- বাংলাদেশ
- সুন্দরবন রক্ষা করতে না পারলে প্রাণ-প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়বে
সুন্দরবন রক্ষা করতে না পারলে প্রাণ-প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়বে

ফাইল ছবি
সুন্দরবনকে রক্ষা করা না গেলে প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে। এ জন্য বাংলাদেশের সমপরিমাণ গুরুত্ব সুন্দরবনকে দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সেটা না দেওয়ায় দিন দিন সুন্দরবন ধ্বংসের মুখে পড়ছে।
সোমবার সুন্দরবন দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) আয়োজিত ‘সুন্দরবনের গল্প’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনা সভায় বক্তারা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন।
সভাপতির বক্তব্যে বাপার সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, সুন্দরবন নিয়ে যারা ভাবেন, চিন্তা করেন তারা সুন্দরবন রক্ষার জন্য আন্দোলন করে আসছেন। সুন্দরবন আমাদের বেঁচে থাকার বিরাট অনুষঙ্গ। সুন্দরবন দক্ষিণ এশিয়ার ফুসফুস। এটা রক্ষা করতে না পারলে আমাদের দেশ একটা বিরাট সংকটের সম্মুখীন হবে। বঙ্গবন্ধু ঢাকা থেকে হাতিয়া পর্যন্ত এলাকাকে সুন্দর সুন্দর দ্বীপে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। সেটা হয়নি। কিন্তু সুন্দরবনকে রক্ষা করতেই হবে।
অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, যারা কয়েক বছর পর একবার সুন্দরবনে বেড়াতে যান তারা দেখে বুঝতে পারবেন না সুন্দরবনের কী ক্ষতিটা হচ্ছে। এখন সুন্দরবনে সুন্দরী গাছ নেই। সেখানে গরান, গেওয়া, কেওড়া বাড়ছে। সুন্দরবনের পানি ও মাটিতে পরিবর্তন এসেছে। গাছের শরীরতত্ত্বে পরিবর্তন এসেছে। এখন সেখানে বীজের অঙ্কুরোদ্গম হয় না। লবণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় প্রাকৃতিক অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। সাগরে পানি যাচ্ছে না। রাসায়নিক ও বর্জ্য ফেলার কারণে পানির মানের অবণতি হচ্ছে। সুন্দরবন না থাকলে খুলনা পর্যন্ত ঘুর্ণিঝড় আঘাত হানতো। সুন্দরবন রক্ষার ক্ষেত্রে একটা রাষ্ট্রীয় নীতিমালা করা উচিত। দলমত নির্বিশেষে সেটা মেনে চলবে। সুন্দরবন উপকূল এলাকার মানুষের সুবিধার কথা চিন্তা করে এই নীতিমালা করা প্রয়োজন।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশের সমান ভালোবাসা সুন্দরবনের ওপর রাখতে হবে। বড় বড় ঝড়ঝঞ্ঝা হলো, জলোচ্ছ্বাস হলো। সুন্দরবন না থাকলে ক্ষয়ক্ষতি কি হতো বলা যাবে না। কাজেই বাংলাদেশ ও সুন্দরবন সমার্থক। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র করে সুন্দরবনের ক্ষতি করা হচ্ছে। ইউনেস্কো এটাকে সরিয়ে নেওয়ার কথা বলছে।
সাংবাদিক মোহসীন-উল হাকিম বলেন, বাঘ হত্যা ছাড়া সুন্দরবনে বাকি অপকর্মগুলো নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে থাকতে হয়। বাঘের সংখ্যা বাড়ানো ও সুরক্ষিত রাখাসহ আরও কিছু করণীয় আছে। যে এলাকায় মানুষ যায়, ওই এলাকা রক্ষায় কাজ করা হচ্ছে না। অনেক জায়গায় সাধারণ মানুষ মাছ ধরতে পারে না। কিছু এলাকা বনদস্যুরা নিয়ন্ত্রণ করেন। বাকিটা প্রভাবশালীরা দখল করে রেখেছে।
মোংলার সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা নূর আলম বলেন, পশুর নদীকে সুন্দরবনের প্রাণ বলা হয়। সেই পশুর নদীতে মাছ পাওয়া যায় না। একের পর এক বাঘ মারা যাচ্ছে। বলা হচ্ছে বার্ধক্যজনিত কারণে। আসল কারণ উদ্ঘাটিত হচ্ছে না। মাঝে মাঝেই সুন্দরবনে আগুন লাগছে। তখন বলা হয় বিড়ি খেয়ে ফেলার কারণে আগুন লাগে। গত ২০ বছরে অন্তত ৩০ বার আগুন লেগেছে। বন বিভাগের কমকর্তাদের সঙ্গে যোগাসাজশ করে এই আগুন লাগানো হয়। সুন্দরবনে বৃক্ষ নিধন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। হরিণ ধরে খাওয়া হয়। মুনাফালোভীরা সুন্দরবনকে ধ্বংস করার জন্য বিষ দিয়ে প্রাণিহত্যা করছে।
শরণখোলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ইসমাইল হোসেন লিটন বলেন, আগে শরণখোলা রেঞ্জে যে সংখ্যক হরিণ দেখা যেত সেটা এখন দেখা যায় না। বিষ দিয়ে মাছ ধরার বিষক্রিয়ায় শূকর, বাঘ ও অন্য প্রাণীরা হুমকির মুখে পড়ে। গত কয়েক বছরে চারটি বাঘ মারা গেছে। বলা হয়েছে লিভার সিরোসিস বা বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছে। কিন্তু সেগুলোর ঢাকা থেকে রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। গোলপাতা আহরণকারীরা ৫০০ মণের পারমিট নিয়ে ৩ হাজার মণ পাতা কাটে। এভাবে সুন্দরবনকে ধ্বংস করা হচ্ছে। কটকার হরিণগুলো অসুস্থ ও রোগাক্রান্ত। সুন্দরবন রক্ষা করতে হলে বন বিভাগকে ঢেলে সাজাতে হবে। সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পর্যটক ও লঞ্চ চলাচলে নিয়ন্ত্রণও আরোপ করা প্রয়োজন।
বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পরিবেশকর্মী হোসেন আজম, মাহবুব হোসেন প্রমুখ।
মন্তব্য করুন