- বাংলাদেশ
- বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুকে মারধর, সন্তানসহ মানববন্ধনে এক মা
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুকে মারধর, সন্তানসহ মানববন্ধনে এক মা

দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে মানববন্ধনে এক মা, ছবি: সমকাল
রাজধানীর মালিবাগে তুচ্ছ কারণে বাবার সামনে মারধর করা হয় তাওসিফ আহনাফ নামে এক বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুকে। এ ঘটনায় তাওসিফের বাবা রমনা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
শনিবার (২ এপ্রিল) বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে তাওসিফকে মারধরের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন আরেকজন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর মা আঞ্জুম হোসেন। এর আগে ২৯ মার্চ তাওসিফকে মারধর করা হয়।
মানববন্ধনে আঞ্জুম হোসেন বলেন, আমি একজন স্পেশাল শিশুর মা। স্পেশাল শিশুদের বিচার-বিবেচনা স্বাভাবিক মানুষের মতো নয়, তাদের একটু আলাদাভাবে হ্যান্ডেল করতে হয়। গত ২৯ মার্চ স্পেশাল শিশু তাওসিফকে তার বাবার সামনে সিকিউরিটি গার্ডরা নির্মমভাবে প্রহার করেছেন, যেটি একটি স্পেশাল শিশুর মা হিসেবে আমার হৃদয়কে নাড়িয়ে দিয়েছে। সেই টান থেকেই প্রেস ক্লাবের সামনে আমার দুই সুস্থ বাচ্চাকে নিয়ে দাঁড়িয়েছি। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। পথে-ঘাটে অটিজম শিশুরা যেন মুক্তভাবে চলাচল করতে পারে, বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসে এটিই আমার চাওয়া।
আঞ্জুম হোসেনের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর নাম আব্দুল্লাহ। বয়স ১৩ বছর। তবে ব্যতিক্রমী এ মানববন্ধনে আঞ্জুম হোসেন তার আট বছরের মেয়ে জুওয়ায়রিআহ্ এবং ছয় বছরের মেয়ে মুনিবাকে নিয়ে এসেছিলেন। ছোট্ট দুই শিশুর হাতেও ছিল প্ল্যাকার্ড। একজনের প্লেকার্ডে লেখা ছিল, ‘আমার ভাইয়া বিশেষ শিশু, ভুল করলে আমাকে মার। আমার ভাইকে নয়’। আরেকজনের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘আমার ভাইয়াদের মের না। সরি বল’।
আর আঞ্জুম হোসেনের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘আমার সন্তান ইভটিজার নয়। ভুল কিছু করলে আমায় মারুন, আমার সন্তানকে নয়’। ছোট্ট সন্তানদের নিয়ে এক মায়ের এমন মানববন্ধন অনেকের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।

২৯ মার্চের ঘটনা নিয়ে তাওসিফের বাবা সুরুজ মিঞা সমকালকে বলেন, ওইদিন সকালে তাওসিফকে তার স্কুলে নিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের সামনে সেখানকার এক মেয়ে আমার ছেলের দিকে তাকালে তাওসিফ মেয়েটিকে বলে তাকাবা না। পরিস্থিতি না বুঝে মেয়েটি কলেজের ভেতরে গেলে তাওসিফ তার পিছু নেয় এবং বলতে থাকে তাকাবা না। একপর্যায়ে আমার সামনেই মেডিকেল কলেজের সিকিউরিটি ইনচার্জ তাওসিফকে ব্যাপক মারধর করেন। আমি বারবার বলছিলাম, সে বিশেষ শিশু, কিন্তু তারা সে কথা শুনেননি। বিষয়টি নিয়ে রমনা থানায় প্রথমে অভিযোগ এবং পরে জিডি করেছি। পরবর্তীকালে থানা থেকে বিষয়টি মিমাংসা করতে বলা হয় বলে জানান সুরুজ মিঞা।
এ বিষয়ে তাওসিফের মা ফাতেমা তানজি সমকালকে বলেন, আসলে বিশেষ শিশুদের খুব সতর্কতার সঙ্গে হ্যান্ডেল করতে হয়। তাওসিফ যখন মেয়েটিকে বলেছিল, আমার দিকে তাকাবা না, তখন মেয়েটি যদি বলত, আচ্ছা তাকাব না, তাহলে কোনো সমস্যাই হত না। আসলে তাওসিফ মেয়েটির পিছু নিয়েছিল, এই তাকাব না কথাটি শোনার জন্যই। আফসোস বিশেষ শিশু হিসেবে বাড়তি ভালোবাসা পাওয়ার বদলে তাওসিফ মারধরের শিকার হল।
তিনি জানান, তাওসিফ রাজধানীর কল্যাণী ইনক্লুসিভ স্কুলে ক্লাস ফোরে পড়ছে। তার বয়স ১৬ বছর হলেও তার আইকিউ ছয় বছরের।
মন্তব্য করুন