যানজট নিরসনে ঢাকার পাতালে ২৫৮ কিলোমিটার রেল নেটওয়ার্ক (সাবওয়ে) নির্মাণের পরিকল্পনাকে উচ্চাভিলাষী, অপরিণামদর্শী বলে আখ্যা দিয়েছেন পরিকল্পনাবিদরা। তারা বলেছেন, সাবওয়ের সমীক্ষায় খরচ করা ৩২১ কোটি টাকাই অপচয় হয়েছে। এ টাকায় বরং হাজার খানেক মানসম্মত বাস নামালে ঢাকার পরিবহন সমস্যার সমাধানে কার্যকর হতো।

গতকাল শুক্রবার ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) আয়োজিত নগর সংলাপে এসব কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। 'ঢাকায় পাতাল রেল প্রকল্প :টেকসই পরিবহন পরিকল্পনার প্রাসঙ্গিকতায় উপযোগিতা বিশ্নেষণ' শীর্ষক এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে আইপিডির নির্বাহী পরিচালক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, সাবওয়ে প্রকল্প অপরিণামদর্শী। সাবওয়ে অতি ব্যয়বহুল। অতি ধনী দেশগুলোও সাবওয়ে নির্মাণের মতো উচ্চাভিলাষী প্রকল্প নিচ্ছে না।

ড. আদিল বলেছেন, সাবওয়ের প্রতি কিলোমিটার নির্মাণে ৩০০ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়। সিঙ্গাপুরের ডাউনটাউন সাবওয়ের প্রতি কিলোমিটারের নির্মাণ ব্যয় ৪৯৩ মিলিয়ন ডলার। যেসব দেশ সাবওয়ে নির্মাণ করছে, তাদের মাথাপিছু আয় বাংলাদেশের ৪০ গুণ। তারাও সাবওয়ের মতো ব্যয়বহুল প্রকল্প থেকে সরে আসছে।

ঢাকার যানজট নিরসনে ২০১৬ সালে অনুমোদিত সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি) অনুযায়ী মেট্রোরেল, বিআরটি, এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। এ পরিকল্পনায় সাবওয়ে না থাকলেও ৩২১ কোটি টাকায় সমীক্ষা করেছে সেতু বিভাগ। সমীক্ষা অনুযায়ী ২০৫০ সালের মধ্যে আট লাখ ৮৬ হাজার ২০৫ কোটি টাকায় ১১টি রুটে ২৫৮ কিলোমিটার পাতাল রেলপথ নির্মাণ করা হবে।

অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ২০২৯ সালের মধ্যে চারটি রুটে ১০৫ কিলোমিটার সাবওয়ে নির্মাণের সম্ভাব্য ব্যয় তিন লাখ ৫৬ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী সাত অর্থবছরে গড়ে প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকা করে লাগবে! পাতাল রেলে ভিত্তি ভাড়া ২২ টাকা ৬০ পয়সা এবং পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের জন্য দুই টাকা ৮০ পয়সা ভাড়া ধরা হয়েছে। এমন যাত্রী ভাড়ায় পাতাল রেলের খরচ উঠতে ২০৫৭ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে।

বিশাল ব্যয়ের সাবওয়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আইপিডির পরিচালক পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম ঢাকার আশপাশে পরিকল্পিত টাউনশিপ গড়ে রাজধানীর ওপর চাপ কমানো এবং মানসম্মত বাস সার্ভিস চালুর পরামর্শ দিয়েছেন।

বাংলাদেশে ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান বলেছেন, অতি ব্যয়বহুল সাবওয়ে প্রকল্প দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে। আরএসটিপিতে না থাকলেও কীভাবে সাবওয়ের সমীক্ষা প্রকল্প অনুমোদন পেল, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সাবেক নির্বাহী পরিচালক ড. এস এম সালেহউদ্দিন বলেছেন, সাবওয়ে একে তো ব্যয়বহুল, তার ওপর ঢাকার সঙ্গে মানানসই নয়। সমীক্ষায় ৩২১ কোটি টাকা অপচয় না করে তা দিয়ে হাজারখানেক মানসম্মত বাস নামালেও ঢাকার পরিবহন সমস্যা সমাধানে কার্যকর হতো।

আইপিডির উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেছেন, অনেক সমীক্ষা প্রকল্পকে অনুমোদন দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে তৈরি করা হয়। বিদেশি পরামর্শকদের বাস্তবতা সম্পর্কে ধারণার অভাব রয়েছে। সাবওয়ের বদলে জেলা শহরগুলোর উন্নয়ন করলে ঢাকার ওপর চাপ কমে যাবে।

পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ঢাকার আশপাশের এলাকার ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য সাবওয়ে নির্মাণের উপযোগী নয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক মারুফ হোসেন বলেছেন, সাবওয়ে শ্বেতহস্তী।