সপ্তাহের প্রথম কর্মদিন। নগরজুড়ে গাড়িজটের ধকল। গরমের অসহ্য বাড়াবাড়ি। কংক্রিটের নগরে মানুষের নাভিশ্বাস। ছায়াহীন রাজধানীতে আছে এক টুকরো বন। যেখানে কিছুক্ষণের জন্য মিলবে প্রশান্তি। সেই স্বস্তির খোঁজে যেতে হবে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের মাঠে। বিচিত্র ফুল-ফল, ঔষধি আর শোভাবর্ধনকারী গাছের মেলা বসেছে সেখানে।

বন অধিদপ্তরের আয়োজনে এ বৃক্ষমেলার শুরু গত ৫ জুন। পর্দা নামবে ৪ জুলাই। দূরদূরান্ত থেকে আসা বৃক্ষপ্রেমীর সমাগমও হচ্ছে রোজ। মেলায় অংশ নেওয়া ১১০ স্টলে বিক্রি হচ্ছে কয়েক হাজার গাছ। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থী বৃক্ষমেলায় ঘুরতে পারছেন বিনা খরচায়।

ধানমন্ডি থেকে মেলায় আসা মাহমুদুর রহমান জানান, ছাদে হরেক জাতের গাছ লাগান তিনি। মেলায় এসেছেন কিছু ফলের গাছ কিনতে। বন্ধুদের নিয়ে মোহাম্মদপুর থেকে মেলায় এসেছেন ইকবাল হাবিব। জানালেন, পড়ার টেবিলে আর নিজের ঘরের দেয়ালে রাখার জন্য গাছ কিনতে এসেছেন তিনি।

আম, জাম, কাঁঠাল, লেবু, আমড়া, আনারস, জাম্বুরা, করমচা, সফেদা, আঙুর ও কমলায় ভরে আছে গাছ। চোখ আটকে যাচ্ছে থরেথরে সাজানো ফুলের টবে। আছে আবহাওয়া ও পরিবেশ উপযোগী গাছও।

গুলশানের শ্যামলী আক্তার স্টল ঘুরে ঘুরে নানা জাতের অর্কিড, করমচা, কামরাঙা ও লেবুগাছ কিনেছেন। তিনি জানান, প্রতিবছর মেলায় তিনি বেশ কয়েকবার আসেন। তাঁর শোবার ঘর, বাসার ছাদ, বারান্দায় সবখানেই গাছ রাখেন। তবে গাছের পরিচর্যা সহজ হওয়ায় বিদেশি ফলের বদলে তিনি দেশি ফলের গাছই বেছে নেন।

মেলায় দেখা যায়, 'ফার্মিং লাইফ বিডি লিমিটেড' নামে একটি ব্যতিক্রমী স্টল। প্রতিষ্ঠানটি এগ্রো আর্কিটেকচার ও ল্যান্ডস্কেপ নিয়ে কাজ করে। ফার্মিং লাইফ বিডির কর্ণধার স্থপতি সাইফুর রহমান রাতুল বলেন, 'শহর আরও সবুজ করতে চাই। ভবনগুলো আরও পরিবেশবান্ধব করতে চাই। যাতে বাসস্থান আরামদায়ক হয়। শহরগুলো এখন খুব কাচকেন্দ্রিক। এখানে প্রশান্তি নেই। খোলা জায়গা নেই। মাঠের খুব অভাব। আমরা ভবন, ভবনের ছাদ, সড়কসহ শহরকে সবুজে সাজাতে কাজ করছি।'

প্রতিবছরের মতো এবারও এসিআই ফার্টিলাইজার তাদের নগর কৃষি কার্যক্রম 'এসিআই অরণ্য' নিয়ে জাতীয় বৃক্ষমেলাতে অংশ নিচ্ছে। এসিআই ফার্টিলাইজারের বিজনেস ডিরেক্টর বশির আহমেদ বলেন, নগর কৃষির পরিপূর্ণ সমাধান দেবে 'এসিআই অরণ্য'। মেলাতে আমাদের স্টল পরিদর্শন করলে নগর কৃষির আদ্যোপান্ত যে কেউ জানতে পারবেন। এসিআই ফার্টিলাইজারের ইনস্টিটিউশন ও আরবান গার্ডেনিংয়ের ব্যবস্থাপক মো. আরিফুর রহমান জানান, মেলায় বিক্রির পাশাপাশি এসিআই অরণ্য বাসাবাড়ি কিংবা অফিসে গাছ লাগানো ও পরিচর্যার সেবা দিচ্ছে।

মেলা ঘুরে দেখা গেছে, শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সী দর্শনার্থী স্টলে গাছ দেখছেন। বিক্রয়কর্মীর কাছ থেকে গাছের নাম, কত দিনে ফল বা ফুল আসবে জেনে নিচ্ছেন। দাম আর পছন্দ মিললেই গাছটি কিনে ফেলছেন। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ফলের গাছ। আম, পেয়ারা, কমলা, লেবু, চালতা, কতবেল, জাম্বুরা, মাল্টা, আমলকীর পাশাপাশি আলুবোখারা, সাতকরা, শরিফা, ডে-ফল, ক্যাকটাস, অ্যাভোকাডো ফল বিক্রি বেশি হচ্ছে।

কৃষিবিদ উপকরণ নার্সারির ব্যবস্থাপক হামিদুর ইসলাম পলাশ বলেন, মেলায় দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির গাছের চারা মিলছে। ২০ টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ লাখ টাকা দামের গাছও মিলছে। সবচেয়ে বেশি দামি বনসাই। এখানে চায়না প্রজাতির কোনো কোনো বনসাইয়ের দাম তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যেগুলোতে ফল ধরে আছে, সেগুলোর সর্বোচ্চ দর ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। ফুল ও ঔষধি গাছের চারা পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ দেড় থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে।