
ভারি বৃষ্টির কারণে সারাদেশের মতো কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার মাদাইডাঙ্গা বিলের ধান পানির নিচে। হাজার হেক্টরেরও বেশি আয়তনের এ বিলে আবাদ করা বোরো ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। স্থানীয় একাধিক কৃষক জানান, মাদাইডাঙ্গা বিলসহ রৌমারী উপজেলার বেশিরভাগ জমিতে চাষ করা হয়েছে বোরো ধান। বৃষ্টির পানিতে বোরো ধান ডুবে গেছে। অনেকে বাধ্য হয়ে ডুবে যাওয়া ধান কেটে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। ক্ষেতে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে ডুবে থাকা ধানের শীষে চারা গজিয়ে ধান নষ্ট হয়ে গেছে।
বৃষ্টিপাতে তলিয়ে যাওয়া মাঠের ধান নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন কৃষক। ঝোড়ো বৃষ্টিতে ক্ষেতের ধানগাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। পানি থেকে ধান কেটে ঘরে তুলতে কৃষককে অতিরিক্ত মজুরি গুনতে হয়েছে। তলিয়ে যাওয়া ধান চড়া মজুরি দিয়ে যতটুকু কাটতে পেরেছেন, তাও আবার বৃষ্টির কারণে সময়মতো শুকাতে পারেননি। কয়েক মাসের পরিশ্রম আর বিনিয়োগের ফল ঘরে তোলার সময়ে এমন দুর্দশায় পড়তে হয়েছে কৃষককে। ধান গাছ শুকিয়ে যে খড় গোখাদ্য হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়; অতিবৃষ্টির কারণে তাও ব্যাহত হয়েছে। ফলে সামনে দেখা দেবে গোখাদ্য সংকট।
উৎপাদনে বিপুল টাকা খরচের পর মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা এখন তাঁদের ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না; বাম্পার ফলন হলে ফসলের দামে ধস নামার পুরোনো সমস্যার ভালো সমাধান এখনও আমরা পাইনি। এই নেতিবাচক প্রক্রিয়াগুলোর বিপরীতে কৃষি খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে কৃষি খাতে ভর্তুকি বাড়ানো, কৃষিঋণ পদ্ধতির সহজীকরণ, রাসায়নিক সারের কয়েক স্তরের সিন্ডিকেটের অবসান ঘটিয়ে বিএডিসিকে চালু করে তার মাধ্যমে সার, বীজ, ডিজেল, কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণ দেওয়া যেতে পারে। বহুজাতিক কোম্পানির হাতে বীজের বাজার তুলে না দিয়ে বীজ ব্যবস্থার সহজলভ্যতা তৈরি করতে হবে। এসব সংকট নিয়ে কৃষকের প্রতিনিধি হয়ে পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে কথা বলা লোকের বড় অভাব। দেশে কৃষক-রাজনীতি জোরালো থাকলে চিত্রটা হয়তো বদলে যেত। আমাদের তথাকথিত বুদ্ধিজীবী শ্রেণি মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। কে কথা বলবে? মধ্যবিত্ত সমাজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে ঘরে বসে সিনেমা দেখবে, কবিতা লিখবে, ইউটিউবে গান শুনবে- এই তো বাস্তবতা! চায়ের টেবিলে যখন দেশ-দুনিয়া নিয়ে আলোচনা হয়- ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পলিসি ঠিক; নাকি আমেরিকা বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন? সে সময় একজন আব্দুল বারেক ডুবন্ত ধানের জমির আলে দাঁড়িয়ে বুক চাপড়ে আহাজারি করে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলেন- 'আল্লারে, সারা বছর কী খামু'!
কৃষকের পক্ষের সংগঠন জোরালো থাকলে চিত্রটা হয়তো ভিন্ন হতো। তার পরও একজন কৃষক সংগঠক হিসেবে আশায় বুক বাঁধি- এটা নীল বিদ্রোহের দেশ; এটা সাঁওতাল বিদ্রোহের দেশ; এটা তেভাগা আন্দোলনের ইলা মিত্রের দেশ।
দেশের ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নে কৃষির জন্য বিগত বছরগুলোর বাজেট পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, কৃষি খাতে বাজেট ছিল হতাশাজনক। চলতি বাজেটেও কৃষি খাতে বরাদ্দ ১০ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা (৪ দশমিক ১২ শতাংশ)। এই বাজেটে কীভাবে দেশে খাদ্যে স্বনির্ভরতা সম্ভব?
