ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা
বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট প্রকল্প নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা
রাশেদ মেহেদী
প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২২ | ১৮:২২
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার জের ধরে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ প্রকল্প। প্রকল্পটি নিয়ে এখন ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ সমকালকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের নিষেধাজ্ঞার কারণে সহযোগিতার চুক্তি হওয়া রাশিয়ার কোম্পানি গ্লাস কসমভের পক্ষে প্রকল্পটি আদৌ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। তবে উত্তর আমেরিকা কিংবা পশ্চিম ইউরোপের কোনো দেশের সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি হলে নির্ধারিত ২০২৩ সালের মধ্যেই এটি নির্মাণ সম্ভব হবে। তবে স্যাটেলাইটটি নির্মাণ নিয়ে রাশিয়ার পাশাপাশি ফ্রান্সের সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা এখনও চলছে।
সূত্র আরও জানায়, এর আগে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানির নিজস্ব বিচার-বিশ্নেষণেই গ্লাস কসমভের নানা সীমাবদ্ধতার কথা উঠে এসেছিল। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর এখন এ কোম্পানির সঙ্গে আর্থিক লেনদেন, নির্মাণে মাইক্রোচিপ সংকট ও উৎক্ষেপণ প্ল্যাটফরম না পাওয়ার কয়েকটি নতুন সীমাবদ্ধতা সামনে এসেছে। একই সঙ্গে গ্লাস কসমভের সর্বশেষ কারিগরি উপস্থাপনায় লিও প্রকৃতির স্যাটেলাইটের ওজন ৮৫০ কেজি হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে বিশ্বে লিও স্যাটেলাইটের সর্বোচ্চ ওজন হয় ১০০ কেজি। এখানে ৮৫০ কেজি অস্বাভাবিক ওজন এবং এর জন্য উৎক্ষেপণ খরচ হবে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় আট গুণ।
যে কারণে অনিশ্চয়তা :প্রথমত, গ্লাস কসমভের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ নির্মাণে নতুন অনিশ্চয়তার ক্ষেত্রে প্রধান সংকট হচ্ছে মাইক্রোচিপ। কারণ মাইক্রোচিপ তৈরির সক্ষমতা রাশিয়ার নেই। রাশিয়ার কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানির কাছ থেকে মাইক্রোচিপ সংগ্রহ করে। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ায় মাইক্রোচিপ সরবরাহ বন্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো। ফলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আগে গ্লাস কসমভের পক্ষে এ স্যাটেলাইট নির্মাণ শুরু করাই সম্ভব হবে না।
দ্বিতীয়ত, রাশিয়ার কোম্পানিগুলো স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে কাজাখস্তানের একটি অঞ্চল থেকে। যুদ্ধাবস্থার কারণে এ অঞ্চল থেকে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের অনুমোদনও মিলবে না।
তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেন গেটওয়ে সুইফট রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেন স্থগিত করেছে। ফলে রাশিয়ার কোনো কোম্পানির সঙ্গে এ সময়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে আর্থিক লেনদেনও সম্ভব হবে না।
চতুর্থত, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ আর্থ অবজারভেটরি ক্যাটাগরির। এটি মূলত নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ, সমুদ্রসম্পদ গবেষণা, আবহাওয়া ও ভূমি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের কাজ করবে। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার কোনো কোম্পানি নির্মিত স্যাটেলাইটকে নিশ্চিতভাবেই তথ্য সংগ্রহে বাধা দেবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ পশ্চিমা দেশগুলো। ফলে রাশিয়ার কোম্পানির নির্মিত স্যাটেলাইট নিশ্চিতভাবেই পরিত্যক্ত হয়ে যাবে। এ ছাড়া রাশিয়ার কোম্পানি স্যাটেলাইট নির্মাণ করলে বাংলাদেশে বিদ্যমান গ্রাউন্ড স্টেশন ব্যবহার করা সম্ভব নাও হতে পারে। কারণ পশ্চিম ইউরোপের তত্ত্বাবধানে নির্মিত গ্রাউন্ড স্টেশন বিদ্যমান পরিস্থিতিতে রাশিয়ার কোম্পানিকে ব্যবহার করতে না দেওয়ার আশঙ্কা বেশি।
এখনও সম্ভাবনা শেষ হয়নি :বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট নির্মাণে গ্লাস কসমভের সঙ্গে শুধু একটি সহযোগিতা চুক্তি হয়েছে। এখনও আনুষ্ঠানিক সমঝোতা স্মারক সই হয়নি। ফলে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কোম্পানি উত্তর আমেরিকা কিংবা পশ্চিম ইউরোপের কোনো দেশের সঙ্গে স্যাটেলাইট নির্মাণের চুক্তি করলে এ প্রকল্প ২০২৩ সালের মধ্যেই নির্মাণ সম্ভব।
কোম্পানি চেয়ারম্যানের বক্তব্য :বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ সমকালকে বলেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টির পর বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট নির্মাণ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে, এটা সত্য। এ কারণে সরকারের পক্ষ থেকে এ প্রকল্প নিয়ে 'ওয়েট অ্যান্ড সি' নীতি অনুসরণের কথা বলা হয়েছে। কোম্পানিও সে কারণে ধীরে চলার নীতি অনুসরণ করছে। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে রাশিয়ার কোম্পানি বাদ দিয়ে হুট করে অন্য কোনো দেশের কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির সুযোগ নেই। কারণ রাশিয়ার কোম্পানির সঙ্গে একটা সহযোগিতা চুক্তি হয়েছে। তাই তারা শেষ পর্যন্ত কী করে, সেটা দেখার বিষয়।