- বাংলাদেশ
- 'খারাপ হলে দেশে আনতে দেন কেন'
'খারাপ হলে দেশে আনতে দেন কেন'
সয়াবিন তেল কম খান, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর: টিপু মুনশি, বাণিজ্যমন্ত্রী

ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিতিশীলতার মধ্যে সয়াবিন ও পাম অয়েল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে ব্যবহারে ভোক্তাদের সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেছেন, সয়াবিন ও পাম অয়েল যে ক্ষতিকর, তা চিকিৎসকসহ সবাইকে বলতে হবে।
গতকাল বুধবার দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটির দ্বিতীয় সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বাজারের অব্যবস্থাপনা দূর ও ব্যবসায়ীদের কারসাজি বন্ধের পরিবর্তে বাণিজ্যমন্ত্রীর ভোক্তাদের স্বাস্থ্য সচেতন করার পরামর্শে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ভোক্তারা। বাণিজ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরে শান্তিনগর বাজারের এক ক্রেতার কাছে জানতে চাওয়া হয়, বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, সয়াবিন ও পাম অয়েল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং কম খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁকে মন্ত্রীর এই পরামর্শমতো চলা উচিত বলে মনে করেন কিনা প্রশ্ন করা হয়। জবাবে নাজমুল হাসান নামের ওই ক্রেতা বলেন, সয়াবিন বা পাম অয়েল না থাকলে যে দেশের একদিনও চলে না, সেই দেশের মন্ত্রীর এমন কথা বেমানান। যদি এমন হতো যে দেশে রাইস ব্র্যান, সরিষা বা অন্যান্য তেল পর্যাপ্ত পাওয়া যায় এবং দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে, তাহলে এসব পরামর্শের মানে থাকত।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. আসাদুজ্জামান সমকালকে বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী এত দিন সয়াবিন তেল খাইছেন। এখন বলছেন, সয়াবিন তেল শরীরের জন্য খারাপ। তাহলে খারাপ তেলটা এত দিন আনতে দিয়েছেন কেন? এখন বলছেন, রাইস ব্র্যান অয়েল করব। রাইস ব্র্যান অয়েল ৫০-৬০ হাজার থেকে সাত লাখ টনে নিয়ে যাব। এটা কি সহজ কথা! উনি যদি বলতেন, ৫০-৬০ হাজার থেকে এক লাখ টনে নিয়ে যাব, তা-ও একটা কথা ছিল।
কয়েকজন বাজার-বিশ্নেষকও মনে করেন, স্বাস্থ্যে সয়াবিন ও পাম অয়েলের প্রভাব বিশ্নেষণের চেয়ে এ মুহূর্তে বাজারে সরবরাহ বাড়ানোতেই বাণিজ্যমন্ত্রীর সবচেয়ে মনোযোগ দেওয়া দরকার। ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, এ মুহূর্তে বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ বাড়ানোই সবচেয়ে জরুরি। তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটানো এবং মানুষের কষ্ট কমানো সবার আগে। অন্যদিকে, উৎপাদন বাড়ানো এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়োজন আছে। তবে খাদ্যাভ্যাস রাতারাতি পরিবর্তন হবে না।
গতকালের সভার পরে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার চায় না, ভয়ভীতি সৃষ্টি করে বাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে অভ্যন্তরীণ বাজারে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা মোকাবিলায় সরকার, ব্যবসায়ী ও ভোক্তা সবাইকে মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে, যে কারণে দেশের বাজারেও বাড়ছে। এখন ঠিক করা দরকার, সয়াবিন ও পাম অয়েলের ওপর নির্ভর করেই চলতে হবে, নাকি অভ্যন্তরীণভাবে ভোজ্যতেলের উৎপাদন বাড়ানো যেতে পারে। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে সরিষার চাষ বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুটো ধান চাষের অন্তর্বর্তীকালীন সরিষা চাষের জন্য প্রচুর জমি থাকে। ফলে সরিষা চাষ বাড়ানো সম্ভব। পাশাপাশি এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দেশে যে পরিমাণ ধান উৎপাদন হয়, তা থেকে সাত লাখ টন রাইস ব্র্যান তেল উৎপাদন সম্ভব। বর্তমানে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন রাইস ব্র্যান তেল উৎপাদন হচ্ছে। তবে দেখতে হবে, রাইস ব্র্যান তেলের দাম কত হতে পারে এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে পড়ে কিনা। পাশাপাশি রাইস ব্র্যান তেলের উপকারিতা সবাইকে জানাতে হবে। এটা সত্য যে, সয়াবিন ও পাম অয়েলে মানবদেহে ক্ষতিকর প্রভাব বেশি।
মন্তব্য করুন