'গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব যৌক্তিক নয়'

গ্যাসের দাম বৃদ্ধির জন্য পেট্রোবাংলা যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা যৌক্তিক হয়নি। নিজেদের প্রস্তাবের পক্ষে যথাযথ তথ্য-প্রমাণ হাজির করতে পারেনি সংস্থাটি। খরচের হিসাবে গরমিল করেছে পেট্রোবাংলা।

গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে এসব অভিযোগ করা হয়। রাজধানীর ইস্কাটনের বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এর আয়োজন করে। চার দিনের শুনানির গতকাল ছিল প্রথম দিন। সকালে শুনানির শুরুতে পেট্রোবাংলা তার প্রস্তাব উপস্থাপন করার পর বিইআরসির কারিগরি কমিটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন পেশ করে। এরপর ভোক্তাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলে ধরে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

চলতি অর্থবছরে (২০২১-২২) প্রতি ইউনিট (ঘনমিটার) গ্যাস কিনতে গড়ে ২০ টাকা ৩৫ পয়সা খরচ হবে বলে দাবি করেছিল পেট্রোবাংলা। কিন্তু উৎপাদন পর্যায়ে দেশি গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সরকারি অনুমোদনের কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি তারা। তাই এটি আমলে নেয়নি কারিগরি কমিটি। প্রস্তাবিত দাম ১৫ টাকা ৩০ পয়সা ধরা হয়। এটি যাচাই-বাছাই করে কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি বলছে, পেট্রোবাংলার খরচ হবে ১২ টাকা ৪৭ পয়সা। আর কারিগরি কমিটি বলছে, আগেরবার গ্যাসে দাম বাড়ানোর সময় দিনে গড়ে ৮৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস আমদানির হিসাব করা হয়েছিল। প্রকৃত অর্থে পেট্রোবাংলা দিনে ২৯ কোটি ঘনফুট গ্যাস কম আমদানি করেছে। এতে করে আড়াই হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে পেট্রোবাংলার। পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, তাদের হিসাবে কোনো উদ্বৃত টাকা নেই।

শুনানির একপর্যায়ে বিইআরসির চেয়ারম্যন আবদুল জলিল বলেন, দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের পক্ষে পেট্রোবাংলার ব্যাখ্যা, বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর জনগণকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি।

গ্যাসের আমদানির সমালোচনা করে দেশীয় গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর দাবি করেন ভূতত্ত্ববিদ বদরুল ইমাম।
ক্যাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম. শামসুল আলম শুনানিতে বলেন, গ্যাসের বর্তমান দাম বহাল রেখে বিভিন্ন কর এবং লুণ্ঠনমূলক ব্যয় কমিয়ে পেট্রোবাংলার ঘাটতি কমানো হোক।

শুনানিতে আরও উপস্থিত ছিলেন বিইআরসির সদস্য মকবুল ই ইলাহি চৌধুরী, মোহাম্মদ আবু ফারুক, মোহাম্মদ বজলুর রহমান ও মো. কামরুজ্জামান। এ ছাড়া বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ শুনানিতে অংশ নিয়ে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন।

পেট্রোবাংলার পর বিকেলে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) সঞ্চালন চার্জ বাড়ানোর প্রস্তাব ও কারিগরি কমিটির মূল্যায়ন প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। সঞ্চালন চার্জ প্রতি ইউনিট ৪২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭৩ পয়সা দাবি করেছে জিটিসিএল। কারিগরি কমিটি নিজস্ব অর্থায়নে দুটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন খরচ ধরে এটি ৪৮ পয়সা করার যৌক্তিকতা খুঁজে পেয়েছে। তবে মুনাফায় থাকা এ কোম্পানির চার্জ বাড়ানোর বিরোধিতা করেছে ক্যাব।