ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সাবেক ডিরেক্টর ইনচার্জ ও বিসিবি পরিচালক মো. লোকমান হোসেন ভূঁইয়া ও বহিস্কৃত ওয়ার্ড কাউন্সিলর একেএম মমিনুল হক সাঈদের (ক্যাসিনো সাঈদ) বিরুদ্ধে চার্জশিট দিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

সোমবার কমিশন চার্জশিট দুটির অনুমোদন দিয়েছে। দুজন তদন্ত কর্মকর্তা শিগগির আলাদাভাবে চার্জশিট দু'টি আদালতে পেশ করবেন।

জানা গেছে, তদন্তে দুদক লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার নামে ৬ কোটি ৭২ লাখ ৬৩ হাজার ৫৭৩ টাকার ও একেএম মমিনুল হক সাঈদের নামে ৫ কোটি ৬০ লাখ ৩৩ হাজার ২২৪ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ পেয়েছে। 

মমিনুল হক সাঈদ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। ক্যাসিনো কান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে বহিস্কার করা হয়েছিল।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে করা মামলাটি তদন্ত করেছেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম।

একই বছরের ২০ নভেম্বর একেএম মমিনুল হক সাঈদের বিরুদ্ধে করা মামলাটি তদন্ত করেছেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান সরকার।

চার্জশিট দুটির অনুমোদন নিয়ে গতকাল দুদক সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করায় ওই দুই জনের বিরুদ্ধে চার্জিশিটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আসামি মমিনুল হক সাঈদের বিরুদ্ধে ওই পরিমাণ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন, নিজ ভোগদখল ও অবৈধ আয়ের ৭৮ লাখ ১১ হাজার ৯৭৪ টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে। অপরাধলব্ধ আয়ের উৎস গোপন ও অসৎ উদ্দেশ্যে তা স্থানান্তর, রূপান্তরের মাধ্যমে অর্থের অবস্থান গোপন করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

সচিব আরও বলেন, আরেক আসামি বিসিবির সাবেক পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁঁইয়া অসৎ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। যা জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ওই সম্পদ অসংগতিপূর্ণভাবে অর্জন করে তা নিজ ভোগ দখলে রেখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

জানা গেছে, দুই বছরের বেশি সময় পর তদন্ত শেষে চার্জশিট দু'টির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মামলায় উল্লেখ করা তাদের অবৈধ সম্পদের পরিমাণ চার্জশিটে বেড়েছে। আসামী লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অষ্ট্রেলিয়ায় প্রায় ৫৭ লাখ টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে।

লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে তার স্ত্রী নাবিলা লোকমান ও ছেলে লাবিব জুহায়ের হোসেনের নামে অষ্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড ব্যাংকিং গ্রুপ (এএনজেড), কমনওয়েলথ ব্যাংক অব অষ্ট্রেলিয়া (সিবিএ) ও জেস্‌ ন্যাশনাল অষ্ট্রেলিয়া ব্যাংক লিমিটেড (এনএবি) নামের তিন ব্যাংকের ৭টি হিসাবে অষ্ট্রেলিয়া ও দুবাই থেকে প্রায় ১ লাখ অষ্ট্রেলিয়ান ডলার নগদে ও স্থানান্তরের জমা করে

বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশি টাকায় ৫৭ লাখ ৬৩ হাজার ৮০ টাকা পাচার করেছেন। এসব টাকা তিনি অবৈধ কার্যমের মাধ্যমে অর্জন ও পাচার করে অষ্ট্রেলিয়ার ওইসব ব্যাংক হিসাবে জমা করেছেন।

পাচার টাকা ফেরত আনতে দেশটিতে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠিয়েছে দুদক পাঠিয়েছে দুদক। এখন পর্যন্ত দুদওেকর ওই চিঠির জবাব দেওয়া হয়নি।

ওই দুই আসামীর বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। দুদক আইন-২০০৪ এর ২৭(১) ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারাসহ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় চার্জশিট দু'টির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।