- বাংলাদেশ
- রোহিঙ্গাদের সহায়তা কমার আশঙ্কা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের
রোহিঙ্গাদের সহায়তা কমার আশঙ্কা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতিসহ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা রয়েছে। ইউক্রেন সংকটের কারণে ইউরোপজুড়ে উদ্বাস্তু সংকট তৈরি হবে। এতে করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য পাওয়া আন্তর্জাতিক আর্থিক সহায়তার পরিমাণ কমে যাওয়ারও শঙ্কা রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মুহম্মদ ফারুক খান জানিয়েছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব নিয়ে মন্ত্রণালয় এই প্রতিবেদন দিয়েছে। এটা মূলত কূটনৈতিক সমস্যা নয়, অর্থনৈতিক সমস্যা। অর্থ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্নিষ্টরা বিষয়টি দেখছেন।
সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের পর থেকে প্রতি বছরই রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার পরিমাণ কমছে। ২০২১ সালে ৯৪ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। তবে সেই লক্ষ্যমাত্রার ৬০ শতাংশ অর্জিত হয়। ২০২০ সালে রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিংসঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর ৮৭ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার তহবিলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। শেষ পর্যন্ত প্রতিশ্রুতি মেলে ৬০ কোটি মার্কিন ডলারের। এর আগের বছর ২০১৯ সালে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সংকট মোকাবিলায় ৯২ কোটি ডলারের চাহিদা ছিল। ওই বছরের ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংগ্রহ করা সম্ভব হয় ৬২ কোটি ডলার।
এর আগে ২০১৮ সালে ৯৫ কোটি ডলারের চাহিদার বিপরীতে সাড়ে ৬৫ কোটি ডলার পাওয়া গিয়েছিল। সবচেয়ে বেশি এসেছিল ২০১৭ সালে, মোট চাহিদার ৭৩ শতাংশ। সর্বশেষ চলতি বছর ৮৮ কোটি মার্কিন ডলার তহবিলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বছর গত বছরের তুলনায় লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা বেশি অর্জিত হবে বলে প্রত্যাশা সংশ্নিষ্টদের।
সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে সহায়তা এভাবে কমতে থাকায় সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের নিজস্ব ব্যয় বেড়ে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছেছে।
সংসদীয় কমিটিতে দেওয়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই প্রতিবেদনে রাশিয়ার ঋণ ও কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশে নির্মিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে যুদ্ধের প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের রাশিয়ার ঋণচুক্তির অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক হয়ে আসে। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা ওই ঋণের অর্থ লেনদেনে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রেও এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে বলা হয়েছে, ডলারের বিপরীতে টাকার আরও দরপতন ঘটতে পারে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২সহ যেসব প্রকল্পের বিষয়ে রাশিয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত রয়েছে সেগুলো দীর্ঘসূত্রতার কবলে পড়তে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ায় ৬৫০ মিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। বেশকিছু ব্যাংককে বৈশ্বিক আন্তঃব্যাংক লেনদেন সংক্রান্ত সুইফট সিস্টেমে নিষিদ্ধ করার ফলে রাশিয়ায় গার্মেন্টস রপ্তানি হুমকির মধ্যে পড়তে পারে। ফলে যে সকল পোশাকের অর্ডার শিপমেন্টের জন্য প্রস্তুত রয়েছে তার অর্থ আদায় (পেমেন্ট রিকভারি) নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
এতে বলা হয়, রাশিয়ার বেশ কিছু ব্যাংককে বৈশ্বিক আন্তঃব্যাংক লেনদেনসংক্রান্ত সুইফট সিস্টেমে নিষিদ্ধ কোনো ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণের অর্থ পরিশোধ করলে তা হয়তো মাঝপথে আটকে যেতে পারে। এ অর্থ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নাও হতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে পণ্যবাহী জাহাজের ভাড়া ও বীমা মাসুল বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশের রপ্তানির পুরোটাই এফওবি ভিত্তিতে হওয়ার ফলে রপ্তানি খরচ বাড়বে। আর আমদানির বেশরভাগই সিঅ্যান্ডএফ (কস্ট অ্যান্ড ফ্রেইট) ভিত্তিতে হওয়ায় পণ্যবাহী জাহাজ ভাড়া আমদানিকারকদের খরচ বাড়াবে। এতে আমদানি ব্যয় বাড়বে। বাণিজ্য ঘাটতিও বাড়বে।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথমার্ধে বাণিজ্য ঘাটতি ৫৬১ কোটি ডলারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৬৮৭ কোটি ডলার। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের ওপর চাপ বেড়ে ডলারের বিপরীতে টাকার আরও দরপতন ঘটাতে পারে।
গত ৯ বছরের মধ্যে তেলের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠায় প্রতিদিন জ্বালানি তেল বাবদ সরকারকে ১৫ কোটি ডলার লোকসান দিতে হচ্ছে। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম আরও বাড়বে। এর প্রভাবে দেশের অভ্যন্তরে পরিবহনে ভাড়া বাড়বে। কৃষি উৎপাদনেও খরচ বাড়বে।
রাশিয়া থেকে পাইপলাইনে গ্যাস আমদানিকারী ইউরোপীয় দেশগুলো রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে কাতার, ওমান, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোর দিকে ঝুঁকতে পারে। এতে বাংলাদেশে এলএনজির তাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চলতি অর্থবছরে রাশিয়া থেকে চার লাখ টন গম আমদানি করা হয়েছে। আরও দেড় থেকে দুই লাখ টন আমদানির টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়াও বাংলাদেশে সূর্যমুখী ও তুলাবীজের বড় অংশ রাশিয়া থেকে আসে। বাংলাদেশ দুটি দেশ থেকে খুব বেশি গম আমদানি না করলেও বৈশ্বিক বাজার পরিস্থিতির কারণে সরবরাহ প্রভাবিত হবে।
মন্তব্য করুন