- বাংলাদেশ
- গণতন্ত্র নেই গণতন্ত্রের লাশ পড়ে আছে : মাহবুব তালুকদার
গণতন্ত্র নেই গণতন্ত্রের লাশ পড়ে আছে : মাহবুব তালুকদার

বিদায়ের দিনেও আলাদা সংবাদ সম্মেলন করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। বলেছেন, মেয়াদের পাঁচ বছর তিনি শুধু 'নীরব জনগোষ্ঠীর' মুখপাত্র হয়েই কথা বলে গেছেন। সব সময় নীরব জনগোষ্ঠীর ভাষা বোঝার চেষ্টা করেছেন। যাদের কথা সামনে আসে না, রাজনৈতিক দল বলে না, সেসব অশ্রুত ভাষা বোঝার চেষ্টা করেছেন।
গতকাল সোমবার দায়িত্বের শেষ দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা এবং দুই নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম ও কবিতা খানম নির্বাচন ভবনে বিদায়ী ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের সামনে আসেন। নির্বাচন কমিশনার শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী অসুস্থতার কারণে ব্রিফিংয়ে ছিলেন না। আর মাহবুব তালুকদার সেই ব্রিফিংয়ে না গিয়ে নিজের কক্ষে আলাদাভাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ ভোট সম্পর্কে মাহবুব তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, 'এই নির্বাচন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে যে, ওই নির্বাচনে গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্রের লাশ পড়ে আছে। সৎকারের দায়িত্ব কে নেবে? কথাটা রূপকার্থে বলা হলেও- এটাই সত্য।'
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার মন্তব্য, নির্বাচন কমিশনে বিএনপির মুখপাত্র মাহবুব তালুকদার- এই অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে তিনি বলেন, "আমি যে বিএনপির মুখপাত্র, এটা আমি প্রথম জেনেছি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের প্রেস ব্রিফিং থেকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমি যখনই দৃঢ়ভাবে কোনো বক্তব্য পেশ করি, তখনই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ লোক সমালোচনা করে বলে যে, 'সে তো বিএনপির সুরে কথা বলে'।''
বরাবরের মতো এবারের সংবাদ সম্মেলনেও মাহবুব তালুকদার লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তবে প্রথমবারের মতো তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন।
২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেওয়া কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের কমিশনের গতকাল ছিল শেষ দিন। শেষ দিনেও পৃথক সংবাদ সম্মেলনের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মাহবুব তালুকদার বলেন, এখানে মুক্তভাবে কথাগুলো বলা সম্ভব হয়েছে। ওখানে এই কথাগুলো মানানসই বলে তিনি মনে করেন না।
নিজেদের মেয়াদের ইসির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ নিয়ে বিব্রত বোধ না হলেও গণতন্ত্রের কথা বলতে গিয়ে হেরে যাওয়ার হতাশার কথা বলেন এই নির্বাচন কমিশনার। কমিশনার হিসেবে ইসি সভায় সব সময় তাকে নিগৃহীত হতে হয়েছে- এমন অভিযোগ তুলে মাহবুব তালুকদার বলেন, তিনি পাঁচজনের একজন। গণতন্ত্রের কথা বলতে গিয়ে, গণতন্ত্রের জন্য সংখ্যালঘু হিসেবে তিনি হেরে গেলেন। এমনও ঘটনা রয়েছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনের কমিশনে কথা বলতে গিয়ে তাকে বক্তব্য রাখতে দেওয়া হয়নি সংবিধান রক্ষার দোহাই দিয়ে।
এই কমিশনার বলেন, 'বাংলাদেশের মানবাধিকার সম্পর্কে কথা বলা অমুলক। মানবাধিকার নেই, মানবিক মর্যাদা নেই, গণতন্ত্র না থাকলে এসব থাকে না। বিশ্বে সম্মানজনক রাষ্ট্র হিসেবে আসীন হতে হলে গণতন্ত্রের শর্তগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে। ভোটাধিকার ও মানবাধিকার একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা থেকে এর উৎপত্তি।'
মাহবুব তালুকদার বলেন, বর্তমান অবস্থায় উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। আইনপ্রণেতারা আইন প্রণয়নের চেয়ে উন্নয়নেই বেশি আগ্রহী। কিন্তু উন্নয়ন কখনও গণতন্ত্রের বিকল্প ব্যবস্থা নয়।
