ঈদযাত্রায় ঢাকা থেকে বরিশালের পথে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস চালু হয়েছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে। তবে লঞ্চচালকরা বলছেন, বরিশাল নৌ বন্দরে পন্টুন সঙ্কট থাকায় তারা লঞ্চ ভেড়াতে গিয়ে বিপাকে পড়বেন।

তারা জানিয়েছেন, নিয়মিত লঞ্চ চলাচলের জন্য বন্দরে মাত্র ৬টি পন্টুন রয়েছে। ওই ৬টি পন্টুনে একসঙ্গে ৭-৮টির বেশি লঞ্চ ভিড়তে পারে না। সেখানে ঈদের বিশেষ সার্ভিসের তিন-চার গুণ বেশি লঞ্চ কোথায় ভিড়বে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা।

সুন্দরবন লঞ্চের মাষ্টার মজিবর রহমান সমকালকে বলেন, বরিশাল নৌ বন্দরের পন্টুন আছে মাত্র ৬টি। এতে এক সঙ্গে ২০-২২ টি লঞ্চ কিভাবে ভিড়বে! ২৯ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত যাত্রীদের প্রচণ্ড চাপ থাকবে। একটার পেছনে আরেকটা লঞ্চ নোঙর করলে যাত্রী নামানোর সময় হুড়াহুড়িতে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

ঈদের সময় বিশেষ সার্ভিসের লঞ্চগুলো ঢাকার সদর ঘাট থেকে সন্ধ্যার মধ্যে ছেড়ে বরিশাল নৌবন্দরে পৌছতে শুরু করে রাত ১টার পর থেকে। 

বৃহস্পতিবার ঢাকা সদরঘাট থেকে বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলমুখি বেসরকারি লঞ্চের বিশেষ সার্ভিস (ডাবল ট্রিপ) শুরু হচ্ছে। 

ঘরমুখী যাত্রীদের গন্তব্যে পৌছে দিতে শুধু সরাসরি ঢাকা-বরিশাল রুটের বিশেষ সার্ভিসে বৃহস্পতিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত সরাসরি ও ভায়াসহ ২৯টি নৌযান বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলে যাত্রী পরিবহন করবে।

বরিশাল রুটের সুরভী শিপিং লাইন্সের অন্যতম পরিচালক রিয়াজ উল কবির সমকালকে জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে ঢাকা সদরঘাট টার্মিনাল থেকে সুন্দরবন-১১, পারাবত-১২, মানামী, কীর্তনখোলা-১০, সুরভী-৭ ও ৮ এবং কুয়াকাটা-২ সহ ১৫টি লঞ্চ বিশেষ সার্ভিস হিসেবে বরিশাল আসছে। 

বিশেষ সার্ভিসের শুরু হওয়ার পর পন্টুন সঙ্কট কিভাবে সমাধান করা হবে জানতে চাইলে বরিশাল নৌ বন্দর কর্মকর্তা এবং বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বরিশাল নৌ বন্দরের পাশে স্টিমার ঘাটও লঞ্চ নোঙরের জন্য ব্যবহার করা হবে। 

তবে পন্টুন সঙ্কটের কারণে বিশেষ সার্ভিসের সময় কিছুটা অসুবিধা হবে বলে তিনি সমকালকে জানান। 

এদিকে লঞ্চের বিশেষ সার্ভিসে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বরিশাল নৌযাত্রী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক দেওয়ান আব্দুর রশিদ নিলু। 

তিনি বলেন, বিশেষ সার্ভিসে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হয়। এটাই নিরাপত্তার জন্য প্রধান হুমকি। কারণ এখন ঝড়ঝঞ্জার মৌসুম। লঞ্চগুলোতে সাধারণ সময়ও প্রয়োজনীয় লাইফ জ্যাকেট ও বয়া থাকে না। তার ওপর এখন অতিরিক্ত যাত্রী বহন করলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যায়।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার কেন্দ্রীয় সদস্য রিয়াজ উল কবির এ বিষয়ে বলেন, প্রত্যেক লঞ্চের স্টাফদের সব শ্রেণির যাত্রীদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার বিষয়ে সতর্ক থাকতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় শ্রেণির যাত্রীরা যেন কোনো দুর্ঘটনার শিকার না হন সেজন্য বিশেষ নজরদারি থাকবে।

এদিকে যেসব লঞ্চের যাত্রীর গভীর রাতে বরিশাল নৌ বন্দরে আসবেন, তাদের নিরাপদে ঘরে ফেরা নিশ্চিত করতে বরিশাল নৌবন্দরে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা।

যাত্রীদের মূল্যবান মালামাল ও টাকা পয়সা যাতে খোয়া না যায় এ জন্য র‌্যাব-৮ ও মহানগর পুলিশের উদ্যোগে নৌবন্দরে করা হয়েছে বিশেষ ক্যাম্প। কোনো যাত্রী ভ্রমণজনিত ক্লান্তি বা গরমে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য অস্থায়ী সেবা ক্যাম্প করেছে বঙ্গবন্ধু ক্লাব। 

এছাড়া নৌবন্দর থেকে নগরীর রূপাতলী ও নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে যাত্রীদের নিরাপদে পৌঁছতে দেওয়ার জন্য বিনামূল্যে বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা করেছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।  

বিআইডব্লিউটিএ যুগ্ম পরিচালক ও বরিশাল নৌবন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তায় জেলা প্রশাসন, নগর পুলিশ, র‌্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি নিয়ে যাত্রী নিরাপত্তায় গঠন করা হয়েছে ‘বন্দর সমন্বয় কমিটি’। 

তিনি আরও বলেন, ঈদুল ফিতরের আগে ও পরে মোট ১০ দিন ঢাকা-বরিশাল নৌপথে বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যে চ্যানেল ধরে যাত্রীবাহি নৌযানগুলো চলাচল করে ওই চ্যানেলে জেলেরা জাল ফেলতে পারবেন না ওই ১০ দিন।