ভর্তিজট পাকিয়েছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ২০২০ সালের উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়াই এখনও শেষ করতে পারেনি। এরই মধ্যে রোববার ২০২১ সালের উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ হয়েছে। তারাও ভর্তি প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। তাদের ভর্তি প্রক্রিয়াও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সমানতালে এগিয়ে নিতে হবে। করোনার কারণেই এ জট পেকেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ডিনরা।
অবশ্য যেসব বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শেষ করতে পেরেছে, তারা আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সশরীরে ক্লাস শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে, উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষায় এবার পাস করেছে প্রায় ১৩ লাখ ৭ হাজার শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসন খালি আছে ১৪ লাখ ১৮ হাজার। তবে সবাই ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলেও উচ্চশিক্ষায় এ বছর (২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে) পাঁচ লাখের বেশি আসন খালি থাকবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় এখনও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করে ক্লাস শুরু করতে পারেনি। সাধারণত প্রতিবছর নভেম্বরের মধ্যে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করে ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করে। উপাচার্যরা জানিয়েছেন, আবাসিক হলগুলোর বর্তমান পরিস্থিতি ও নানা বাস্তবতার নিরিখে একসঙ্গে দুটি প্রথম বর্ষ চালানো সম্ভব নয়। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের সঙ্গে বসে কীভাবে সংকট কাটানো যায়, সেটার উপায় বের করবেন।
জানা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজধানীর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এখনও গত বছরের ভর্তি প্রক্রিয়াই শেষ করতে পারেনি। মহামারির কারণে টানা দেড় বছর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এবং উচ্চ মাধ্যমিকের অটোপাসের সিদ্ধান্ত দেরিতে হওয়ায় ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষা পিছিয়ে যায়। গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় খুললেও গত ২৩ জানুয়ারি ফের বন্ধ হয়ে যায়। দফায় দফায় বন্ধের কারণে ভর্তি প্রক্রিয়া বেশি এগোয়নি। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন ইউজিসিও।
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, মহামারিসহ নানা কারণে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রক্রিয়ায় পিছিয়ে গেছে। ফলে শিক্ষার্থীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, উপাচার্যদের সঙ্গে বসে এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে হবে।
ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, একই সঙ্গে দুটি প্রথম বর্ষ তো বিশ্ববিদ্যালয়ে চালানো সম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সংকট সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে হবে। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা এক বছরেরও বেশি সময় এরই মধ্যে হারিয়েছে। নতুন এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীরাও প্রায় আট মাস হারিয়েছে। সরকার এবং ইউজিসি মিলে আর যেন তাদের একাডেমিক সময় নষ্ট না হয়, সেই উদ্যোগ নিতে পারে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) গত ২২ জানুয়ারি থেকে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করেছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও গত বছরের শেষ দিকে ক্লাস শুরু করে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (বিডিইউ)-এর উপাচার্য এবং গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার কারিগরি কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ নূর বলেন, দুটি ব্যাচ পরপর উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ায় কাছাকাছি সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়টি সামনে চলে এসেছে।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ বলেন, করোনাকালে উচ্চশিক্ষাসহ সব স্তরে শিখন ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবং একাডেমিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সরকারকে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে।
তবু খালি থাকবে উচ্চশিক্ষার ৫ লাখ আসন :ইউজিসি থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, উচ্চ মাধ্যমিকে এবার পাস করেছে প্রায় ১৩ লাখ ৭ হাজার শিক্ষার্থী। আর দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আসন আছে ১৪ লাখ ১৮ হাজার। সবাই ভর্তি হলেও পাঁচ লাখের বেশি আসন খালি থাকবে। উচ্চশিক্ষায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০ হাজার আসন আছে। এ ছাড়া ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই লাখ ৩ হাজার ৬৭৫, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন কলেজে ডিগ্রি পাস ও স্নাতকে ১০ লাখ ৯৩ হাজার ৮১১, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ফাজিল ও অনার্স মাদ্রাসায় ৬০ হাজার আসন আছে প্রথম বর্ষে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা নির্ধারিত নেই। তবে সর্বশেষ ৭৮ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় গত বছর। দুটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৪০, সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ১০ হাজার ৪০৪, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজে ২৩ হাজার ৩৩০ আসন আছে। চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ৭২০, ছয়টি টেক্সটাইল কলেজে ৭২০, সরকারি ও বেসরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি প্রতিষ্ঠানে পাঁচ হাজার ৬০০, ১৪টি মেরিন অ্যান্ড অ্যারোনটিক্যাল কলেজে ৬৫৪, ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ৩ হাজার এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ২৯০টি আসন রয়েছে।

বিষয় : বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তিজট

মন্তব্য করুন