সদ্য সমাপ্ত ইউপি ভোট নিয়ে তিনি বলেন, 'নির্বাচনের নামে সারাদেশে এমন অরাজকতা কখনও কাঙ্ক্ষিত ছিল না। তৃণমূল পর্যায়ে এই নির্বাচন দ্বন্দ্ব-সংঘাতের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে দিয়েছে। অন্যদিকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পদে আসীন হওয়াকে নির্বাচন বলা যায় কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।'
বিদায়ের সময় আত্মবিশ্নেষণ করে মাহবুব তালুকদার বলেন, 'নির্বাচন-সংশ্নিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অনিয়ম, পক্ষপাতিত্ব, জালিয়াতি ইত্যাদি সম্পর্কে ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা যেসব অভিযোগ করেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দৃষ্টান্ত বিরল। লিখিতভাবে যেসব অভিযোগ পাঠানো হয়, তারও যথাযথ নিষ্পত্তি হয় না। অধিকাংশ অভিযোগই আমলে না নিয়ে নথিভুক্ত করা হয় বা অনেক ক্ষেত্রে নথিতেও তার ঠাঁই হয় না। আমাদের কার্যকালের শেষ পর্যায়ে এসে গত কয়েক মাসে অবশ্য এর কিছু ব্যতিক্রম লক্ষ করা যাচ্ছে।'
নির্বাচন নিয়ে তার নানা সময়ে দেওয়া বক্তব্য কোনো কাজে আসেনি- এমন আক্ষেপ করে তিনি বলেন, 'নির্বাচন নিয়ে গত পাঁচ বছরে যা কিছু বলেছি, তাতে কোনো ফলোদয় হয়েছে বলে মনে হয় না। আগেও বলেছি, নির্বাচন কমিশন গঠন আইন বাধ্যতামূলক। তবে আইনটি সব রাজনৈতিক দলের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলে সংকটের সমাধান হবে না। এখন পর্যন্ত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহণের কোনো পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে না। এতে সংকট আরও ঘনীভূত হবে। আশাবাদী মানুষ হিসেবে আমি সব সংকটের সমাধান দেখতে চাই।'
নির্বাচনে জনমানসের প্রতিফলন একান্ত অপরিহার্য উল্লেখ করে এই কমিশনার বলেন, 'ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সর্বত্র জনমানসের প্রতিফলন একান্ত অনুপস্থিত। এতে বিশেষভাবে টাকার খেলাই প্রতিভাত হয়। রাজনীতি ধীরে ধীরে ব্যবসায়ীদের করতলগত হয়ে যাচ্ছে। আমার প্রশ্ন, আইনপ্রণেতারা ভবিষ্যতে আইন ব্যবসায়ী হয়ে যাবেন না তো?'
অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বাধাবিঘ্নগুলো দূর করতে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার প্রয়োজন বলে জানান মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, এ জন্য সংবিধান ও বিধিবিধানের পরিবর্তন প্রয়োজন হতে পারে।
গতকাল সোমবার দায়িত্বের শেষ দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা এবং দুই নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম ও কবিতা খানম নির্বাচন ভবনে বিদায়ী ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের সামনে আসেন। নির্বাচন কমিশনার শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী অসুস্থতার কারণে ব্রিফিংয়ে ছিলেন না। আর মাহবুব তালুকদার সেই ব্রিফিংয়ে না গিয়ে নিজের কক্ষে আলাদাভাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ ভোট সম্পর্কে মাহবুব তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, 'এই নির্বাচন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে যে, ওই নির্বাচনে গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্রের লাশ পড়ে আছে। সৎকারের দায়িত্ব কে নেবে? কথাটা রূপকার্থে বলা হলেও- এটাই সত্য।'
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার মন্তব্য, নির্বাচন কমিশনে বিএনপির মুখপাত্র মাহবুব তালুকদার- এই অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে তিনি বলেন, "আমি যে বিএনপির মুখপাত্র, এটা আমি প্রথম জেনেছি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের প্রেস ব্রিফিং থেকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমি যখনই দৃঢ়ভাবে কোনো বক্তব্য পেশ করি, তখনই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ লোক সমালোচনা করে বলে যে, 'সে তো বিএনপির সুরে কথা বলে'।''
বরাবরের মতো এবারের সংবাদ সম্মেলনেও মাহবুব তালুকদার লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তবে প্রথমবারের মতো তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন।
