চিকিৎসা সেবায় নার্সের গুরুত্ব অপরিসীম। করোনাকালে এ গুরুত্ব আরও বেড়েছে। রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিত করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন শত শত নার্স। অনেকে মৃত্যুবরণও করেছেন। অধিকাংশ নার্স মমতা নিয়ে রোগীর সেবায় যুক্ত রয়েছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নার্স নিয়োগে বড় ধরনের অগ্রগতি হলেও এখনও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

চিকিৎসা সেবায় নার্সদের গুরুত্ব তুলে ধরতে আজ বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস। এবার দিবসের প্রতিপাদ্য 'স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় শক্তিশালী নার্স নেতৃত্বের বিকল্প নেই : স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে নার্সিং খাতে বিনিয়োগ বাড়ান ও নার্সদের অধিকার সংরক্ষণ করুন।' জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, চিকিৎসকের পাশাপাশি নার্সদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের বঞ্চিত রেখে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যাবে না।

চিকিৎসকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, আধুনিক নার্সিংয়ের প্রবর্তক ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার জন্মদিন ১২ মে প্রতি বছর আন্তর্জাতিক নার্স দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। নার্সদের সার্বক্ষণিক রোগীর সেবায় নিয়োজিত থাকতে হয়। তাদের পরিশ্রমও অনেক বেশি। রোগীর সার্বিক দেখভাল করে তারাই চিকিৎসককে অবহিত করেন। এ প্রক্রিয়াতেই চিকিৎসা নিশ্চিত হয়। সুতরাং, তাদের অধিকার সংরক্ষণ না করলে স্বাস্থ্যসেবা এগোবে না।

বিশাল ঘাটতি: স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে রহিমা খাতুন, সাহাজাদী হারুন, জোহরা বানু, আক্তার বানুর মতো কয়েকজনের হাত ধরে বাংলাদেশে এই পেশার যাত্রা শুরু হয়। সেই সময় নার্সিং পেশাকে বিশেষ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নার্সিংয়ের জন্য পৃথক প্রশাসন কাঠামো তৈরি করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ছয় হাজার নার্স নিয়োগ দেন। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠনের পর ২০০৯ সালে ১৬ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর ধাপে ধাপে গত ১৩ বছরে ৩৩ হাজার ৫৭০ নিয়োগ পেয়েছেন। দেশে বর্তমানে মোট নার্স আছেন ৫৫ হাজারের ওপরে। আর চিকিৎসক আছেন ৪০ হাজারের মতো।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী একজন চিকিৎসকের বিপরীতে তিনজন নার্স থাকতে হবে। এ হিসাবে অন্তত ১ লাখ ২০ হাজার নার্স থাকার কথা। নার্সের ঘাটতির কারণে রোগীরা প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবার স্বাভাবিক গতি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই নার্সিং পেশার সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে। সেবা পরিদপ্তরকে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরে রূপান্তর করা হয়েছে। নার্সদের দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদায় উন্নীতকরণ এবং প্রথম শ্রেণির পদ সৃষ্টির পাশাপাশি উচ্চতর শিক্ষা নিশ্চিতে এমএসসি নার্সিং কোর্স চালুসহ সরকারিভাবে নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশে সরকারি ৬২টি ও বেসরকারি ২১৬টি নার্সিং প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সুতরাং নার্সিং পেশা এগিয়ে চলছে।

দিবসটি উপলক্ষে মহাখালী নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরে আজ বৃহস্পতিবার সকালে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সদের সংগঠনগুলো দিবসটি উপলক্ষে সেবামূলক কর্মসূচি পালন করবে।