রং-বেরঙের কাপড় ছড়িয়ে আছে চারপাশে। দড়িতে টাঙিয়ে শুকানো হচ্ছে কাপড়। বাটিকের নকশা করা হচ্ছে সাদা কাপড়ে। নববর্ষ আর ঈদ সামনে রেখে কর্মব্যস্ত সবাই। এমনটিই দেখা গেল, দেশের বিভিন্ন স্থানের বুটিক-বাটিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কারখানায় গিয়ে। এসব কারখানা থেকেই পণ্য আসছে রাজধানীসহ সারাদেশের বুটিক বাজারে।

কুমিল্লায় গিয়ে দেখা গেল, দম ফেলার ফুরসত নেই 'আজমিরী ফ্যাশন হাউসে'র কর্মী-সংগঠকদের। বাটিকের নকশা করছেন ফ্যাশন হাউসটির স্বত্বাধিকারী, কুমিল্লার চাঁপাপুরের সিজু ফারজানা ঊর্মি নিজেও। কারণ ঈদ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তো বটেই, বাইরে থেকেও অর্ডার এসেছে। রমজান মাসের ১৫ দিন পেরোনোর আগেই সালোয়ার-কামিজ-ওড়না-শিশুদের পোশাকসহ নানা পণ্য সরবরাহ করতে দিন-রাত কাজ করে চলেছেন তিনি।

ঐতিহ্যবাহী খাদি কাপড়ে ব্লক প্রিন্ট ও জরি সুতার কাজে নানা ডিজাইনের শাড়ি তৈরি করে থাকে কুমিল্লারই আরেকটি হাউস 'পট্ট পুরাণ'। এটির স্বত্বাধিকারী শামীমা আক্তার শম্পা জানালেন, বাঙালি নারীর শাড়ির ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এবং নবায়ন ঘটাতেই গড়ে উঠেছে 'পট্ট পুরাণ'। নরম খাদি শাড়িতে স্ট্ক্রিপ্ট ব্লক প্রিন্ট করলে তা আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। ঘিয়া রঙের শাড়িতে আঁচল ও পাড়ে কালো, কমলা বা মানানসই যে কোনো রঙের কাপড় কেটে বসিয়ে থাকে 'পট্ট পুরান'। এবারের ঈদে পুরো শাড়িতে খাদি সুতো দিয়ে দাগ টানা ডিজাইনের মাধ্যমে ভিন্নতা আনার চেষ্টা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ক্রেতাদের চাহিদা অনুসারে সিল্ক্ক মোম বাটিক শাড়িও করা হচ্ছে। 'পট্ট পুরাণের' শাড়ি ১৫৫০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে।

সরেজমিনে দেখা গেল, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে নারায়ণগঞ্জের বান্টি বাসস্ট্যান্ডে গড়ে উঠেছে দু-তিনটি বাটিক কাপড়ের মার্কেটও। গড়ে উঠেছে পাঁচ শতাধিক বাটিকের শোরুম। নারায়ণগঞ্জের গাউছিয়ার পাশের এই বান্টি গ্রামে প্রায় হাজারেরও বেশি পরিবার বাটিকের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আবহাওয়াজনিত কারণে এবারের ঈদে সুতি কাপড়ের প্রতিই মানুষের আগ্রহ বেশি। তাই সুতি কাপড়ে বাটিকের কাজ করছে এখানকার কারিগররা। রফিক, সাইয়েম, ফরিদসহ কয়েকজন কারিগর জানান, বাটিকের কাজের আয় দিয়েই তাদের সংসার চলছে।

প্রসঙ্গত, বাটিকের পোশাক তৈরির মূল উপকরণ সাদা সুতি কাপড় পাওয়া যায় শুধু বান্টির পাশের গ্রাম কালীবাজারের হাজী মাজহারুল ইসলাম শপিং কমপ্লেক্সের ১০ জন ব্যবসায়ীর কাছে। তাদেরই একজন রাইসা বাটিক হাউসের কর্ণধার মোহাম্মদ সগির হোসেন সৈকত। তিনি বলেন, ঈদ কেন্দ্র করে প্রতিদিন এ মার্কেট থেকে প্রায় ৫০ হাজার গজ কাপড় বিক্রি হচ্ছে।

ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ব্যস্ততা বেড়েছে চাঁদনী চক, কেরানীগঞ্জ, সদরঘাট, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও বঙ্গ মার্কেটের ঘোড়াপট্টিসহ রাজধানীতে গড়ে ওঠা ছোট ছোট গার্মেন্টেও।

ঈদের বাজার ধরতে দিন-রাত সমানে কাজ করে চলেছেন জয়িতার উদ্যোক্তা খুজিস্তা বেগম জোনাকি। মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে তার কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, ঘরের মেঝেতে কাঠের পাটাতনে শাড়ির চার কোণায় বেঁধে বাহারি রঙের পাথর বসিয়ে বুটিকস কারিগরা তৈরি করছেন নান্দনিক ও মুগ্ধকর নকশা। কারিগররা শুধু ক্যাটালগ দেখে বিভিন্ন ডিজাইনের নকশা ও পাথর বসিয়ে কাজ শেষ করছেন।

জোনাকী জানালেন, নকশার কাজে ওয়েট লেইস, মাখন, লেদার জর্জেট, পাথর, জরি, চুমকি, মাল্টি পুঁতি ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এরপর কাপড় ও কাজের মান অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করা হয়। তিনি বলেন, 'দু বছর পরে ঈদের বাজার পুরোদমে জমে উঠেছে। এখন দম ফেলারও সময় পাচ্ছি না।' অহং, দেশী বুনন, কারুকাহনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারাও জানালেন ব্যস্ততার কথা। বললেন, ঈদ-বৈশাখ মিলে এবার কাজের বেশি। তবে কাপড়ের মান ও ডিজাইনের ক্ষেত্রে তারা সচেতন।