খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে বিপণন পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ীদের সরকারি ১৮টি সংস্থার অধীনে কাজ করতে হয়। এতে বিভিন্ন জটিলতার সৃষ্টি হয়। তাই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে খাদ্য ব্যবসা পরিচালনায় নিবন্ধন বা লাইসেন্সের জন্য সবাইকে এক ছাতার নিচে আনা হবে। 

আজ মঙ্গলবার বিশ্ব নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে আয়োজিত ‘উন্নত অর্থনীতির জন্য নিরাপদ খাদ্য’ শীর্ষক সেমিনারের এ কথা জানান খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দীন। তিনি তার বক্তব্যে স্বাধীনতা পরবর্তী খাদ্য নিরাপত্তায় বঙ্গবন্ধুর ভূমিকার উপর আলোকপাত করেন। 

খাদ্য ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কৃষি, বাণিজ্য, শিল্প এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংস্থাগুলোর মধ্যে মতভেদ রয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্নভাবে খাদ্যের বিপণন, প্রক্রিয়াজাত বিষয়ে আলাদা তদারকি হয়। খাদ্য ব্যবসার সাথে জড়িত ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, তারা নানা সংস্থার অধীনে নিয়ন্ত্রিত হয়। এতে একে সময় একক ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। তাই খাদ্য ব্যবসায়ীদের নির্দিষ্ট একটি সংস্থার অধীনে নেওয়ার জন্য তাদের দাবি। 

এ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, খাদ্য ব্যবসায়ীদের কারা তদারকি করবে, সেই বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ সভায় উত্থাপন করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বলে দেবে এগুলো কোন সংস্থার অধীনে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। তবে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ খাদ্য নিরাপত্তায় সবচেয়ে বেশি কাজ করলেও তারা সনদ দিতে পারে না। এ ক্ষেত্রে অনেক সময় কাজ করতে তাদের সমস্যা হয়। 

নিজের বিবেককে ফাঁকি দিয়ে কখনো নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা যাবে না— এমন অভিমত ব্যক্ত করে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, খাদ্যের মান উন্নয়ন করুন। কেউ কেউ মুনাফার জন্য ইচ্ছে করে অনিরাপদ খাদ্য তৈরি করে। কিন্তু সরকার চায়, দেশের খাদ্য বিদেশের বাজার জয় করুক। এখন যেসব পণ্য বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে, সেটা প্রবাসী বাংলাদেশিরা খাচ্ছে। ধীরে ধীরে যেন সেগুলো অন্যান্য দেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

চালের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, চাল কতটুকু ছাঁটাই করা যাবে, কী মেশানো যাবে, আর কী মেশানো যাবেনা- সেই আইন করা হচ্ছে। তাতে পুষ্টিমান ঠিক থাকবে। খসড়া আইনটি মন্ত্রিসভায় পাস হয়ে এখন ভেটিংয়ে রয়েছে। আগামী অধিবেশনে সেটি পাস হতে পারে। তখন চাল ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। 

সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, চালের দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য জনসচেতনতাও দরকার। অনেকেই বস্তায় চাল কিনেন না। কিন্তু সেই চাল পোলিশ করে প্যাকেটে ভরে বিক্রি করলে ১০ টাকা বেশি দিয়ে কিনে ক্রেতারা। সেই সুযোগ নেন ব্যবসায়ীরাও। 

সভাপতির বক্তব্যে ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ অনেক কাজ করছে। সংস্থাটিকে আরও শক্তিশালী করা হবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে বাংলাদেশ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে পিছিয়ে পড়বে।

সেমিনারে প্যানেল আলোচক হিসেবে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে উৎপাদন পর্যায় হতে কাজ শুরু করতে হবে। এজন্য সবগুলো সংস্থাকে সমন্বয় করে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি।

স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইউম বলেন, অর্থনীতির সুফল পেতে হলে নিরাপদ খাদ্যের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বাংলাদেশি প্রতিনিধি রবার্ট ডি. সিম্পন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গিয়াসউদ্দীন মিয়া এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. আবু ইউসুফ ও খাদ্য ব্যবসার সাথে যুক্ত বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা।