রাজধানী থেকে চট্টগ্রাম এবং উত্তরাঞ্চলের প্রধান দুই মহাসড়কেই তীব্র যানজটে ভোগান্তিতে পড়েছেন চালক ও যাত্রীরা। বৃহস্পতিবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রায় ৬৭ কিলোমিটারজুড়ে ছিল গাড়ির জট। আর সিরাজগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমে যানবাহনগুলো চলেছে ধীরগতিতে। মাঝে মধ্যে যানজটেও দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে দীর্ঘ সময়। দুই সড়কের বিভিন্ন স্থানে সংস্কার কাজ চলায় এবং টানা তিন দিনের ছুটিতে বাড়ি যেতে গাড়ির চাপ বাড়ায় এ সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে ময়নামতি থেকে দাউদকান্দি সেতু পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র জটের সৃষ্টি হয়। কুমিল্লায় হাইওয়ে পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহ জানান, মহাসড়কের দাউদকান্দির আমিরাবাদ-পুটিয়া পর্যন্ত দুটি লেনের ১৮ কিলোমিটার এলাকায় সকাল ৯টার দিকে সংস্কার কাজ শুরু করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। এ সময় প্রায় এক ঘণ্টা সড়কের দু'পাশই বন্ধ ছিল। পরে এক পাশ দিয়ে দুই অংশের গাড়ি চলাচল করেছে। বিকেল ৫টার দিকে কাজ বন্ধ হওয়ার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
হাইওয়ে পুলিশ ও সরেজমিনে দেখা যায়, মহাসড়কের ফেনী সীমান্ত থেকে দাউদকান্দি টোল প্লাজা পর্যন্ত ৯৭ কিলোমিটার এলাকায় চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সদর, মিয়াবাজার, সুয়াগাজী, পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড, ময়নামতি মোড়, নিমসার কাঁচাবাজার, চান্দিনা বাগুর বাসস্ট্যান্ড, মাধাইয়া বাজার, গৌরীপুর বাজার ও দাউদকান্দি টোল প্লাজা এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়।
এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দ থেকে সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় পর্যন্ত চট্টগ্রামগামী লেনে প্রায় সাত কিলোমিটার গাড়ির জট দেখা গেছে। ঢাকাগামী লেনেও লাঙ্গলবন্দ থেকে মদনপুর পর্যন্ত ছিল যানজট। দীর্ঘ সময় গাড়িতে থেকে এ সময় অনেকে বাসায় ফিরে যান।
জাকির হোসেন নামে এক প্রাইভেটকার চালক জানান, সকালে এ মহাসড়কে এসেই যানজটে পড়েন। ১৫ মিনিটের পথ দেড় ঘণ্টায়ও পার হতে পারেননি।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এ মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে অন্তত ১০টি পয়েন্টে যখন তখন যানজটের সৃষ্টি হয়। মহাসড়ক লাগোয়া স্থানে অবৈধ বাজার, অটোরিকশার স্ট্যান্ড, দোকানপাট ও বিভিন্ন স্থাপনার পাশাপাশি মাঝে মধ্যেই সংস্কার কাজের জন্য চার লেন করার পরও তার সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। অবৈধ স্থাপনা মাঝে মধ্যে উচ্ছেদ করলেও কিছুদিন না যেতেই ফের গড়ে ওঠে।
কুমিল্লা মোটর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম জানান, সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব কিংবা অন্য কোনো বড় ছুটিতে এ মহাসড়কে ঘরমুখী মানুষের চাপ বাড়ে। ওই সময় মহাসড়কের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় সংযোগ সড়কের মুখে আঞ্চলিক পরিবহনের স্ট্যান্ডের কারণে গাড়ি চলাচলে বিঘ্ন হয়ে যানজট প্রকট আকার ধারণ করে।
সওজ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী মাঝে মধ্যে ফোর লেনের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত করতে হয়। বৃহস্পতিবার দাউদকান্দি অংশে মেরামতের কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। উন্নয়ন কাজের জন্য জনগণকে কিছুটা কষ্ট শিকার করে নিতে হবে।
এদিকে যানজটের সুযোগে বিভিন্ন পরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। শিমরাইল থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত ৫০ টাকা এবং চট্টগ্রাম পর্যন্ত বাস ভাড়া ৫০ থেকে ২০০ টাকা বেশি নেওয়ার কথা জানিয়েছেন যাত্রীরা। একাধিক বাসের কাউন্টার কর্তৃপক্ষও বেশি ভাড়া নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তাদের দাবি, তীব্র যানজটের কারণে তাদের গাড়ি সময়মতো গন্তব্যে যেতে পারছে না, এজন্য বেশি ভাড়া নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ওসি জহুরুল হক এবং কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি মোহাম্মদ সাজ্জাদ করিম খান জানান, সংস্কার কাজ করায় কুমিল্লা অংশে যানজট হয়েছে। আর বুধবার গভীর রাতে মদনপুরে একটি সড়ক দুর্ঘটনা হয়। গাড়িটি সরাতে ঘণ্টাখানেক সময় লাগায় গাড়ির সারি তৈরি হয়ে যায়। এ ছাড়া টানা তিন দিনের ছুটিতে গাড়ির চাপ বাড়ায় সমস্যা বেড়েছে।
এদিকে সিরাজগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় যানবাহনের ধীরগতি দেখা গেছে। সেতুর পশ্চিমপাড়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের কয়েকটি স্থানে সংস্কার কাজের জন্য বৃহস্পতিবার সকাল থেকে থেমে থেমে যানজট তৈরি হয়। তীব্র গরমে ভোগান্তিতে পড়েন উত্তরের যাত্রীরা। যানজট নিয়ন্ত্রণে সেতুর পশ্চিম থানা ও কড্ডা ট্রাফিক পুলিশ এবং হাইওয়ে থানা পুলিশের অবস্থাও ছিল নাকাল।
স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক দিন ধরেই বঙ্গবন্ধু সেতুর উভয় দিকে যানবাহনের ধীরগতি যেন নিত্যসঙ্গী। বৃহস্পতিবার ছুটির কারণে গাড়ির চাপ বাড়ায় অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
রাজধানীর গুলশান এলাকার একটি আসবাবপত্র কোম্পানির সহকারী ব্যবস্থাপক তোহিদুজ্জামান ইমন বলেন, বুধবার রাত ৮টায় ঢাকার কল্যাণপুর থেকে রংপুরের বাসে যাত্রা করি। বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা ও সিরাজগঞ্জের কড্ডা এবং সব শেষ বগুড়ায় দীর্ঘ সময় আটকে ছিলাম। ভোরে পলাশবাড়ী নামার কথা থাকলেও চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা দেরিতে গন্তব্যে পৌঁছেছি।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ওসি মোসাদ্দেক হোসেন জানান, সেতুর পশ্চিমপাড়ে কড্ডার মোড়ে চার লেনের কাজ, নলকায় সেতু নির্মাণ এবং পাঁচিলায় সাসেক-২ প্রকল্পের ইন্টারচেঞ্জ ক্লোভারলিফ ফ্লাইওভারের কাজ চলায় এ সমস্যা প্রায়ই দেখা যায়। আবার ছুটির কারণে গাড়ির চাপ বেড়েছে। এতে বুধবার থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে সিরাজগঞ্জের নলকা পর্যন্ত যান নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন কুমিল্লা, দাউদকান্দি, সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ), সিরাজগঞ্জ ও উল্লাপাড়া প্রতিনিধি।