ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে দিনব্যাপী ‘শতবর্ষের মিলনমেলা’ শুরু হচ্ছে আগামীকাল শনিবার। মিলনমেলাকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে সার্বিক প্রস্তুতিও শেষ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এই মিলনমেলার আয়োজন করেছে ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন (ডুয়া)’।

শুক্রবার খেলার মাঠে সরেজমিনে প্রথমেই নজর কেড়ে নেয় মূল ফটক। কার্জন হলের মূল ভবনের আদলে তৈরি করা হয়েছে এই ফটকটি। ভেতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে মিলনমেলা স্থলের বিভিন্ন জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ছবি। আরেকটু সামনে এগোলেই চোখে পড়ে মাঠের পশ্চিম ও পূর্ব পাশে অবস্থিত সাদা রঙের বিশাল দুটি প্যান্ডেল। পশ্চিম পাশের প্যান্ডেলে মূল অনুষ্ঠানের কার্যক্রম চলবে। পূর্ব পাশের প্যান্ডেল দুপুরের খাবার গ্রহণের জন্যে বানানো হয়েছে।

একসঙ্গে চার হাজার মানুষ সেখানে বসে খাবার খেতে পারবেন। মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোণে খ্যাতিমান চিত্রশিল্পীদের চিত্রকর্ম প্রদর্শন করা হবে। দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যে শতাধিক উন্নত টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মিলনমেলার পুরো অনুষ্ঠান যেন সকলে উপভোগ করতে পারেন, এজন্যে মাঠজুড়ে এলইডি স্ক্রিনের ব্যবস্থা হয়েছে। মাঠজুড়ে অনেকগুলো ছোট ছোট তাবু স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে অ্যালামনাইরা বসে স্মৃতিচারণ করতে পারবেন।

মিলনমেলার সার্বিক বিষয়ে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ. কে. আজাদের সভাপতিত্বে এবং মহাসচিব রঞ্জন কর্মকারের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মিলনমেলা আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক মোল্লা মো. আবু কাওছার, সংগঠনের সহ-সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ), যুগ্ম মহাসচিব আশরাফুল আলম মুকুল, সুভাষ সিংহ রায়, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কাজী মোয়াজ্জেম হোসেন প্রমুখ। 

অনুষ্ঠানসূচির মধ্যে রয়েছে- সকাল সাড়ে ৮টা থেকে অ্যালামনাই ও অতিথিরা খেলার মাঠে প্রবেশ করবেন। সকাল ১০টায় পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ ও শোক প্রস্তাবের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হবে। ১০টা ৫০ মিনিটে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন প্রকাশিত গ্রন্থসমূহের মোড়ক উন্মোচন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ শিল্পীর ১০০ ছবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রপ্রদর্শনী উদ্বোধন করা হবে।

এরপর সম্মানিত অতিথিগণ বক্তব্য রাখবেন। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে ‘বাংলাদেশের পদযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ গুণীজনকে মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান করা হবে। এরপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন একক পরিবেশনা করবেন।

সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে মোল্লা মো. আবু কাওছার সমকালকে জানান, এই মিলনমেলাকে ঘিরে গোটা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশনের নিরাপত্তা সাব-কমিটি কাজ করছে। করোনার ঝুঁকি এড়াতে যে অ্যালামনাই দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন, তারাই কেবল রেজিস্ট্রেশন করতে পেরেছেন। স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। প্রত্যেক অ্যালামনাইকে মিলনমেলার উপহার হিসেবে স্যানিটাইজার ও মাস্ক দেওয়া হয়েছে। এরপরও মিলনমেলা স্থলে পর্যাপ্ত মাস্ক ও স্যানিটাইজার মজুত থাকবে।

তিনি জানান, মিলনমেলায় সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার এবং সন্ধ্যার নাশতার ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া সেখানে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা থাকবে। সারাদিন পর্যাপ্ত চা-কফির ব্যবস্থা থাকবে। এ জন্য ৫০ হাজার কাপের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও কাপের ব্যবস্থা করা হবে। মিলনমেলার মাঠে পর্যাপ্ত ওষুধ এবং অন্যান্য মেডিকেল সুযোগ-সুবিধাসহ একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রও রয়েছে।

২২ জন ডাক্তার সেখানে চিকিৎসা সেবা প্রদান করবেন। পুলিশ, বিএনসিসি, রোভার স্কাউট এবং অ্যালামনাই অ্যাসোসিশনের বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে প্রায় ৮০০ জন স্বেচ্ছাসেবক মিলনমেলায় দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া মিলনমেলাকে ঘিরে যেন যানজটের সৃষ্টি না হয়, এ জন্য ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হবে। প্রত্যেক ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে দুইজন করে স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন। শহীদ মিনার ও দোয়েল চত্বর এলাকায় গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

মিলনমেলার বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রঞ্জন কর্মকার বলেন, অনুষ্ঠানে আমাদের সংগঠনের আজীবন সদস্যরা পরিবারসহ উপস্থিত থাকবেন। আমরা প্রত্যাশা করছি বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২৫টি দেশে অবস্থানরত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই আমাদের অনুষ্ঠানে যুক্ত হবেন। অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে আমাদের অনেকগুলো প্রকাশনার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। আশা করি আনন্দ উল্লাসে, শপথে অঙ্গীকারে আমরা মিলনমেলা সম্পন্ন করতে পারব।

সংবাদ সম্মেলনে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ. কে. আজাদ বলেছিলেন, শতবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে পৌঁছানোর কথা ছিল সেখানে আসতে পারেনি। আমরা দেখেছি বিশ্বের ১০০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিংয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়র ১০০ র‌্যাংকিংয়ের ভেতরে আনতে আমাদের সংগঠন কাজ করছে। ৪০ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সুযোগসুবিধাগুলো ছিল সেগুলো দিন দিন কমে আসছে। ৬০- এর দশকের পাঠাগার, মেডিকেল সেন্টার কিন্তু এখনো আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বাড়লেও সেগুলোর ধারণক্ষমতার ও সক্ষমতা বাড়েনি। তাছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী অর্থাভাবে যথাযথভাবে তাদের শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারে না। ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন তাদের জন্য কাজ করবে।