জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ বিভিন্ন সনদ তৈরি বা সংশোধনে গলদফর্ম হতে হয় সাধারণ মানুষকে। তবে গোলাম মোস্তফা নামে এক ব্যক্তি ও তার সহকর্মীরা হয়রানি ছাড়াই তা তৈরি করে দেন।

অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে এসব সনদ তৈরি করে দিতে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো বিজ্ঞাপনও দিতেন। তবে তার দেওয়া এনআইডি ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের সবই জাল।

সোমবার রাতে র‌্যাব সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জাল সনদ তৈরির মূল হোতা গোলাম মোস্তফা (৬০) ও তার চার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জাল সনদ তৈরির চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন। গ্রেপ্তার অন্য চারজন হলেন- জালাল বাশার (৫৪), মুসলিম উদ্দিন (৬৫), মিনারুল ইসলাম ওরফে মিন্নি (২২) এবং তারেক মৃধা (২১)।

তাদের কাছ থেকে দু'টি কম্পিউটার, সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের ২ হাজার ৪৬০টি জাল প্রাপ্তি স্বীকার রশিদ, ২৬টি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, একটি ল্যাপটপ, একটি ডিজিটাল ক্যামেরা, ১৮ টি ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স, ৮০ টি সাদা রঙের প্লাস্টিকের ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরির ব্লাঙ্ক কার্ডসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।

মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে ওই পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। 

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মোস্তফার চক্রটি মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ভুয়া এনআইডি, ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ বিভিন্ন জাল সনদ তৈরি করে  প্রতারণা করত। এ চক্রটির দেওয়া বিজ্ঞাপন র‌্যাবের সাইবার মনিটরিং সেলের নজরে আসলে তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়।

তিনি আরও বলেন, এই চক্রটি ৮ থেকে ১০ বছর ধরে ভুয়া এনআইডি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জাল সার্টিফিকেট ও অন্যান্য জাল নথিপত্র তৈরি করত।  এরা বিভিন্ন নির্বাচন অফিস ও বিআরটিএ অফিসের সামনে অবস্থান করে গ্রাহকদের টার্গেট করত। পরে তাদেরকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে চাহিদা অনুযায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্স ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দিয়ে প্রতারণা করত।

গ্রাহকের বিশ্বাস অর্জনে হুবহু জাল প্রাপ্তি স্বীকারপত্র ও মানি রিসিটটি বিআরটিএ এবং বিভিন্ন ব্যাংকসহ ভুয়া সিল ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে গ্রাহককে প্রদান করত। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ডিজিটাল মাধ্যমে তারা এগুলো তৈরি করে দিতে চটকদার বিজ্ঞাপন দিত।

র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, মোস্তফার চক্রটি ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে ভুয়া এনআইডি বা ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করে দিত। জরুরি ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকায় তা একদিনের মধ্যেই সরবরাহ করত।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে এই ধরনের প্রতারণার ঘটনায় একাধিক মামলা রয়েছে। বেশ কয়েকবার সে কারাগারেও গিয়েছে। মিনারুল দুই বছর আগে টেক্সটাইল ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে। এক বছর ধরে সে এই চক্রটির হয়ে ভুয়া এনআইডি কার্ড ও ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ জাল সার্টিফিকেটের তৈরির ক্ষেত্রে গ্রাফিক্স ও ডিজাইনের কাজ করছিল।

মুসলিম, জালাল ও তারেক বিআরটিএ ও নির্বাচন অফিসের সামনে থেকে গ্রাহক সংগ্রহ ও তাদের ভুয়া কার্ড পৌঁছে দিত।