ফল হতে পারত।
বিনামূল্যে টিকা সরবরাহ চ্যালেঞ্জ হতে পারে :প্রতি ছয় মাসে এক ডোজ করে টিকা নেওয়ার প্রয়োজন হলে বছরে দুই ডোজ করে টিকা লাগবে। এ ক্ষেত্রে টিকা লাগবে বছরে ২৫ থেকে ২৬ কোটি ডোজ। বর্তমানে ভারত থেকে তিন কোটি ডোজ, চীন থেকে সাড়ে সাত কোটি ডোজ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে ১০ কোটি ডোজ টিকা কিনেছে বাংলাদেশ। এই টিকা কেনার খরচ নিয়ে এতদিন সবাই অন্ধকারে ছিল। টিকার দর নিয়ে এমন লুকোচুরির ঘটনার বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে থাকে। এরই প্রেক্ষাপটে গত সোমবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সুনির্দিষ্ট দর সম্পর্কে না জানালেও এ পর্যন্ত টিকা কিনতে ২০ হাজার কোটি টাকা খরচের কথা জানান।
সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দেশের প্রাপ্তবয়স্ক সব নাগরিককে দুই ডোজ করে টিকা বিনামূল্যে সরবরাহ করবে। এর মধ্যে বুস্টার ডোজও চালু হয়েছে। শুরুতে নিজ খরচে বুস্টার ডোজ নিতে হবে- এমন আলোচনা চললেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি খরচে বুস্টার ডোজ দেওয়ার নির্দেশ দেন।
এদিকে সরকার যে টিকা কিনেছে তা বৈদেশিক ঋণের টাকায়। প্রতিবছর এত বড় অঙ্কের টাকা টিকার পেছনে খরচের সামর্থ্য সরকারের কতটুকু রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। উৎপাদনে যেতে না পারলে টিকা কেনার এই খরচ বহন করা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন অনেকে। সে ক্ষেত্রে ব্যক্তি পর্যায়ে টাকা খরচ করে টিকা নিতে হবে। তখন মোট জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ টিকার বাইরে থেকে যাবে।
ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস চীনের টিকা দেশে তৈরির একটি চুক্তি হলেও তা এখন থমকে আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইনসেপ্টার এক কর্মকর্তা জানান, চীনের কাছ থেকে লিকুইড এনে বোতলজাত করার একটি সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তাতে যে পরিমাণ টিকা উৎপাদন এবং খরচ হবে তা হিসাব করলে লোকসানে পড়তে হবে। কারণ দেশের প্রয়োজনীয় টিকা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পাওয়া গেছে। ভবিষ্যতে টিকা লাগবে কিনা তা অনুমান করা যাচ্ছে না। আবার বিদেশে রপ্তানিরও সুযোগ নেই। এসব কারণে শেষমেশ টিকা উৎপাদনে আগ্রহ দেখায়নি প্রতিষ্ঠানটি।
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পনি লিমিটেড গোপালগঞ্জে টিকা উৎপাদনে একটি কারখানা নির্মাণ করতে চায়। এজন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. ইহসানুল করিম বলেন, দ্রুততম সময়ে কারখানাটি নির্মাণের চেষ্টা চলছে। উৎপাদনে যেতে আরও দেড় থেকে দুই বছর লাগতে পারে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, এ পর্যন্ত ১০ কোটি মানুষের প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। দেশের ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া শেষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ৮২ শতাংশকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এই বছরের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বুস্টার ডোজসহ সবাইকে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে। এরপর অবস্থা বুঝে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন