- বাংলাদেশ
- নিজেকে বহু রোগের চিকিৎসক দাবি করেন প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি
নিজেকে বহু রোগের চিকিৎসক দাবি করেন প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি

অভিযুক্ত মো. এনামুল হক
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি শেখ মো. এনামুল হককে রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। শনিবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আাজ রোববার কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
খন্দকার আল মঈন বলেন, র্যাব ফোর্সেসের জঙ্গি সেল বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলার বিভিন্ন মামলা পর্যালোচনা করে থাকে। এই পর্যালোচনায় ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন পলাতক জঙ্গিদের তথ্য উপাত্ত নিয়ে কাজ করছে র্যাব। ইতোপূর্বে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম পলাতক আসামি জঙ্গি ইকবাল ও রমনার বটমূলে বোমা হামলা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক জঙ্গি মুফতি শফিকুর রহমান এবং গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা ও রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জঙ্গি সংগঠন হুজি-বি’র প্রতিষ্ঠাতা আমির মুফতি আব্দুল হাইকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর র্যাব জঙ্গি হামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি আরও বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল উত্তরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২০০০ সালে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি জঙ্গি শেখ মো. এনামুল হক ওরফে শেখ মো. এনামুল করিমকে (৫৩) গ্রেপ্তার করে। তার বাড়ি গোপালগন্জের কোটালীপাড়ায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ায় ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রেখেছিলেন। তবে তিনি এতদিন আত্মগোপনে ছিলেন এবং নিজেকে একাধিক রোগের সফল চিকিৎসক হিসেবে দাবি করেন।
২০০০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ায় জনসভার অদূরে জঙ্গি শেখ মো. এনামুল করিমসহ তার অন্যান্য জঙ্গি সদস্যগণ প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখার ঘটনায় কোটালীপাড়া থানায় হত্যাচেষ্টা, হত্যার ষড়যন্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তিনটি মামলা রুজু হয়। তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। পরবর্তীতে দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০২১ সালের ২৩ মার্চ গ্রেপ্তার শেখ মো. এনামুল হক ওরফে শেখ মো. এনামুল করিমসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
র্যাব বলছে, জিজ্ঞাসাবাদে এনামুল হক জানান, ব্যবসায়ীক সূত্র ধরে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও তৎকালীন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হুজির আমির মুফতি আব্দুল হান্নানের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। তিনি ২০০০ সালে গোপালগঞ্জ শহরে বিসিক শিল্প নগরীতে মুফতি হান্নানের ছোট ভাই আনিসের সঙ্গে যৌথভাবে প্লট বরাদ্দ নিয়ে ‘সোনার বাংলা ক্যামিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ’ নামে টুথপেস্ট, টুথপাউডার, মোমবাতি ও সাবান তৈরির একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। মুফতি হান্নান ও অন্যান্য জঙ্গি নেতারা ২০০০ সালের জুলাই মাসে বেশ কয়েকবার তার ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করেন। গ্রেপ্তার এনামুল বিভিন্ন সময়ে মুফতি হান্নানসহ অন্যান্য জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক এবং সমাবেশে অংশগ্রহণ করতেন। তিনি মুফতি আব্দুল হান্নান এর পরিকল্পনা ও নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করার জন্য পরস্পর যোগসাজশে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের হত্যার উদ্দেশে কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর সভাস্থলে বোমা বিস্ফোরণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
এনামুল হক রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আত্মগোপনে চলে যান। পরবর্তীতে তিনি নিজের পরিচয় গোপন করে ক্বারী পরিচয় দিয়ে গাজীপুরের একটি মসজিদে ৮ বছরের অধিক সময় ইমামতি করেন। গাজীপুরে অবস্থানকালীন সময়ে তিনি ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন। সেখানে অবস্থানকালীন একটি হোমিওপ্যাথি কলেজে ২ বছর প্রভাষক হিসেবে দায়িত্বও পালন করেন বলে জানা যায়। একইভাবে তিনি নিজেকে গাজীপুর হোমিও কলেজ এর প্রাক্তন অধ্যক্ষ হিসেবে দাবি করতেন। পরবর্তীতে ২০১০ সালে তিনি ঢাকার উত্তরা ও বনশ্রীতে বাসা ভাড়া করে বসবাস করেন। তিনি ঢাকার উত্তরায় ২০১৫ সালে ‘আই কে হোমিও কলেজ উত্তরা’ নামে একটি ভুয়া হোমিও প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। পরে ২০২০ সালে ‘আই কে হোমিও কলেজ উত্তরা’ নামক প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে তিনি ক্যান্সার নিরাময় কেন্দ্র নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান খুলে ক্যান্সারের ভুয়া হারবাল চিকিৎসা প্রদান শুরু করেন। তার চিকিৎসায় ক্যান্সার সম্পূর্ণরূপে ভাল হয় বলে দাবি করেন। তিনি এইডস রোগ নিরাময়েও চিকিৎসা করান। তবে সবসময় নিজস্ব গণ্ডির মধ্যে চিকিৎসা প্রদান করতেন। এছাড়াও নিজেকে হেপাটাইটিস-ভাইরাস, প্যারালাইসিস, ডায়াবেটিকস, মেদ, বন্ধ্যাত্ব, টিউমার, হার্ট, কিডনি, যৌন, মানসিক রোগসহ বহুবিধ রোগের সফল চিকিৎসক হিসেবে দাবি করেন এই আসামি।
মন্তব্য করুন