- বাংলাদেশ
- বিদ্যুৎ চুরি বন্ধে স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার চালু হচ্ছে
বিদ্যুৎ চুরি বন্ধে স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার চালু হচ্ছে

উৎপাদন থেকে গ্রাহকের ব্যবহার পর্যায়ে বিদ্যুৎ পৌছানোর প্রক্রিয়ায় শক্তির অপচয়কে সিস্টেম লস বলা হয়। এ অপচয়ের একটা অংশ যুক্তিসঙ্গত। বাকিটা চুরি বা কারসাজি। বছরের পর বছর ধরে চলছে সিস্টেম লসের নামে এ চুরি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদ্যুৎ বিভাগের পদক্ষেপের ফলে সিস্টেম লস কিছুটা কমেছে। তবে এখনো বিদ্যুতের ব্যাপক চুরি হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে নতুন একটি প্রকল্প নিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এ প্রকল্পে কারিগরি এবং ঋণসহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটারিং প্রজেক্ট ইন ডিস্ট্রিবিউশন জোনস অব পিডিবি নামে এ প্রকল্পটির মাধ্যমে অনুমোদিত লোডের চেয়ে বাড়তি লোড ব্যবহার এবং মিটার টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ চুরি রোধ করা যাবে। বিদ্যমান পোস্টপেইড মিটারিং সিস্টেমে অনেক গ্রাহক যথাসময়ে বিল পরিশোধ করেন না। এতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি হয় সরকারের। স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার এই ক্ষতি বন্ধ করবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে পিডিবির সিস্টেমে লসের হার ছিল ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) লসের হার ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ। নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (এনইএসসিও) ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। অবশ্য আরইবি এবং ডিপিডিসি ছাড়া অন্য সব প্রতিষ্ঠানের সিস্টেম লস আগের অর্থবছরের চেয়ে কিছুটা কমেছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ঢাকার বাইরে ১০ লাখ ২০ হাজার সিঙ্গেল ফেজ স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপন করা হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২০ কোটি টাকা। এ ব্যয়ের বড় একটা অংশ ৩২৯ কোটি টাকা যোগান দিচ্ছে এডিবি। সরকার যোগান দিচ্ছে ১৭০ কোটি টাকা। বাদ বাকি ১২১ কোটি টাকা বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব। পিডিবি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। সরকারের অনুমোদন পেলে আগামী মাসেই প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হবে। শেষ হবে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের পরিকল্পনা অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব নুরুল আলম সমকালকে বলেন, রাজধানীতে স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটারিংয়ের খুব ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে। সিস্টেম লস, মিটার টেম্পারিংয়ের মতো বেশ কিছু অনিয়ম রোধ করা সম্ভব হয়েছে। গ্রাহকরাও মানসম্মত সেবা পাচ্ছেন। প্রিপেইড মোবাইল সেবার মতোই অগ্রিম বিল পরিশোধ করে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন তারা। কতটুকু ব্যবহার হলো, কতটা বাকি আছে, কখন রিচার্জ করতে হবে এ বিষয়গুলো চোখের সামনেই দেখা যাচ্ছে। আবার সময় মতো বিল না পেয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কঠিন কাজটিও করতে হয়না সেবাদাতাদের।
আগামীতে আরও আধুনিক মিটারের কথা সরকারের ভাবনায় রয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি জানান, সারা দেশের সব গ্রাহককেই পর্যায়ত্রক্রমে এ সেবার আওতায় আনার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।
প্রকল্পের বিস্তারিত উন্নয়ন প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুযায়ী, স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটারিংয়ের সুবিধার আওতায় আসবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, সীতাকুণ্ড, হাটহাজারী, পটিয়া, কক্সবাজার সদর, বান্দরবান সদর, রাঙ্গামাটি সদর ও খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা। এছাড়া কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, ফেনী সদর, কিশোরগঞ্জ সদর, বাজিতপুর, ভৈরব, টাঙ্গাইল সদর, ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলা ও সিলেট সিটি করপোরেশন।
মন্তব্য করুন