রাজধানীর আশকোনায় ইঞ্জিনচালিত রিকশা চালায় ১২ বছর বয়সী সামিউল। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে। ২০২০ সালে মহামারির সময় নিঃস্ব হয়ে পড়ে তার পরিবার। সেই দুঃসময়ে স্কুলের বইয়ের বদলে রিকশার শক্ত হাতলে কোমল হাত দুটি রাখতে হয়েছে তাকে। তার আয় দিয়ে এখন সংসার চলছে।

ফার্মগেট থেকে মোহাম্মদপুরগামী লেগুনায় হেলপারের কাজ করছে আতিক (১৪)। পরিবারের খাদ্য সংস্থানের জন্য তিন বছর ধরে এ কাজ করছে সে। তাদের মতো আরও অসংখ্য শিশু নানা ধরনের শ্রমে নিযুক্ত। লেখাপড়ার স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিয়ে জীবনযুদ্ধে নেমেছে তারা।

এমনই এক পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ রোববার পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনায় শিশুশ্রম বন্ধে অগ্রগতি গত ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো থমকে গেছে, যা আগের নিম্নমুখী প্রবণতাকে উল্টে দিচ্ছে। প্রতিবেদনে শিশুশ্রমে ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের যুক্ত হওয়ার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধির বিষয়টি উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ২০২৫ সালের মধ্যে দেশ থেকে সব ধরনের শিশুশ্রম নির্মূল করার অঙ্গীকার করলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাসিমা আক্তার জলি সমকালকে বলেন, মহামারির কারণে শিশুদের শিক্ষা খাতের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের উপযুক্ত সময় এখনই। সরকার প্রণীত ২০১৮ সালের 'প্রস্ম্ফুটিত শিশু' প্রতিবেদনে শিশুদের জন্য বাজেট বরাদ্দ মোট সরকারি ব্যয়ের ১৫ শতাংশ থেকে ক্রমান্বয়ে ২০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। অথচ এবার প্রস্তাবিত বাজেটে তার প্রতিফলন নেই। শিশুশ্রম বন্ধে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বেসরকারি সংস্থা 'এডুকো বাংলাদেশ'। এ সংস্থার কর্মকর্তা আফজাল কবির খান জানান, তারা বস্তি অঞ্চলে তিনটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর মাধ্যমে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ৩০০ শ্রমজীবী শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের শেষের দিকে তাদের মধ্যে ১৪৬ শিশুকে সম্পূর্ণভাবে স্বাভাবিক জীবনে নিয়ে আসা হয়।