- বাংলাদেশ
- দূষণে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা
দূষণে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা

ছবি - সংগৃহীত
চারদিকে বায়ুদূষণ ক্রমবর্ধমান। তার প্রভাব সদ্যোজাত থেকে প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেকের ওপরেই পড়ছে। বায়ুদূষণের ফলে সদ্যোজাত বা এক বছরের কম বয়সী শিশুদের নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা বা হার্টের সমস্যা হতে পারে। এমনকি দূষণের কারণে মায়ের গর্ভে থাকাকালীন হবু সন্তানের জন্মগত সমস্যা তৈরি হতে পারে। ১৫ বছরের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রে এই একই কারণে হাঁপানিসহ শ্বাসনালির অন্যান্য অসুখের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ১৫ থেকে ৬০ বছর বয়সের মধ্যে যাদের লাং ডিজিজ বা শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রেও বারবার নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। আর ৬৫ বছরের ওপরে যাদের বয়স, তাদের ক্ষেত্রে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজের প্রবণতা অনেকটাই বেশি, তাদের ক্ষেত্রে ইনফেকশন, নিউমোনিয়া, হাঁপানি বেড়ে যেতে পারে। হাঁপানি, সিওপিডি বা শ্বাসযন্ত্রের অন্য যে কোনো অসুখের সঙ্গেই বায়ুদূষণের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে।
বিকল যানবাহন বায়ুদূষণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ বিষয়ে কেবল ট্রাফিক বিভাগের নয়, আমার-আপনার সচেতনতাও প্রয়োজন। নিজের যানবাহন সার্ভিসিং করা, সারানো বা ধোঁয়ামুক্ত করলে নিজের পরিবারও রক্ষা পাবে। বাড়িতে ধূপ বা মশা তাড়ানোর কয়েল ব্যবহারও কিন্তু দূষণের জন্য দায়ী। ফলে এগুলোও যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আরও একটি জরুরি বিষয় হলো মাস্ক ব্যবহার করা। শরীর সচেতনতায় অনেকে সকাল সকাল মর্নিংওয়াকে বেরিয়ে পড়েন। খুব ভোরে বা সন্ধ্যায় হাঁটবেন না। এ সময়ে ধূলিকণা বা বাতাসের দূষণ সৃষ্টিকারী উপাদানগুলো অনেকটাই নিচের দিকে থাকে। ফলে খানিকটা রোদ উঠলে হাঁটতে বেরোন। খুব সকাল বা সন্ধ্যার দিকটা এড়িয়ে চলাই ভালো। ফ্রিজের ঠান্ডা খাবার এড়িয়ে চলুন। শীতে গলা-কান ঢেকে রাখা জরুরি, এতে ফুসফুস বা শ্বাসযন্ত্রের সমস্যার প্রকোপ অনেকটাই কমানো যেতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রেই দীর্ঘ সময় বাড়ির বাইরে কাটাতে হয়। ধুলোবালির মধ্যে কাজ করতে হয়। সেক্ষেত্রে অল্প ধুলো ঢুকলেই হাঁচি-কাশি শুরু হয়ে যায়। ডাস্ট অ্যালার্জি থেকে এমনটা হতে পারে। ডাক্তারের কাছে গিয়ে অ্যালার্জির পরিমাণ কতটা সে ব্যাপারে জেনে নেওয়া জরুরি।
হাঁপানি বা সিওপিডির আশঙ্কা আছে কিনা, সেটাও জেনে নেবেন। যারা আউটডোরে ধুলোবালির পরিবেশে কাজ করেন, তারা অবশ্যই মাস্ক পরবেন। হাঁপানির ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে শুকনো কাশি, নিঃশ্বাসে কষ্ট আর বুকের মধ্যে সাঁই সাঁই শব্দ হতে পারে। হাঁপানির একটি বৈশিষ্ট্য হলো এই অসুখ মাঝেমধ্যে বাড়ে, আবার মাঝেমধ্যে এতটাই নিয়ন্ত্রিত থাকে যে, রোগী ধরেই নেন তিনি সুস্থ হয়ে গিয়েছেন! সিওপিডি সাধারণত চল্লিশ বা পঞ্চাশ বছরের বেশি বয়সীদের হতে পারে। এ ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট অনেকটাই বেশি। কিছুটা সিঁড়ি দিয়ে উঠলে বেশি হাঁটাচলা করলে হাঁপিয়ে যান রোগী। কাশি থাকে, মাঝেমধ্যে কাশির সঙ্গে কফও থাকে। এ ছাড়া এই অসুখের ক্ষেত্রে হাত ফুলে যেতে পারে, চিত হয়ে শুলে শ্বাসকষ্ট হওয়া ইত্যাদিও দেখা দিতে পারে। অনেকের ধারণা আছে ইনহেলার একবার নিতে শুরু করলে তা বোধহয় সারাজীবন নিতে হবে! এটা ঠিক নয়। সিওপিডি রোগীদের মধ্যে যাদের শ্বাসনালি একটি ফিক্সড অবস্ট্রাকশনে পৌঁছে গিয়েছে, তাদের পক্ষে বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবে হাঁপানি যাদের নিয়ন্ত্রিত, তাদের কারও কারও ক্ষেত্রে ইনহেলারের ডোজ কমানো বা পুরোপুরি বন্ধ করাও সম্ভব।
আসলে পুরোটাই নির্ভর করে রোগী কতটা তৎপরতার সঙ্গে রোগ সারানোর চেষ্টা করছেন। অর্থাৎ নিয়ম মেনে ইনহেলার-ওষুধ খেলে ও সুস্থ জীবনযাপন করলে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ করা মোটেও কঠিন নয়। সর্বোপরি, সিগারেট বা যে কোনো তামাকজাত দ্রব্য থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে হবে। দূষণজনিত ফুসফুসের রোগ থেকে সুস্থ থাকতে ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফলমূল ও শাকসবজি খান। ভিটামিন সির কার্যকারিতা ২৪ ঘণ্টার বেশি থাকে না। তাই প্রতিদিন একটু হলেও লেবু, আমলকী, আনারস, জাম্বুরা, আমড়া, পেয়ারা, কাঁচা মরিচ, জলপাই, টমেটো, কমলালেবু ইত্যাদি গ্রহণ করুন। া
মন্তব্য করুন