কৃষি ও কৃষককে বাঁচাতে কাল বিলম্ব না করে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করা জরুরি। ক্ষতিপূরণ বা প্রণোদনা দেওয়ার ক্ষেত্রে 'নিয়মিত' যে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয় তা বন্ধ করতে হবে। বাজেটে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে কৃষি ব্যবস্থা বাঁচিয়ে রাখতে কার্যকর উদ্যোগ দেখতে চাই।
এখনও এ দেশের সাধারণ জনগণের মতো গ্রামীণ জীবনেও সবচেয়ে বেশি দুর্দশা, যাতনা ও হয়রানির কারণ হলো সরকারের সর্বস্তরে ক্রমবর্ধমান দুর্নীতি। ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ দুর্নীতির ব্যাপারে 'জিরো টলারেন্স' নীতি গ্রহণের অঙ্গীকার করলেও গত প্রায় সাড়ে তিন বছরে এ অঙ্গীকার পূরণে কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না। এটা গ্রামীণ জনগণের জীবনের আরেক ট্র্যাজেডি।
মহিউদ্দিন মহির :কৃষক সংগঠক
বৃষ্টিপাতে তলিয়ে যাওয়া মাঠের ধান নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন কৃষক। ঝোড়ো বৃষ্টিতে ক্ষেতের ধানগাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। পানি থেকে ধান কেটে ঘরে তুলতে কৃষককে অতিরিক্ত মজুরি গুনতে হয়েছে। তলিয়ে যাওয়া ধান চড়া মজুরি দিয়ে যতটুকু কাটতে পেরেছেন, তাও আবার বৃষ্টির কারণে সময়মতো শুকাতে পারেননি। কয়েক মাসের পরিশ্রম আর বিনিয়োগের ফল ঘরে তোলার সময়ে এমন দুর্দশায় পড়তে হয়েছে কৃষককে। ধান গাছ শুকিয়ে যে খড় গোখাদ্য হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়; অতিবৃষ্টির কারণে তাও ব্যাহত হয়েছে। ফলে সামনে দেখা দেবে গোখাদ্য সংকট।
উৎপাদনে বিপুল টাকা খরচের পর মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা এখন তাঁদের ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না; বাম্পার ফলন হলে ফসলের দামে ধস নামার পুরোনো সমস্যার ভালো সমাধান এখনও আমরা পাইনি। এই নেতিবাচক প্রক্রিয়াগুলোর বিপরীতে কৃষি খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে কৃষি খাতে ভর্তুকি বাড়ানো, কৃষিঋণ পদ্ধতির সহজীকরণ, রাসায়নিক সারের কয়েক স্তরের সিন্ডিকেটের অবসান ঘটিয়ে বিএডিসিকে চালু করে তার মাধ্যমে সার, বীজ, ডিজেল, কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণ দেওয়া যেতে পারে। বহুজাতিক কোম্পানির হাতে বীজের বাজার তুলে না দিয়ে বীজ ব্যবস্থার সহজলভ্যতা তৈরি করতে হবে। এসব সংকট নিয়ে কৃষকের প্রতিনিধি হয়ে পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে কথা বলা লোকের বড় অভাব। দেশে কৃষক-রাজনীতি জোরালো থাকলে চিত্রটা হয়তো বদলে যেত। আমাদের তথাকথিত বুদ্ধিজীবী শ্রেণি মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। কে কথা বলবে? মধ্যবিত্ত সমাজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে ঘরে বসে সিনেমা দেখবে, কবিতা লিখবে, ইউটিউবে গান শুনবে- এই তো বাস্তবতা! চায়ের টেবিলে যখন দেশ-দুনিয়া নিয়ে আলোচনা হয়- ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পলিসি ঠিক; নাকি আমেরিকা বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন? সে সময় একজন আব্দুল বারেক ডুবন্ত ধানের জমির আলে দাঁড়িয়ে বুক চাপড়ে আহাজারি করে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলেন- 'আল্লারে, সারা বছর কী খামু'!
কৃষকের পক্ষের সংগঠন জোরালো থাকলে চিত্রটা হয়তো ভিন্ন হতো। তার পরও একজন কৃষক সংগঠক হিসেবে আশায় বুক বাঁধি- এটা নীল বিদ্রোহের দেশ; এটা সাঁওতাল বিদ্রোহের দেশ; এটা তেভাগা আন্দোলনের ইলা মিত্রের দেশ।
দেশের ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নে কৃষির জন্য বিগত বছরগুলোর বাজেট পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, কৃষি খাতে বাজেট ছিল হতাশাজনক। চলতি বাজেটেও কৃষি খাতে বরাদ্দ ১০ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা (৪ দশমিক ১২ শতাংশ)। এই বাজেটে কীভাবে দেশে খাদ্যে স্বনির্ভরতা সম্ভব?
কৃষি ও কৃষককে বাঁচাতে কাল বিলম্ব না করে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করা জরুরি। ক্ষতিপূরণ বা প্রণোদনা দেওয়ার ক্ষেত্রে 'নিয়মিত' যে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয় তা বন্ধ করতে হবে। বাজেটে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে কৃষি ব্যবস্থা বাঁচিয়ে রাখতে কার্যকর উদ্যোগ দেখতে চাই।
এখনও এ দেশের সাধারণ জনগণের মতো গ্রামীণ জীবনেও সবচেয়ে বেশি দুর্দশা, যাতনা ও হয়রানির কারণ হলো সরকারের সর্বস্তরে ক্রমবর্ধমান দুর্নীতি। ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ দুর্নীতির ব্যাপারে 'জিরো টলারেন্স' নীতি গ্রহণের অঙ্গীকার করলেও গত প্রায় সাড়ে তিন বছরে এ অঙ্গীকার পূরণে কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না। এটা গ্রামীণ জনগণের জীবনের আরেক ট্র্যাজেডি।
মহিউদ্দিন মহির :কৃষক সংগঠক
মন্তব্য করুন