করোনার পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে একদিকে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে, অন্যদিকে দেশে নেমে আসা বন্যার কারণে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সরকার যথেষ্ট প্রস্তুতি রেখেছে। 

রোববার সকালে রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) কনভেনশন হলে কৃষি তথ্য সার্ভিসের আয়োজনে ‘বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষি ও গণমাধ্যম’ শীর্ষক সেমিনারে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এসব কথা বলেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, এখন মাঠে বড় ধরনের কোনো ফসল নেই। এ বন্যায় যতটুকু ক্ষতি হবে, সেটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। সে জন্য ইতিমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতিও শুরু করা হয়েছে। ফলে এ বন্যায় বড় ধরনের ক্ষতি হবে না। বন্যায় আমন ধানের ক্ষতি হবে না। সারা দেশে খুব বেশি বীজতলা করা হয়নি এখনো, যা হয়েছে সেটাও নষ্ট হলে খুব সমস্যা হবে না। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত বীজ সংরক্ষিত আছে, পরবর্তী সময়ে সেগুলো চাষিদের দেওয়া হবে।

আব্দুর রাজ্জাক জানান, আউশের ক্ষতি একটু বেশি হতে পারে। এখন ১৩ লাখ হেক্টর আউশের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল, রোপণ করা হয়েছে ১১ লাখ হেক্টর। এর মধ্যে ২২ হাজার হেক্টর এখন পর্যন্ত প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া ৩ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টরে বিভিন্ন শাকসবজি আছে, সেগুলোর কিছু ক্ষতি হবে।

দুর্যোগ মোকাবিলায় ও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকেরা প্রস্তুতি রাখেন জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ দেশ। এই মৌসুমি ফসলগুলো প্রায় সময় ক্ষতির সম্মুখীন হয়। সেভাবে প্রস্তুতি কৃষকও রাখে। আমরাও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। সে ক্ষতি পূরণ করব। তারপরও যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, বন্যা ধেয়ে আসছে, আকস্মিক বড় ক্ষতি হবে কি না, সেটা জানি না।

এ সময় আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নানাবিধ সমস্যার কারণে এ দেশে বহুবার খাদ্যসংকটের নজির রয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকারের ক্ষমতাকালে কখনো খাদ্যের অভাব হয়নি। এমনকি খাদ্যের জন্য হাহাকারও করতে দেখা যায়নি কখনো।

বাংলাদেশে সারের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতি এ দেশেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তারপরও আমরা পরিকল্পিত কর্মসূচি নেওয়ার চেষ্টা করছি। কৃষি উৎপাদনে যেন কোনো ব্যাঘাত না ঘটে, সে জন্য এ বছর ২৮ হাজার কোটি টাকা সারে ভর্তুকি দিয়েছি। যেটা অন্যান্য দেশও পারেনি। বিশ্ববাজারে সারের অস্বাভাবিক দাম বাড়লেও বাংলাদেশে সারের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে।

সেমিনারে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর খাদ্য উৎপাদন প্রায় চার গুণ বেড়ে যাওয়ার তথ্য উল্লেখ করে বলেন, আয়তনের দিক থেকে আমরা বিশ্বের ৯২তম অবস্থানে আছি। কিন্তু বিশ্বের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উৎপাদনে আমরা বিশ্বের শীর্ষ তালিকায় আছি। এটা সম্ভব হয়েছে দেশের বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং উদ্ভাবনের ফলে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ও বাকৃবির সাবেক উপাচার্য এম এ সাত্তার মণ্ডল। তিনি বলেন, গ্রামে এখন একটা নতুন অভিজাত শ্রেণি গড়ে উঠছে। যাদের নিজের জমি আছে কি নেই সেটা মুখ্য নয়, কিন্তু তাদের আছে মেধা, দক্ষ কৃষি উদ্যোগ, পুঁজি ও বিদ্যা-বুদ্ধি। তারা তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসমৃদ্ধ এবং আধুনিক কৃষির প্রযুক্তি সম্পর্কে অবহিত। এ শ্রেণিটির প্রধান শক্তি হচ্ছে, আধুনিক কৃষি এবং ব্যবসায়িক কৃষি সম্পর্কে জ্ঞান। এদের প্রত্যেকেরই লাভজনক কৃষিপণ্যের বাজারের দিকে একটা ঝোঁক সৃষ্টি হয়ে গেছে।

কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ, ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ, দৈনিক জনকণ্ঠের চিফ রিপোর্টার কাওসার রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক সুরজিত সাহা রায়।