অবৈধ ভিওআইপির (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল) জন্য দেশের চার মোবাইল ফোন অপারেটরকে সাত কোটি ৬৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বিভিন্ন সময় উদ্ধার করা অবৈধ ভিওআইপিতে ব্যবহৃত সিমের বিপরীতে এই জরিমানা করা হয়েছে। টেলিটককে ৫ কোটি টাকা, রবিকে ২ কোটি টাকা, গ্রামীণফোনকে ৫০ লাখ টাকা এবং বাংলালিংককে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। 

বিটিআরসির সচিব মো. নূরুল হাফিজের সই করা এক চিঠিতে এই চার মোবাইল অপারেটরকে ৩০ জুনের মধ্যে জরিমানা পরিশোধের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।   

গত ৭ জুন অপারেটরদের কাছে পাঠানো ওই চিঠির একটি কপি সমকালের হাতে পৌঁছেছে।

২০১৮ ও ২০১৯ সালে দুই দফায় একাধিক অভিযানে অবৈধ কল টার্মিনেশনে জড়িত থাকায় ৫২ হাজার ৩৪৪টি সিম জব্দ করে বিটিআরসি। জব্দ করা সিমের মধ্যে টেলিটকের ৩২ হাজার ৮৪৫টি, রবির ১৬ হাজার ৩৯০টি, গ্রামীণফোনের ২ হাজার ৩৫৬টি এবং বাংলালিংকের ৭৫৩টি সিম ছিল। প্রথমে চার অপারটেরকে ২৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা জরিমানা করে বিটিআরসি। কোম্পানিগুলো প্রথমে জরিমানা মাফ এবং পরে শুনানির আবেদন করে। চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে গত ৬ এপ্রিল জিপি, রবি ও বাংলালিংক এবং ১০ এপ্রিল টেলিটকের শুনানি হয়।

সবচেয়ে বেশি সিম টেলিটকের: দুই দফা অভিযানে বিটিআরসি টেলিটকের মোট ৩২ হাজার ৮৪৫টি সিম জব্দ করে। এর মধ্যে প্রথম ধাপের ২৮ হাজার ৪৮৭টি সিমের বিপরীতে ১৩ কোটি ৩৮ লাখ তিন হাজার টাকা জরিমানা করে। আর দ্বিতীয় ধাপের ৪ হাজার ৩৫৮টি সিমের বিপরীতে চার কোটি ৩৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করে। দুই ধাপে মোট ১৭ কোটি ৭৩ লাখ ৮৩ হাজার টাকা জরিমানা করে বিটিআরসি।

সূত্র জানিয়েছে, জব্দ করা ৩২ হাজার ৮৪৫টি সিমের মধ্যে ২২ হাজার ৮০৭টি সিমের বন্ধ বা নিষ্ফ্ক্রিয় হওয়ার সংক্ষিপ্ত বিবরণ কমিশনে জমা দিলেও এ-সংক্রান্ত কোনো পূর্ণাঙ্গ তথ্য-প্রমাণ দাখিল করতে পারেনি। শুনানি শেষে টেলিটকের জরিমানা কমিয়ে ৫ কোটি করা হয়।
তথ্য দিতে ব্যর্থতা বেশি জিপির, জরিমানায় দ্বিতীয় রবি: সূত্র জানিয়েছে, গ্রামীণফোনের মোট ২ হাজার ৩৫৬টি সিম জব্দ করা হয়েছিল। এর মধ্যে প্রথম ধাপের ২ হাজার ৩৫০ সিমের বিপরীতে ৯৮ লাখ ৪০ হাজার ৬২৫ টাকা এবং দ্বিতীয় ধাপের ৬ সিমের বিপরীতে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করে কমিশন। দুই ধাপে জব্দ করা ২ হাজার ৩৫৬টি সিমের বিপরীতে মাত্র ৭৩৮টি সিমের পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিয়েছিল জিপি। শুনানি শেষে গ্রামীণফোনের জরিমানা কমিয়ে ৫০ লাখ টাকা করা হয়।
রবির শুনানিতে বলা হয়, দুই দফা অভিযানে কোম্পানিটির মোট ১৬ হাজার ৩৯০টি সিম জব্দ করা হয়। এর মধ্যে প্রথম ধাপের ১৬ হাজার ৬৯টির বিপরীতে ৭ কোটি ২৩ লাখ ৬ হাজার ৯৩৭ টাকা এবং দ্বিতীয় ধাপের ৩২১ সিমের বিপরীতে ৩২ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জব্দ করা ১৬ হাজার ৩৯০টি সিমের বিপরীতে ১২ হাজার ৪৪৮টি সিমের সিডিআর জমা দেয় রবি আজিয়াটা। শুনানি শেষে কোম্পানিটির জরিমানা সাত কোটি ৫৫ লাখ থেকে কমিয়ে দুই কোটি করে কমিশন।
বাংলালিংকের ৭৫৩টি সিম জব্দ করা হয়। এর মধ্যে প্রথম দফায় আটক করা ৭৩১টি সিমের বিপরীতে ৩১ লাখ ৪২ হাজার ৩১২ টাকা এবং দ্বিতীয় দফার ২২টি সিমের বিপরীতে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
শুনানিতে বলা হয়, বাংলালিংক জব্দ করা ৭৫৩টি সিমের মধ্যে মাত্র ২৯টি সিমের পূর্ণাঙ্গ তথ্য জমা দেয়। শুনানি শেষে কমিশন বাংলালিংকের জরিমানা ৩৩ লাখ ৬২ হাজার থেকে কমিয়ে ১২ লাখ টাকা ধার্য করে।