ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে ‘মিনি গেস্টরুমে’ ডেকে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে হলের তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত ছাত্রলীগের চার কর্মীর বিরুদ্ধে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবু তালিব পরে ভয়ে হল ছেড়েছেন।

ভূক্তভোগী শিক্ষার্থী ও হল সূত্রে জানা যায়, ছাত্রলীগের বঙ্গবন্ধু হল শাখার নতুন কমিটি গঠনের পর সভাপতির দায়িত্ব পান মেহেদী হাসান শান্ত। এরপরই বেড়েছে ‘গেস্টরুমে’ নির্যাতনের হার। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতেও ঢাবির অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবু তালিব গেস্টরুমে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বড় ভাইদের সামনে ‘সিগারেট খাওয়ার’ জন্য তাকে গেস্টরুমে ডেকে আবারও সিগারেট খেতে বাধ্য করেছেন সমাজকল্যাণ ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী শেখ শান্ত আলম, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ইমদাদুল হক বাঁধন, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শাহাবুদ্দিন ইসলাম বিজয় ও আইন বিভাগের নাহিদুল ইসলাম শান্ত। এরা সবাই তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

গেস্টরুমে থাকা তালিবের সহপাঠীরা বলেন, ‘‘তালিবের মুখে জোরপূর্বক সিগারেট জ্বালিয়ে দিয়ে হাত দিয়ে ধরা ছাড়া, মুখ থেকে নামানো ছাড়া, মুখ দিয়ে ধোঁয়া না ছেড়ে পুরো সিগারেট খেতে বলেন শান্ত ও বাঁধন। ছেলেটির হাত পিছনের দিকে রাখতে বাধ্য করা হয়। জ্বলন্ত সিগারেট মুখে, আর তার সব ধোঁয়া নাক দিয়ে যাচ্ছিল। সে কান্না করছিল দেখে বাঁধন তাচ্ছিল্য করে বলে, ‘কান্দস ক্যান, তুই কি মেয়ে নাকি?’ এভাবে সিগারেটের দুই তৃতীয়াংশের ধোয়া নিতে বাধ্য করার পর একপর্যায়ে বাধন বলে ওঠে - ‘এই তুই তো মরে যাবি’।’’ তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে শান্ত, বাঁধনসহ অন্যরা।

হল ছাত্রলীগের একাংশ জানায়, ‘হল ছাত্রলীগের সভাপতি শান্তর বাড়ি ময়মনসিংহে। সে হল ছাত্রলীগের দায়িত্বে আসার পর থেকে ময়মনসিংহ থেকে আসা তার অনুগত, বিশেষ করে তৃতীয় বর্ষে পড়ুয়া নেতাকর্মীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা বা উত্তরবঙ্গ থেকে আসা নেতাকর্মীদের ওপর রীতিমত কর্তৃত্ব করে তারা। এরকম কর্তৃত্ব ও নির্যাতনের ঘটনা শান্তর প্রত্যক্ষ মদদে ঘটাচ্ছে তারা। ছাত্রলীগের অলিখিত নিয়মানুয়ায়ী, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের গেস্টরুম নেন দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা। তবে বঙ্গবন্ধু হলে দ্বিতীয় বর্ষকে গেস্টরুম নিতে দেওয়া হচ্ছে না। কারণ, তারা জুনিয়রদের ‘ঠিকমত  শাসন করতে পারছেন না।’

এর আগে, গত ১ ও ৩ মার্চ গেস্টরুমে তুচ্ছ কারণে মোশাররফ হোসেন, সিরাজুম মনির ও মীর সাদ নামের দ্বিতীয় বর্ষের দুই শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। তাদের বের করে দেয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শাহনেওয়াজ আরেফিন পল্লব ও শেখ শান্ত আলম। পরে ঘটনা জানাজানি হলে তাড়াহুড়ো করে তাদের হলে তোলেন হল ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শান্ত।

ঢাবিতে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ুয়া হলে থাকা বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ছাত্রলীগের নির্যাতন সহ্য করতে তাদের অন্তত ১০ জন সহপাঠী হল ছেড়ে দিয়েছেন। তারা জানান, গত তিন ধরে ৩০১(ক) নম্বর কক্ষ তাদের পরীক্ষা থাকা সত্ত্বেও তালা মেরে বন্ধ রাখা হয়েছে। পরে তারা তালা ভেঙ্গে ফেলেন। গতকাল রাতে তাদের গেস্টরুমে ডেকে ‘কে তালা ভেঙ্গেছে’ তা বের করা চেষ্টা করা হয়। এ নিয়ে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছেন তারা।

তবে, অভিযোগসমূহের বিষয়ে মেহেদী হাসান শান্তকে একাধিকবারে ফোনে কল করে, মেসেজ পাঠিয়েও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এমনকি তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে হল থেকে বেরিয়ে যান তিনি।

এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আকরাম হোসেন বলেন, ‘যে অভিযোগগুলো এসেছে, আমরা বিষয়গুলো দেখবো। গেস্টরুমের (অতিথি কক্ষে) সিসিটিভি ফুটেজ চেক করবো।’ তবে হলের অতিথি কক্ষে নয়, বরং রুমেই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে- জানালে তিনি বলেন, ‘খোঁজ নিচ্ছি।’ এতদিনেই কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়গুলোতে আমাদের কাছে সরাসরি অভিযোগ আসে না। আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসলে আমরা ব্যবস্থা নেই।’