২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেওয়া কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের কমিশনের গতকাল ছিল শেষ দিন। শেষ দিনেও পৃথক সংবাদ সম্মেলনের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মাহবুব তালুকদার বলেন, এখানে মুক্তভাবে কথাগুলো বলা সম্ভব হয়েছে। ওখানে এই কথাগুলো মানানসই বলে তিনি মনে করেন না।
নিজেদের মেয়াদের ইসির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ নিয়ে বিব্রত বোধ না হলেও গণতন্ত্রের কথা বলতে গিয়ে হেরে যাওয়ার হতাশার কথা বলেন এই নির্বাচন কমিশনার। কমিশনার হিসেবে ইসি সভায় সব সময় তাকে নিগৃহীত হতে হয়েছে- এমন অভিযোগ তুলে মাহবুব তালুকদার বলেন, তিনি পাঁচজনের একজন। গণতন্ত্রের কথা বলতে গিয়ে, গণতন্ত্রের জন্য সংখ্যালঘু হিসেবে তিনি হেরে গেলেন। এমনও ঘটনা রয়েছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনের কমিশনে কথা বলতে গিয়ে তাকে বক্তব্য রাখতে দেওয়া হয়নি সংবিধান রক্ষার দোহাই দিয়ে।
এই কমিশনার বলেন, 'বাংলাদেশের মানবাধিকার সম্পর্কে কথা বলা অমুলক। মানবাধিকার নেই, মানবিক মর্যাদা নেই, গণতন্ত্র না থাকলে এসব থাকে না। বিশ্বে সম্মানজনক রাষ্ট্র হিসেবে আসীন হতে হলে গণতন্ত্রের শর্তগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে। ভোটাধিকার ও মানবাধিকার একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা থেকে এর উৎপত্তি।'
মাহবুব তালুকদার বলেন, বর্তমান অবস্থায় উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। আইনপ্রণেতারা আইন প্রণয়নের চেয়ে উন্নয়নেই বেশি আগ্রহী। কিন্তু উন্নয়ন কখনও গণতন্ত্রের বিকল্প ব্যবস্থা নয়।
সদ্য সমাপ্ত ইউপি ভোট নিয়ে তিনি বলেন, 'নির্বাচনের নামে সারাদেশে এমন অরাজকতা কখনও কাঙ্ক্ষিত ছিল না। তৃণমূল পর্যায়ে এই নির্বাচন দ্বন্দ্ব-সংঘাতের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে দিয়েছে। অন্যদিকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পদে আসীন হওয়াকে নির্বাচন বলা যায় কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।'
বিদায়ের সময় আত্মবিশ্নেষণ করে মাহবুব তালুকদার বলেন, 'নির্বাচন-সংশ্নিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অনিয়ম, পক্ষপাতিত্ব, জালিয়াতি ইত্যাদি সম্পর্কে ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা যেসব অভিযোগ করেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দৃষ্টান্ত বিরল। লিখিতভাবে যেসব অভিযোগ পাঠানো হয়, তারও যথাযথ নিষ্পত্তি হয় না। অধিকাংশ অভিযোগই আমলে না নিয়ে নথিভুক্ত করা হয় বা অনেক ক্ষেত্রে নথিতেও তার ঠাঁই হয় না। আমাদের কার্যকালের শেষ পর্যায়ে এসে গত কয়েক মাসে অবশ্য এর কিছু ব্যতিক্রম লক্ষ করা যাচ্ছে।'
নির্বাচন নিয়ে তার নানা সময়ে দেওয়া বক্তব্য কোনো কাজে আসেনি- এমন আক্ষেপ করে তিনি বলেন, 'নির্বাচন নিয়ে গত পাঁচ বছরে যা কিছু বলেছি, তাতে কোনো ফলোদয় হয়েছে বলে মনে হয় না। আগেও বলেছি, নির্বাচন কমিশন গঠন আইন বাধ্যতামূলক। তবে আইনটি সব রাজনৈতিক দলের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলে সংকটের সমাধান হবে না। এখন পর্যন্ত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহণের কোনো পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে না। এতে সংকট আরও ঘনীভূত হবে। আশাবাদী মানুষ হিসেবে আমি সব সংকটের সমাধান দেখতে চাই।'
নির্বাচনে জনমানসের প্রতিফলন একান্ত অপরিহার্য উল্লেখ করে এই কমিশনার বলেন, 'ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সর্বত্র জনমানসের প্রতিফলন একান্ত অনুপস্থিত। এতে বিশেষভাবে টাকার খেলাই প্রতিভাত হয়। রাজনীতি ধীরে ধীরে ব্যবসায়ীদের করতলগত হয়ে যাচ্ছে। আমার প্রশ্ন, আইনপ্রণেতারা ভবিষ্যতে আইন ব্যবসায়ী হয়ে যাবেন না তো?'
অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বাধাবিঘ্নগুলো দূর করতে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার প্রয়োজন বলে জানান মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, এ জন্য সংবিধান ও বিধিবিধানের পরিবর্তন প্রয়োজন হতে পারে।
মন্তব্য করুন