রাজধানীর ডেমরা থানার সানারপাড় এলাকার সোহরাব হোসেন খান ২০২০ সালে হজে যেতে নিবন্ধন করেছিলেন। যদিও করোনার কারণে হজে যেতে পারেননি। তখন বেসরকারি প্যাকেজে হজের খরচ ছিল তিন লাখ ৫৮ হাজার টাকা। এ বছর বেসরকারি হজ প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে চার লাখ ৬৩ হাজার টাকা। তাকে তাই গুনতে হবে বাড়তি ১ লাখ ৫ হাজার টাকা।

শুধু সোহরাব হোসেন নন, তার মতো হাজার হাজার হজযাত্রী এবার আশঙ্কিত- নিবন্ধন করার পরও ব্যয় বৃদ্ধির কারণে তাদের হয়তো হজে যাওয়া হবে না।

সর্বশেষ অনুষ্ঠিত ২০১৯ সালের হজ প্যাকেজ বিশ্নেষণ করে দেখা যায়, মক্কা ও মদিনায় তখন বাড়ি ভাড়া ছিল ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৬২ টাকা। এবার বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৫০৫ টাকা। অতিরিক্ত সার্ভিস চার্জ আগে ছিল ২৮ হাজার ৩৫০ টাকা। এবার তা ৬১ হাজার ২৩৬ টাকা। এবার হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ২০১৯ সালে তা ছিল ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা।

গত ৭ বছরে হজের ব্যয় বাড়ছে প্রতিবারই। তবে ২০২০ সাল পর্যন্ত জনপ্রতি হজের ব্যয় বেড়েছে ৭০ হাজার ২৫৫ টাকা, যা দেড় গুণ। প্রতিবছর গড়ে বেড়েছে ১১ হাজার ৭০৯ টাকা। আর চলতি বছর এক ধাপেই বেড়েছে ১ লাখ টাকার বেশি। গতকাল বেসরকারি হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর থেকেই এজেন্সিগুলোর সঙ্গে দেনদরবার করছেন তারা।

সরকারি ব্যবস্থাপনায় এ বছর হজে যেতে প্রথম প্যাকেজে খরচ হবে ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। আর দ্বিতীয় প্যাকেজে খরচ হবে ৪ লাখ ৬২ হাজার ১৫০ টাকা। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের জন্য জনপ্রতি খরচ ধার্য করা হয়েছে ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৫৩০ টাকা।

হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম সমকালকে বলেন, এজেন্সিগুলো এখন হজযাত্রীদের কাছে অতিরিক্ত টাকা আদায় করবে। কারণ, সরকার হজ প্যাকেজের মূল্য বাড়িয়েছে।
হাব কেন সরকারের চেয়ে বাড়িয়ে প্যাকেজ ঘোষণা করল- জানতে চাইলে তিনি বলেন, খরচের দিক থেকে হজ এজেন্সিগুলোকে সরকারি ও বেসরকারি হজ প্যাকেজের মাঝামাঝিতে থাকতে হবে। এটাই স্বাভাবিক।

ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ অনুবিভাগ) মতিউল ইসলাম সমকালকে বলেন, করোনা মহামারির কারণে সৌদি আরবে এবার সব বাড়ি ও হোটেল ভাড়া দেওয়া হচ্ছে না। তাই বাড়ি ভাড়া আগের তুলনায় বেড়েছে। এ ছাড়া সৌদি আরবে সর্বক্ষেত্রে আগে ভ্যাট ছিল ৫ শতাংশ, এবার তা ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। আগে এক রিয়েল মিলত ২২ টাকা ৩০ পয়সায়। এবার রিয়েল মিলছে ২৪ টাকা ৩০ পয়সায়।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মতিউল ইসলাম বলেন, আগে সাত-আট মাস আগে বাড়ি ভাড়া করা হতো। এর পর মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং টিম সেগুলো যাচাই-বাছাই করত।

কিন্তু এবার অল্প সময়ে তা আর করা সম্ভব হবে না।

কভিড মহামারিতে দুই বছর বন্ধ রাখার পর এবারে বিদেশিদের হজের সুযোগ দিচ্ছে সৌদি সরকার। বাংলাদেশ থেকে সুযোগ পাচ্ছেন ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫৩ হাজার ৫৮৫ জন হজে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৮ জুলাই সৌদি আরবে হজ হবে। আর পরিকল্পনা অনুযায়ী ৩১ মে থেকে হজ ফ্লাইট শুরু করা সম্ভব নয় জানিয়ে ১০ জুন থেকে ফ্লাইট শুরু করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হাব।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন, কেবল সৌদি আরবের কারণেই এবার হজের খরচ বেড়েছে। দেশটি সারাবিশ্বের হজযাত্রীদের জন্য এবার খরচ অতিরিক্ত বাড়িয়েছে। তাই সরকারের আন্তরিকতা ও চেষ্টার পরও খরচ বেড়েছে।