বেশি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে ৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গ্রিনবার্ড মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের মালিক আলাউদ্দিন আহম্মেদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের একজন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

মামলায় বলা হয়েছে, প্রতারণার অর্থে তিনি ঢাকায় বাড়ি, ফ্ল্যাট ও গাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে জমি কিনেছেন। অর্থ হাতিয়ে তিনি বিদেশে পালানোর চেষ্টায় ছিলেন। এদিকে পাওনা টাকা ফেরত দেওয়ার দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো রাজধানীর রামপুরায় বিক্ষোভ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

রামপুরা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, মামলার বাদী রায়হান কবীর অভিযোগ করেছেন, তার পরিবারের সদস্যরা একযুগ ধরে প্রতিষ্ঠানটির সদস্য। এ পর্যন্ত তারা ১২ লাখের বেশি টাকা জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির পাঁচ হাজারের বেশি সদস্যের কাছ থেকে প্রতারণা করে ৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

ভুক্তভোগী এজাহারে উল্লেখ করেছেন, গত বছরের ৪ নভেম্বর তিনি খিলগাঁওয়ের তালতলা সিটি সুপার মার্কেটের দোতলায় গ্রিনবার্ডের কার্যালয়ে যান। সেখানকার কর্মীদের প্রলোভনমূলক কথার ফাঁদে পড়ে তিনি ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়ে সমিতির সদস্য হন। এরপর বিভিন্ন তারিখে ডিপিএসের কিস্তি হিসেবে আরও ৩৫ হাজার টাকা দেন। সেই হিসাবে তিনি লভ্যাংশসহ ৯৫ হাজার টাকা পাবেন। কিন্তু পাওনা টাকা চাইলে আলাউদ্দিন আহম্মেদ টালবাহানা শুরু করেন। বারবার সময় নেওয়ার পরও তিনি টাকা দেননি। পরে বাদী জানতে পারেন, প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া টাকা আলাউদ্দিন তার স্ত্রী, মা ও ভাইসহ আত্মীয়স্বজনের ব্যাংক হিসাবে জমা রেখেছেন। তিনি বড় ধরনের প্রতারক। বিভিন্নজনের কাছ থেকে মাসিক ডিপিএস ও ফিক্সড ডিপোজিটের নামে টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। বাদীর মা সুফিয়া বেগম, বড় বোন জেসমিন আক্তার ও মেজবোন নাজমুন নাহার অনেক আগে থেকেই সমিতির সদস্য। তাদের চারজনের মোট ১২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ও বিক্ষোভের মুখে মঙ্গলবার খিলগাঁও থেকে আলাউদ্দিন আহম্মেদকে আটক করে রামপুরা থানায় নেয় পুলিশ। তবে প্রথমদিকে কেউ মামলা করতে রাজি না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। পরে গতকাল এ ঘটনায় একটি মামলা হয়। সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে হাজির করে পুলিশ। শুনানি শেষে বিচারক তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তাকে প্রতারণার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে তার দাবি, অনুমোদন নিয়ে বৈধভাবে তিনি সমিতি পরিচালনা করছিলেন।

এদিকে পাওনা টাকা আদায়ের দাবিতে বৃস্পতিবারও রামপুরা থানার সামনে বিক্ষোভ করেছেন ভুক্তভোগীরা। এদিন সকাল ১০টার পর একে একে তারা থানার সামনে জড়ো হন। তাদের বেশিরভাগই শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ। অধিক মুনাফার আশায় অতিকষ্টের সঞ্চয় তারা সমিতিতে জমা দিয়েছিলেন। সেই সঞ্চয় হারিয়ে এখন তারা দিশেহারা।

এর আগে মঙ্গলবার রাতে তারা গ্রিনবার্ড কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন। এরপর বুধবার সকালে মেরাদিয়া এলাকায় রাস্তা অবরোধ করেন ভুক্তভোগীরা। পরে তারা রামপুরা থানার সামনে গিয়ে জড়ো হন।