রাজধানীর অদূরে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার নয়াড়াঙ্গি গ্রামে ২০০৩ সালে আর্সেনিক বিষয়ে জরিপ করে সরকার। আর্সেনিকের উপস্থিতি ধরা পড়া নলকূপগুলোতে লাল রঙের সংকেত দেওয়া হয়। গ্রামের অধিকাংশ নলকূপ এখন বন্ধ। ফলে নারীদের দূরের পুকুর থেকে কলসি ভরে পানি আনতে হয়। একই অবস্থা সিংগাইরের নীলটেক গ্রামেও। খাবার পানির জন্য বাসিন্দাদের প্রতিদিন মাইলের পর মাইল হাঁটতে হয়।

যশোরের কেশবপুর উপজেলা এখনও ঝুঁকিপূর্ণ আর্সেনিকপ্রবণ এলাকা। ২০১৪ সালের পর এখানে আর আর্সেনিক পরীক্ষা হয়নি। ফলে বাধ্য হয়েই এখানকার মানুষ ওই পানি পান করছেন। অথচ ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল, অর্থাৎ দুই বছরে ৩১৫ জন আর্সেনিক রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।
দেশে প্রথম আর্সেনিক শনাক্তের পর ২৯ বছর কেটে গেলেও এ নিয়ে হয়নি কোনো বড় গবেষণা। আর্সেনিকের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত মানুষের হালনাগাদ তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নেই। ২০১৫ সাল পর্যন্ত আর্সেনিকের বিষক্রিয়ায় আক্রান্তদের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ডি কমপেল্গক্স ও আয়রন ট্যাবলেট দেওয়া হতো। এখন তা পান না রোগীরা।

নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি শনাক্ত হওয়ার পর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ২০০৩ সালে বাংলাদেশ আর্সেনিক মিটিগেশন ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্টের (বিএএমডব্লিউএসপি) আওতায় ২৭১ উপজেলার ৫৭ হাজার ৪৮২টি গ্রামে আর্সেনিক পরীক্ষা করে। ৪৯ লাখ ৫০ হাজার নলকূপের পানি পরীক্ষা করে এর মধ্যে ২৯ শতাংশে আর্সেনিকের উপস্থিতি পাওয়া যায়। আর্সেনিকের এত বেশি উপস্থিতি পাওয়ার পরও আর কখনও বড় পরিসরে পরীক্ষা করা হয়নি।

এ অবস্থায় আজ মঙ্গলবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব পানি দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য 'ভূগর্ভস্থ পানির অদৃশ্য সমস্যা ও সম্ভাবনাকে দৃশ্যমান করা।'
২০১৬ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য দিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় 'গণবিষের' উদাহরণ বাংলাদেশের আর্সেনিক পরিস্থিতি। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে প্রতি বছর আর্সেনিকের বিষক্রিয়ার কারণে ৪৩ হাজার মানুষ মারা যায়। তখন এই তথ্যের প্রতিবাদ করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু আর্সেনিকের কারণে বছরে কত মানুষের মৃত্যু হয়, তার কোনো পরিসংখ্যান এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দিতে পারেনি। তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) ২০১৯ সালের গুচ্ছ জরিপের তথ্য বলছে, দেশের ১১ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করে। সে হিসাবে দেশের প্রায় দুই কোটি মানুষ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে।

ইউনিসেফের পানি ও স্যানিটেশন বিশেষজ্ঞ নার্গিস আক্তার বলেন, ১১ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ আর্সেনিক ঝুঁকির মধ্যে আছে। গত ১০ বছরে আর্সেনিক কার্যক্রম ধীর গতিতে এগিয়েছে।

ওয়াটার এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, দেশে ভূগর্ভস্থ পানির গুণগত মান ও পরিমাণ নিয়ে কোনো গবেষণা নেই। এটা নিয়ে কোনো মনিটিরং নেই। ভূগর্ভস্থ পানি নিয়ে তথ্যভান্ডার থাকা উচিত। যে তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রতিটি জেলায় একটি করে পানি পরীক্ষার গবেষণাগার স্থাপন করছি। ২০৩০ সালের মধ্যে প্রত্যেক নাগরিককে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সুবিধার আওতায় আনতে সরকার নানা উদ্যোগ নিচ্ছে।