- বাংলাদেশ
- জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে আলোকোজ্জ্বল সমাজ গড়তে হবে: আবু সাঈদ খান
জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে আলোকোজ্জ্বল সমাজ গড়তে হবে: আবু সাঈদ খান

দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেছেন, সবার জন্যে জ্ঞানচর্চার অবারিত সুযোগ নিশ্চিত হয়, এমন একটা সমাজ আমাদের চাওয়া। সম্পদই শেষ কথা নয়, জ্ঞানচর্চাই বড় কথা। কেননা সম্পদ থাকলেই একটা জাতি উন্নত হয় না। আমাদের অনেক ক্ষেত্রে সম্পদ রয়েছে। সেই সম্পদের সঙ্গে জ্ঞানচর্চার সংযোজন দরকার। দরকার রয়েছে একটি বুদ্ধিদীপ্ত প্রজন্ম, একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ। জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার সংগ্রামের মাধ্যমে একটি আলোকোজ্জ্বল সমাজ গড়তে হবে।
শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদস্থ অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ আইকিউ অলিম্পিয়াড (বায়ো)’-এর ৫ম আসরের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আবু সাঈদ বলেন, এদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমাদের জ্ঞানের ক্ষেত্র বিকশিত হয়েছে, অচলায়তন ভেঙেছে। যার কারণে আমাদের নতুন প্রজন্ম বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিত্বের পরিচয় দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের সমাজে এখনও অন্ধকার রয়েছে। রয়েছে কুসংস্কার, ধর্মীয় গোড়ামি, সাম্প্রদায়িকতা। এগুলো আমাদের মুক্তচিন্তার টুটি চেপে ধরতে চাইছে, বিভিন্নভাবে আক্রমণ করছে। এসবের কারণে আমাদের চিন্তার স্বাধীনতাকে আমরা প্রসারিত করতে পারছি না। জাতির সামনে এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা দেশ মাতৃকাকে হানাদার বাহিনীর হাত থেকে রক্ষার জন্যে কলম ছেড়ে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলাম। যুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনেছিলাম। বর্তমান প্রজন্মকে অস্ত্র ধরতে হবে না। তাদের কলম যুদ্ধ করতে হবে, মেধার যুদ্ধ করতে হবে। সেই যুদ্ধ হবে দেশের ভিতরে এবং দেশের বাইরে। আর সেই যুদ্ধের মাধ্যমে গৌরব ছিনিয়ে আনতে হবে।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে শিক্ষার হার বাড়লেও মান বাড়েনি বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, বিশ্বের সেরা ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নেই। এখনও এদেশের শিক্ষার মান যেন থমকে দাঁড়িয়ে আছে। এক্ষেত্রে মানসম্মত শিক্ষার পাশাপাশি সহশিক্ষাসহ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা আন্দোলন প্রয়োজন। একইসঙ্গে দরকার গবেষণা চর্চা।
তিনি বলেন, মানুষের মেধা সহজাত। লালন ও পরিচর্যা করে এই মেধাকে বিকশিত করতে হয়। মেধাকে বিকশিত করতে আইকিউ অলিম্পিয়াডের মতো সংগঠন গড়ে উঠেছে। তারা মেধাবীদের পরিচর্যা করে তাদের দেশের বাইরেও মেধার স্বাক্ষর রাখার সুযোগ করে দিয়েছে। তবে এটি যথেষ্ট নয়। কেননা ব্যক্তি উদ্যোগ কিংবা মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের উদ্যোগে গড়ে ওঠা এসব সংগঠনগুলোকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো পৃষ্ঠপোষকতা নেই। এ দেশের মন্ত্রী আমলারা বিদেশে বিনোদন ভ্রমণের জন্যে অনেক টাকা ব্যয় করে। অথচ এ ধরনের সংগঠনগুলোর পিছনে রাষ্ট্র দাঁড়ায় না। এটা আমাদের জন্যে দুর্ভাগ্যজনক। সুতরাং এক্ষেত্রে একটা সামগ্রিক প্রয়াস দরকার। সরকারকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
কথাসাহিত্যিক ডা. মোহিত কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট নিখিল চন্দ্র দত্ত, ঢাকা ইইম্পেরিয়াল কলেজের সহকারী অধ্যাপক নাদির হোসেন, ড. এ এম ওয়াজেদ মিয়া মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ফরহাদুল কবির, ব্রেইনেক্সের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন, নির্বাহী পরিচালক আবু সাত্তার, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য হুমায়ুন সুলতান প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন আইকিউ অলিম্পিয়াডের আহ্বায়ক মশিউর রহমান।
সভাপতির বক্তব্যে মোহিত কামাল শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, জীবনের প্রতিটি ধাপে সফলতার জন্যে প্রস্তুতির দরকার। প্রস্তুতি থাকলে সফলতা আসবেই। জীবন পুষ্পশয্যা নয়। জীবনে বিরূপ পরিস্থিতি আসবে। সেই পরিস্থিতিকে চিনে সেটি জয় করে জীবনে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের আইকিউর সঙ্গে আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা থাকতে হবে। এই দুটি বিষয় থাকলে একজন মানুষ জীবনে অনেক এগিয়ে যাবে। এজন্যে এই প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের বুদ্ধির সঙ্গে আবেগের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। একই সঙ্গে লক্ষ্যমুখী যাত্রায় এগিয়ে যেতে শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির প্রতি আসক্তি কমাতে হবে। তাহলে তারা পুরো মেধার ব্যবহার করার সুযোগ বাড়বে। তা না হলে আইকিউ থাকলেও সেটি কোনো কাজে আসবে না।
আলোচনা শেষে ২০২০ এবং ২০২১ সালে আয়োজিত আইকিউ অলিম্পিয়াডে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
এর আগে, শ্রেণিভিত্তিক ‘বায়ো মেমোরি চ্যালেঞ্জ'-এর আয়োজন করা হয়। এতে বিভিন্ন প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। এই চ্যালেঞ্জে শিক্ষার্থীদের ‘পিরিয়ডিক টেবিল মেমোরি চ্যালেঞ্জ' এবং ‘পাই মেমোরি চ্যালেঞ্জ'- এই দুইটি সেকশনে অংশ নেয়। পিরিয়ডিক টেবিল মেমোরি চ্যালেঞ্জে টেবিলের ৫০টি ধাতু-অধাতুর নাম দ্রুত মুখস্ত বলতে হয়। অন্যদিকে পাই মেমোরি চ্যালেঞ্জ পাই-এর মান দশমিকের পর ১০০ ডিজিট পর্যন্ত দ্রুত মুখস্ত বলতে হয়। সন্ধ্যায় এই দুই ধাপের চ্যালেঞ্জে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
মন্তব্য করুন