- বাংলাদেশ
- দায়মুক্তির সংস্কৃতির কারণেই সাগর-রুনি হত্যার বিচার হয়নি
জাতিসংঘ মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের বিবৃতি
দায়মুক্তির সংস্কৃতির কারণেই সাগর-রুনি হত্যার বিচার হয়নি

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি - ফাইল ছবি
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড এবং লেখক মুশতাক আহমেদের কারাগারে মৃত্যুর পর এ বিষয়ে জানতে চেয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের পাঠানো কোনো চিঠির জবাব দেয়নি বাংলাদেশ সরকার। আজ শুক্রবার জেনেভা থেকে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ গ্রুপের সদস্যরা এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তারা আরও বলেছেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশে কমপক্ষে ১৫ জন সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশে সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের বিনা বিচারে আটক, আক্রমণ, অপহরণ, এবং আইনি হয়রানির শিকার হওয়ার অনেক খবর পেয়েছেন। বাংলাদেশে দায়মুক্তির সংস্কৃতির কারণেই এ সব ঘটনার বিচার হয়নি বলেও মন্তব্য করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিবৃতিদাতা বিশেষজ্ঞরা হলেন- জাতিসংঘের মতপ্রকাশ ও বাকস্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান, মানবাধিকারকর্মীদের অবস্থা বিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার মেরি ল অলার, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা ও সমিতি গঠনের অধিকারবিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার ক্লেমেন্ট এন ভৌল, নির্যাতন ও অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অসম্মানজনক আচরণ বা শাস্তি বিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার নিলস মেলজার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা বা বিধিবহির্ভূত হত্যা বিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার মরিস টিডবলুবিঞ্জ।
বিবৃতিতে তারা বলেন, উচ্চ আদালত ২০১২ সালেই সাংবাদিক সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেন র্যাবকে। গত বছর ২৪ নভেম্বর আদালত ৮৪তম বারের মতো র্যাবকে তাদের তদন্তের ফলাফল জমা দিতে বলেন, যা এখনো সম্পন্ন হয়নি। একই সঙ্গে গত ১০ বছরে বাংলাদেশে কমপক্ষে ১৫ জন সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশে সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের বিনা বিচারে আটক, আক্রমণ, অপহরণ এবং আইনি হয়রানির শিকার হওয়ার অনেক খবর পেয়েছেন। এসব ঘটনার তদন্ত বা বিচার হয়নি বললেই চলে। নিপীড়নের কিছু ঘটনায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সদস্যরা সরাসরি জড়িত বলেও ধারণা রয়েছে। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা এ ধরনের বিভিন্ন অভিযোগ বাংলাদেশ সরকারের নজরে আনলেও কার্যত বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোনো জবাব দেওয়া হয় না। ২০১২ সালে সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের পর জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের পাঠানো চিঠির কোনো জবাব বাংলাদেশ সরকার কখনই দেয়নি।
এক দশকেও সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শেষ না হওয়া এবং দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে না পারায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের বিচার না হওয়ার কারণে অপরাধীরা আরও সাহসী হয়ে ওঠে এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি সংবাদমাধ্যমকে ভয় দেখিয়ে চুপ করানোর উদ্দেশ্যে আরও আক্রমণ, ভীতি প্রদর্শন ও হত্যাকাণ্ডে উৎসাহ জোগায়। গভীর উদ্বেগের সঙ্গে বাংলাদেশে এই অবস্থার বিষয়টি পরিলক্ষিত হচ্ছে। ‘আক্রমণ, ভয়ভীতি এবং হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশের সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও সুশীল সমাজের সদস্যদের বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে গুলিতে সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী আবদুল হাকিম শিমুল নিহত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বিশেষজ্ঞরা বলেন, এ মামলার বিচারকাজও বারবার বিলম্বিত হচ্ছে, যা উদ্বেগের সৃষ্টি করে। শাহজাদপুরের তৎকালীন মেয়রের বিরুদ্ধে এ হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের আওতায় মামলার সব আসামি বর্তমানে জামিনে আছেন।
বিবৃতিতে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কারাবন্দী অবস্থায় মারা যাওয়া লেখক মুশতাক আহমেদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলেন, পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থাতেই মুশতাক আহমেদ নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন এবং কারাগারে অসুস্থ হওয়ার পর তাকে হাসপাতালে নিতেও তিন ঘণ্টা বিলম্ব হয়েছিল বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু তার মৃত্যুর বিষয়ে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতেও স্পষ্টত ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। বরং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত একটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি পরিবারের অভিযোগের বিষয় খতিয়ে না দেখেই এই লেখকের কারা অন্তরীণ অবস্থায় মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলে জানিয়েছে। এ বিষয়েও জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ জানিয়ে চিঠি দিলেও কোনো জবাব আসেনি বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে।
বিবৃতিতে বিশেষজ্ঞরা সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডসহ অন্যান্য সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের হত্যাকাণ্ডের দ্রুত পরিপূর্ণ, স্বাধীন ও কার্যকর তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
মন্তব্য করুন