সংখ্যালঘু স্বার্থরক্ষায় সরকারি দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন শুরুর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। আন্দোলনের সূচনা দিনে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় রাজধানীর শাহ্বাগ চত্বর থেকে পদযাত্রা সহকারে প্রধানমন্ত্রী বরাবর দু’লাখ নাগরিকের গণস্বাক্ষারসম্বলিত স্মারকলিপি পেশ করবে সংগঠনটি। একইদিন সারাদেশে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অনুরূপ স্মারকলিপি পেশ করা হবে।

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত বলেন, আজকের এ বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ নয়।  গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো অপ্রয়োজনীয় রাজনৈতিক খেয়োখেয়িতে ব্যস্ত। জনগণের আশা জাগানিয়া রাজনীতি দৃশ্যমান করার উদ্যোগ আজও পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো ও তাদের জোট পৃথকভাবে দৃশ্যমান তৎপরতা শুরু করেছে। রাষ্ট্রক্ষমতাকে সামনে রেখে এহেন তৎপরতা অব্যাহত থাকাটা স্বাভাবিক এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে এটি অপরিহার্য। মুক্তিযুদ্ধের মৌল চেতনায় নব্বইয়ের তিন জোটের রূপরেখার ভিত্তিতে রাষ্ট্র ও রাজনীতি পরিচালনায় সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল জাতীয় ঐক্যমত পোষণে এগিয়ে আসবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরও বাহাত্তরের সংবিধান সাম্প্রদায়িকতামুক্ত হতে পারেনি। ‘ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা’ রাষ্ট্রীয় মৌলনীতি হিসেবে ফিরে এলেও রাষ্ট্র ও রাজনীতির চর্চায় তার সুস্পষ্ট প্রতিফলন আজও মেলেনি। রাষ্ট্রধর্ম জনগণনার দিক থেকে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনাগোষ্ঠীকে রাষ্ট্রীয় সংখ্যালঘুতে পরিণত করেছে। এহেন রাষ্ট্রীয় সংখ্যালঘুতে পরিণত হবার জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়নি।  

সংবাদ সম্মেলনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বর্ণিত অঙ্গিকার সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের দ্রুত বাস্তবায়ন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও পার্বত্য ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের দ্রুত বাস্তবায়ন এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য স্বতন্ত্র ভূমি কমিশন গঠনের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠনসহ সংখ্যালঘুদের ওপর সবধরনের নির্যাতন ও বৈষম্য অবসানের দাবি জানানো হয়।

এ সময় দেশের সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও সুশীল সমাজের নেতাদের এসব দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে নাগরিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঐক্য পরিষদের তিনজন সভাপতি ঊষাতন তালুকদার, ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক ও নির্মল রোজারিও, প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বাসুদেব ধর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, রবীন্দ্র নাথ বসু, সাংগঠনিক সম্পাদক উত্তম চক্রবর্তী, মহিলা ঐক্য পরিষদের সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য, শ্রীশ্রী ভোলানন্দগিরি আশ্রমের রঘুপতি সেন, খ্রিস্টান এ্যাসোসিয়েশনের ভিক্টর রে প্রমুখ।