- বাংলাদেশ
- জোবাইদা রহমানকে পলাতক ঘোষণা করলেন আপিল বিভাগ
জোবাইদা রহমানকে পলাতক ঘোষণা করলেন আপিল বিভাগ

তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদাকে পলাতক ঘোষণা
সমকাল প্রতিবেদক
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে পলাতক ঘোষণা করেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
আপিল বিভাগের রায়ে আরও বলা হয়েছে, শত বছরের নজির ভেঙে হাইকোর্ট জোবাইদা রহমানের মামলা গ্রহণ করেছিলেন, যা অবৈধ। রায়ে ২০০৮ সাল থেকেই জোবাইদা রহমান পলাতক হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। ডা. জোবাইদা স্বামী তারেকের সঙ্গে আট বছর ধরে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন।
গত ১৩ এপ্রিল জোবাইদা রহমানের দুর্নীতি মামলা চলবে বলে রায় দেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ রায় দেন।
এদিন ঘোষিত রায়ে জোবাইদার মামলা চলার বিষয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত কোনো ব্যাখ্যা দেননি। তবে গতকাল বুধবার ১৬ পৃষ্ঠার লিখিত রায়ের পর্যবেক্ষণে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।
রায়ের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সমকালকে বলেন, জোবাইদা রহমানকে আপিল বিভাগ পলাতক ঘোষণা করেছেন। হাইকোর্ট তাঁকে যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছিলেন, সেই অংশটুকু বাতিল করা হয়েছে। এখন আইন অনুযায়ী জোবাইদা রহমানকে বিচারের মুখোমুখি করতে দুদক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আপিল বিভাগ বলেন, সংবিধান অনুযায়ী পলাতক আসামির মামলা শোনার এখতিয়ার নেই। অথচ হাইকোর্ট বেইনিভাবে পলাতক জোবাইদার মামলার শুনানি গ্রহণ করেছেন। সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যা দিয়ে আপিল বিভাগ বলেন, আইনের দৃষ্টিতে সবাইকে সমান বলা হলেও জোবাইদা রহমানকে আইনবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া হয়েছিল।
২০০৮ সালে জোবাইদা রহমান আত্মসমর্পণ না করলেও কীভাবে তাঁর মামলাটি হাইকোর্ট শুনেছিল, তা নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেন আপিল বিভাগ। রায়ে ২০১৭ সালে জোবাইদা রহমানকে আট সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ও বাতিল করা হয়েছে।
সম্পদের তথ্য গোপন ও মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা দায়ের করে দুদক। এতে তারেক রহমান, তাঁর স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে তারেক রহমানকে সহায়তা ও তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয় জোবাইদা ও তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে।
মামলায় অভিযোগে আরও বলা হয়, তারেক তাঁর স্ত্রীর নামে ৩৫ লাখ টাকার দুটি এফডিআর করে দেন। এভাবে জোবাইদা তাঁর স্বামীকে অবৈধ সম্পদ অর্জনে সহায়তা করেছেন। ২০০৮ সালের ৩১ মার্চ এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় দুদক। এরপর জোবাইদা রহমানের মামলা বাতিলের আবেদনে হাইকোর্ট ওই বছরই মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেন।
আপিল বিভাগ বলছেন, পলাতক জোবাইদার মামলা বাতিলের আবেদনের শুনানিই ছিল তাঁকে অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়ার শামিল।
নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান মাহবুব আলী খানের মেয়ে জোবাইদা ১৯৯৫ সালে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগ দিয়েছিলেন। এর দুই বছর আগে তারেকের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তারেক রহমান আদালত থেকে জামিন নিয়ে ২০০৮ সালে কারামুক্ত হন।
পরে তিনি স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে যান। ছুটি নিয়ে যাওয়ার পর আর কর্মস্থলে না ফেরায় সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী ২০১৪ সালে জোবাইদাকে বরখাস্ত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণলায়।
জোবাইদা রহমানের পক্ষে আদালতে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী; সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও রাগীব রউফ চৌধুরী। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ খুরশীদ আলম খান।
মন্তব্য করুন