বাংলাদেশকে একদলীয় শাসনের যাঁতাকল থেকে রক্ষার জন্য প্রবাসী ও বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতিশীল বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। 

লন্ডনের অক্সফোর্ডে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্বের ১০টি দেশের বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতিশীল বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা, প্রতিনিধি ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উদ্দেশে বক্তৃতাকালে তিনি এই আহ্বান জানান। এ সময় দেশগুলোর প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞগণও ভার্চুয়াল এই সভায় বক্তব্য রাখেন।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা না থাকায় বাংলাদেশের মানুষ তার স্বাস্থ্যশিক্ষা, ভোটাধিকার সব কিছু হারিয়েছে । জবাবদিহিতা না থাকায় করোনাকালে কোটি কোটি মানুষকে দুর্নীতি ও চরম  ভোগান্তির শিকার হতে হয়।  এ অবস্থা থেকে তিনি অবিলম্বে বাংলাদেশের সকল দলমতের ভিত্তিতে দু'বছরের জন্য জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান, যেখানে দুজন প্রবাসী প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবও পুনরুল্লেখ করেন।

তিনি বলেন , বাংলাদেশের সমস্যা তার একার নয়। বাংলাদেশে গণতন্ত্র না থাকলে বিশ্বের সকল অংশেই কোনো না কোনোভাবে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। 

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রবাসী ও বিশ্ববাসী আমাদের মুক্তির জন্য এগিয়ে এসেছিল। আজও বাংলাদেশ যখন আবার বিপদে পড়েছে, তখন প্রবাসীরা তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন না। বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতিশীল আন্তর্জাতিক সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও বিবেকবান সকলের প্রতি তিনি বাংলাদেশের পাশে, ১৮ কোটি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

ভয়েস ফর গ্লোবাল বাংলাদেশিজ এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই ভার্চুয়াল সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের প্রেসিডেন্ট ড. হাসনাত এম হোসাইন। লন্ডনভিত্তিক সংস্থাটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের পরিচালক শামসুল আলম লিটনের সঞ্চালনায় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। ভয়েস ফর গ্লোবাল বাংলাদেশিজের উদ্যোগে ২৯মার্চ ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ট্যারেস প্যাভিলিয়নে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য একশ' জন প্রবাসী সংগঠককে সম্মাননা প্রদান করা হয়। জাফরুল্লাহ চৌধুরী সংস্থাটির আমন্ত্রণে সম্মাননা গ্রহণ করেন ও অনুষ্ঠানে  বক্তৃতা করেন। পরে পূর্ব লন্ডনে প্রবাসীদের দেওয়া এক নাগরিক সংবর্ধনায় জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে দেশের জন্য জীবনব্যাপী তার অসামান্য অবদানের জন্য ‘দেশমান্য’ খেতাবে ভূষিত করা হয়।

ভার্চুয়াল সভায় সংস্থার প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সৈয়দ নাদির আজিজ দারাজ, মাহাতাব মিয়া, আব্দুল লতিফ জেপি, কেএম আবু তাহের চৌধুরী, সাদিকুর রহমান, ডা. ওয়াহিদুল আলম, হাসান মাহমুদ (কানাডা) ও প্রফেসর আব্দুল কাদির সালেহ।

এ ছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে উপস্থিত প্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞ ও অতিথিবৃন্দের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন লুসিয়েন বিগওল্ট (ফ্রান্স) অধ্যাপক বাশার (মালয়েশিয়া) কামাল রেজা (অস্ট্রেলিয়া) ডা. এম জহিরুল আলম (যুক্তরাষ্ট্র) ডা. এম আবিদুর রহমান (যুক্তরাষ্ট্র), মুজিবুল হক (পাকিস্তান), ডা. ফজিলা বানু লিলি (বাংলাদেশ) ডা. মঞ্জুর কাদির আহমেদ (বাংলাদেশ) ডা. লায়লা পারভীন বানু (বাংলাদেশ) ফরিদা আক্তার (বাংলাদেশ), তালেয়া রেহমান (যুক্তরাজ্য), কনসালটেন্ট ডা. সারওয়াত বারী (যুক্তরাজ্য) কনসালটেন্ট ডা. শাকের আহমেদ (ইউকে), ডা. জিন্নাহ (যুক্তরাজ্য) , ডা. মান্নান (যুক্তরাজ্য) , ডা. জসীম আহমেদ (স্কটল্যান্ড), ইঞ্জিনিয়ার কামাল রেজা (অস্ট্রেলিয়া), স্টিফেন মিনকিন (যুক্তরাষ্ট্র), ডা. মীরা শিবা (ভারত), জুলিয়ান ফ্রান্সিস (ইউকে/বাংলাদেশ), ডেভিড গিসেলকুইস্ট (যুক্তরাষ্ট্র), আলফ্রেড জেরফাস (অস্ট্রেলিয়া), চিনু শ্রীনিবাসন (ভারত), ফিওনা ডুবি (যুক্তরাজ্য), ফ্লোরেন্স মেসনিল (ফ্রান্স), পল চোটার্ড (ফ্রান্স), হেলেন ও'কনেল (ইউকে), ফ্রাঙ্কোইস অডুজ (ফ্রান্স), ডা. স্বরণ অরোরা (ভারত), ডা. পাম জিনকিন (ইউকে), সারাহ বাচম্যান (যুক্তরাষ্ট্র), ডা. রোজা উইলিয়ামস (ইউকে/যুক্তরাষ্ট্র), আলাসদাইর ওয়াইলি (স্কটল্যান্ড), ডা. সোহেলী ইয়াসমিন (যুক্তরাজ্য), ডা. স্বপন আদনান (যুক্তরাজ্য), এএফএম শামসুদ্দোহা (বাংলাদেশ/ইউকে), সিনিয়র সাংবাদিক শওকত মাহমুদ টিপু ও শেখ আহমেদ (যুক্তরাজ্য),  ডা. হুমায়ের চৌধুরী (অস্ট্রেলিয়া), ডা. জ্যাক খান (যুক্তরাজ্য)। এ ছাড়া ঢাকা থেকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক (প্রোগ্রাম) গোলাম মোস্তফা দুলাল ও তথ্য উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু আলোচনায় অংশ নেন।

সভাপতির বক্তব্যে ড. হাসনাত এম হোসাইন বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী একা নন। ১৬ মিলিয়ন প্রবাসী তার সঙ্গে রয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে রয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসীরা ঐক্যবদ্ধভাবে যেভাবে দেশের পাশে দাঁড়িয়েছে, আজও দেশের সকল সংকটে প্রবাসীরা মানুষের পাশে দাঁড়াবে।

তিনি প্রবাসীকল্যাণে সরকার ও সকল কর্তৃপক্ষকে আরও যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানান। এ ছাড়া প্রবাসে প্রত্যেকের অবদানকে স্বীকৃতির জন্য সরকার ও প্রবাসের সকল সংগঠনকে একযোগে কাজ করার অনুরোধ করেন।