মৌসুমি ফল উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ দশে বাংলাদেশ: কৃষিমন্ত্রী

মৌসুমি ফল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক। 

তিনি বলেন, কাঁঠাল উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয়, আমে সপ্তম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম, পেঁপেতে ১৪তম স্থানে আছে বাংলাদেশ।

সোমবার সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে জাতীয় ফল মেলা-২০২২ উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে কৃষিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এসময় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সংস্থা প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। 

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বাংলাদেশ ফল উৎপাদনে বিশ্বে সফলতার উদাহরণ হয়ে উঠেছে। এ মুহূর্তে বিশ্বে ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির সর্বোচ্চ হারের রেকর্ড বাংলাদেশের, বছরে সাড়ে ১১ শতাংশ হারে ফল উৎপাদন বাড়ছে। মৌসুমি ফল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ।’ 

নিত্যনতুন ফল চাষের দিক থেকেও বাংলাদেশ সফলতা পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন,  ২০ বছর আগে আম আর কাঁঠাল ছিল এই দেশের প্রধানফল। এখন বাংলাদেশে ৭২ প্রজাতির ফলের চাষ হচ্ছে, যা আগে হতো ৫৬ প্রজাতির ফল চাষ। 

মতবিনিময়কালে আব্দুর রাজ্জাক জানান, ২০০৮-০৯ সালে দেশে ফলের উৎপাদন ছিল প্রায় ১ কোটি টন, আর বর্তমানে ফলের উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ১ কোটি ২২ লাখ টন। বিগত ১২ বছরে ফলের উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি ২২ শতাংশ। এর ফলে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু দানাজাতীয় শস্য গ্রহণের পরিমাণ কমেছে এবং মাথাপিছু ফল গ্রহণের পরিমাণ বেড়েছে। ২০০৬ সালে মাথাপিছু ফল গ্রহণের হার ছিল ৫৫ গ্রাম যা বেড়ে এখন হয়েছে ৮৫ গ্রাম। 

বাংলাদেশ এখন নিরাপদ ফল উৎপাদনে গুরুত্বারোপ করছে জানি কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে একজন পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক ফলের চাহিদা ২০০ গ্রামের বিপরীতে প্রাপ্যতা হলো ৮৫ গ্রাম। সেজন্য ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবেশসম্মত নিরাপদ ফল উৎপাদনেও গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। 

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের বিজ্ঞানীরা দেশে চাষোপযোগী ৩০টি বিভিন্ন প্রজাতির ফলের ৬৫টি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছেন।  দেশীয় ফলের সাথে স্ট্রবেরি, রাম্বুটান, ড্রাগনফল, এভোকাডোসহ নানা বিদেশি ফলের চাষে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। দেশের পাহাড়ি অঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের অনেক জায়গায় কাজুবাদাম ও কফি চাষের সম্প্রসারণ হচ্ছে।  

তিনি বলেন, ‘বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের সময়োপযোগী নীতি প্রণয়ন এবং তা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের ফলে কৃষি উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ হ্রাস, জনসংখ্যার আধিক্য, জমিতে লবণাক্ততা ইত্যাদি চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বাংলাদেশ আজ দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। পাশাপাশি ফল উৎপাদনেও এ সাফল্য অর্জিত হয়েছে।’

তবে এই সাফল্যের পাশাপাশি ফল পচন রোধে ফল ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ নিয়ে কৃষকদের আরও ধারণা থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দেশে প্রতি বছর সংগ্রহোত্তর পর্যায়ে সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে ফসলভেদে ক্ষতি বা নষ্টের পরিমাণ ২৫-৪১ শতাংশ। সঠিক সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই ক্ষতি কমানোর লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। এছাড়া দেশে প্রায় ৩ কোটি ২১ লাখ বসতবাড়ির অধিকাংশ বাড়িতে অবহেলা ও অযত্নে ফল গাছ জন্মে থাকে। এগুলোর বেশির ভাগই স্থানীয় অনুন্নত জাত এবং বীজ থেকে উৎপন্ন বিধায় এদের ফলন অত্যন্ত কম। এখানে উন্নত জাতের ফলের চাষ সম্প্রসারণে কাজ চলমান আছে। 

এসময় তিনি জানান, আগামী ১৬ জুন রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন চত্বরে জাতীয় ফল মেলা শুরু হবে। মেলা চলবে ১৮ তারিখ পর্যন্ত। এবারের প্রতিপাদ্য ‘বছরব্যাপী ফল চাষে, অর্থ পুষ্টি দুই-ই আসে’। মেলা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। 

সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আম, লিচু, কাঁঠালসহ বিভিন্ন দেশি ফলের প্রদর্শনীর মাধ্যমে মেলায় অংশগ্রহণ করবে।

মেলায় আগত দর্শনার্থীরা ফল চাষের বিভিন্ন প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে এবং রাসায়নিকমুক্ত বিভিন্ন জাতের ফল কিভাবে কিনবেন তা জানতে পারবেন। 

ফলের উৎপাদন রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য উত্তম কৃষি চর্চা (গ্যাপ) মেনে উৎপাদন, ফল সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, রপ্তানি উপযোগী জাতের ব্যবহার, আধুনিক প্যাকিং হাউজ নির্মাণ, অ্যাক্রিডিটেড ল্যাব স্থাপনসহ নানান কাজ চলমান আছে বলে ব্রিফিংয়ে জানান কৃষিমন্ত্রী। 

তিনি জানান, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭৯০ মেট্রিক টন আম ও ৮ টন লিচু রপ্তানি হয়েছে। অন্যদিকে দেশীয় ফল উৎপাদনে প্রত্যাশিত অগ্রগতিতেও বিদেশি ফলের আমদানি করতে হচ্ছে। দেশে মোট আমদানি ফলের প্রায় ৮৫ শতাংশই আপেল, কমলা, মাল্টা ও আঙুরের দখলে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি করতে হয়েছে ৮ লাখ ২৪১ মেট্রিক টন। তবে দেশেও এখন সীমিত পরিসরে কমলা ও মাল্টার চাষ হচ্ছে।