প্রতারণা করে গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে কথিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান 'আকাশ নীল'-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মশিউর রহমান সাদ্দাম (২৮) ও পরিচালক ইফতেখাইরুজ্জামান রনিকে (৩২) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।
রোববার রাতে ঢাকা ও ফরিদপুরে এই অভিযান চালানো হয়। তারা কম দামে মোটরসাইকেল বিক্রির কথা বলে ৯ শতাধিক মানুষের কাছ থেকে অন্তত ৩২ কোটি টাকা হাতিয়েছেন। গ্রাহককে পণ্য না দিয়ে ওই টাকায় বাড়ি-গাড়ি কিনে আয়েশী জীবন কাটাচ্ছিলেন সাদ্দাম।
র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়াকালে দুই বন্ধু সাদ্দাম ও ইফতেখাইরুজ্জামান রনি মিলে গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসায় নামেন। বাতিল হওয়া গার্মেন্ট পণ্য বিক্রি করতেন নিউমার্কেটে। এরপর ২০১৯ সালে তারা 'আকাশ নীল' নামে একটি ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ তৈরি করে ট্রেড লাইসেন্সও নেন। রাজধানীর কাঁঠালবাগান এলাকায় অফিস খুলে অনলাইনে শাকসবজি বিক্রি শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত দুই বন্ধু মিলে নামেন প্রতারণার কাজে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইভ্যালিসহ অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় গ্রাহকরা পণ্য অথবা টাকা ফেরতের চাপ দিতে শুরু করলে অফিস গুটিয়ে নেন। নিজেদের ফোন বন্ধ রাখেন। এক পর্যায়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে ওই দু'জনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। সেখানে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গত ১৮ মার্চ এক ভুক্তভোগী আকাশ নীলের এমডি ও ডিরেক্টরসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। আরও কয়েকজন ভুক্তভোগীও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-২ ও র‌্যাব-৮-এর যৌথ অভিযানে ফরিদপুর থেকে সাদ্দাম এবং ঢাকা থেকে রনিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি জানান, আকাশ নীলের প্রতারণার মূল হোতা সাদ্দাম। তিনি কথিত ওই প্রতিষ্ঠানকে লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত করে কাঁঠালবাগান থেকে পান্থপথে অফিস স্থানান্তর করেন। এটি ছিল পরিবারকেন্দ্রিক ব্যবসা, যাতে তার নিজের নামে ৭৭ শতাংশ, বোনের নামে ১০ শতাংশ, মায়ের নামে ৮ শতাংশ ও তার স্ত্রীর নামে ৫ শতাংশ শেয়ার রাখা হয়। কোম্পানির এমডি নিজে হয়ে মাকে বানান চেয়ারম্যান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু রনিকে বসান পরিচালকের আসনে।
র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, গ্রাহকরা তাদের কাছে ৩০ কোটি টাকা পান বলে স্বীকার করেছেন ওই দু'জন। তাদের চারটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পাওয়া গেছে। এসব ব্যাংক হিসাবের তথ্য যাচাই-বাছাই করে গ্রাহকরা কত টাকা পাবেন, সেটা নিশ্চিত হওয়া যাবে। কোনো টাকা বিদেশে পাচারের তথ্য পাওয়া যায়নি।
র‌্যাব কর্মকর্তারা বলেন, সাদ্দামের বাবা ছিলেন কারখানার শ্রমিক। গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে, তার বসতভিটা ছাড়া কোনো সম্পদ নেই। ই-কর্মাস কোম্পানি খুলে গ্রাহকের টাকায় ধানমন্ডিতে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কেনেন সাদ্দাম। তিন কোটি টাকা মূল্যের ওই ফ্ল্যাট ছাড়াও দুটি দামি গাড়ি কিনে ব্যবহার করতেন তিনি। এ ছাড়া কোম্পানির প্রায় চারটি পিকআপ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ৪০ জন কর্মকতা-কর্মচারীকে মাসে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা বেতন দিতে হতো।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সাদ্দাম 'ইভ্যালি' ও 'ধামাকা শপিংয়ের' ব্যবসা দেখে ২০২১ সালের মে মাসে 'আকাশ নীল' ই-কর্মাস ব্যবসা শুরু করেন। সাত মাসে ২৩ থেকে ৩০ শতাংশ ছাড়ে মোটরসাইকেল ও ইলেকট্রনিকস পণ্য দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ৩২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় কোম্পনিটি।